‘দেশদ্রোহী’ থেকে নোবেল বিজয়ী

মে ১৯৮৩ সাল। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) উপাচার্যকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ৫০ জন নারীসহ ৩৬০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তিহারের জেলে ১২ দিন কাটাতে হয়েছিলো অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
Abhijit-Banerjee-Photo-1.jpg
নয়াদিল্লির গ্রীন পার্কে হিন্দুস্থান টাইমসকে সাক্ষাতকার দেওয়ার সময় অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: হিন্দুস্থান টাইমস

মে, ১৯৮৩। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) উপাচার্যকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ৫০ জন নারীসহ ৩৬০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তিহারের জেলে ১২ দিন কাটাতে হয়েছিলো অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

উপাচার্যকে ঘেরাও ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার জন্য ভারতের সরকার শিক্ষার্থীদের ক্ষমা করে না দিলে অভিজিৎ ওইবছর যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইডি করতে যেতে পারতেন না।

রাষ্ট্রদ্রোহী স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে জেএনইউ’র আন্দোলনকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়ার প্রায় ৩৩ বছর পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

অভিজিৎ লিখেন, “ভারতীয় হিসেবে আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করলেও, কাশ্মীরিদের এই অধিকারকে সমর্থন করি না। কারণ, আমাদের সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখা দরকার। সীমান্তের ওপার থেকে আগত বিভীষিকার হাত থেকে কাশ্মীরের জনগণকে রক্ষা করা দরকার। কারণ আমাদের এখানে বৈধ প্রবেশাধিকারের বিষয়টি সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।”

“এসব যুক্তির যে অর্থই হোক না কেনো, যখন আমরা এগুলো তৈরি করে নেই, তখন বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের স্বীকার করে নেওয়া উচিত যে- আমরা একটি ভঙ্গুর অঞ্চলে রয়েছি। যদিও প্রতিবারই আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ি। তখন আমরা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলি এবং বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করি”, লিখেন তিনি।

অভিজিৎ লিখেন, “এ কারণেই আমাদের গণতন্ত্রের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং নাগরিক সমাজ সম্যকভাবে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ। যে গণতন্ত্র একটি সত্যিকারের আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং যা ধরে রাখতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়... শিক্ষার্থীরা প্রায়শই বলে যে, একদিন ঠিকই তারা তাদের মন-মানসিকতা বদলে ফেলবে। কিন্তু, যখন আমরা সেগুলো নিয়ে চিন্তা করি তখন আমাদের মনেই পরিবর্তন আসে। আমাদের চিন্তার প্রসারতা দরকার। দয়া করে দূরে থাকুন।”

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজিতের সহপাঠী জনকী নাঈরসহ আরও কয়েকজন দ্য টেলিগ্রাফকে নিশ্চিত করে বলেছেন যে, “৮০-র দশকের গোঁড়ার দিকে জেএনইউ-তে পড়ার সময়ে এসএফআই, এআইএসএফ, ফ্রি থিংকার্স কিংবা সমাজবাদী যুবজ্ঞান সভা, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই জড়িত ছিলেন না অভিজিৎ। তবে বিতর্ক এবং শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে একনিষ্ঠভাবে অংশ নিতেন তিনি।”

Avhijit-In-School-1.jpg
১৯৬৯ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (দ্বিতীয় সারিতে)। ছবি: দ্য টেলিগ্রাফ

তার মানে এই নয়, রাজনৈতিকভাবে উদাসীন ছিলেন অভিজিত্‍ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করা থেকে কখনও পিছপা হননি তিনি। মনে-প্রাণে উদার বামপন্থী ছিলেন। তার এই রাজনৈতিক মতবাদের প্রকাশ ঘটে ১৯৮৩ সালে। প্রতিষ্ঠান তাদের ভর্তির নিয়মে বদল আনতে চাইলে আরও অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে গর্জে উঠেছিলেন তিনিও। শিক্ষার্থীদের এই রুখে দাঁড়ানো মেনে নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

হিন্দুস্তান টাইমসে লেখা নিবন্ধে অভিজিৎ বলেন, “ভর্তি প্রক্রিয়া বদলানোর দাবিতে আন্দোলন হচ্ছিলো। ফি এতোটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো যে, তা গ্রাম থেকে পড়তে আসা ছেলে-মেয়েদের কাছে তা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ছাত্র সংসদ এর প্রতিবাদ করায় সংসদ সভাপতিকে বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তখনই ছাত্র আন্দোলন আরও তীব্র হয়।”

তার কথায়, “সেই আন্দোলন দমন করতেই পুলিশ ঢোকে ক্যাম্পাসে। আমাদের মারতে মারতে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্দেহ নেই এতে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদ ছিলো। তারা বলেছিলো- আমরা বস। আমাদের কথার উপর কথা বলা যাবে না।”

তিনি বলেন, “১৯৮৩ সালে আমাদের বিরুদ্ধে সরাসরি দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়নি ঠিকই। তবে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিলো।”

ওই নিবন্ধে নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ আরও লিখেন, “ছাত্র আন্দোলন বাম-ঘেঁষা ছিলো বলে ওই পুলিশি কার্যকলাপকে পিছন থেকে সমর্থন করেছিলো কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সরকার।”

গতকাল (১৪ অক্টোবর) নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকায় নিজের নাম দেখার পর যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া বক্তব্যে অভিজিৎ বলেন, “এই পুরষ্কারটি পেয়ে খুব ভালো লাগছে। পুরষ্কারটি আমাদের নয়, পুরো আন্দোলনের (দারিদ্র্য বিমোচন) জন্য। এটি এমন একটি আন্দোলন, যা আমরা শুরু থেকেই করে আসছি...।”

আরও পড়ুন:

উপযুক্ত ব্যক্তিকেই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে: অমর্ত্য সেন

আরও এক বাঙালির নোবেল জয়

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago