সমিতি চর্চা: শিল্পের মানোন্নয়ন না স্বাধীনতা হরণ
কয়েকদিন আগে ডেইলি স্টারের ‘জীবনের জয়গান’ (সেলিব্রেটিং লাইফ) অনুষ্ঠান শুরুর আগে কয়েকজন বন্ধু মিলে এই সময়ে আমাদের সিনেমা নিয়ে গল্প করছিলাম। এক সাংবাদিক বন্ধু তার অপর বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে আমার নামের আগে বিশেষণ যোগ করলেন মেধাবী নির্মাতা। একটু অস্বস্তি নিয়ে বললাম মেধাবী নয়, স্ট্রাগলিং ফিল্ম মেকার। আমি বা আমরা যারা ইন্ডাস্ট্রির বাইরে নিজেদের মতো গল্প বলা বা ভিন্নমত প্রকাশের চেষ্টা করি তাদের জন্য ‘যোদ্ধা চলচ্চিত্রনির্মাতা’ শব্দটি যুত্সই।
যুদ্ধের শুরুটা আসলে ১৯৯৭ এর ডিসেম্বরে। প্রথম সিনেমা নির্মাণ করলাম ‘রক্তের অক্ষরে লেখা’ শিরোনামে। বিটিভিতে প্রচারের পর কেউ মানতে রাজি নন যে এটি একটি সিনেমা। যারা দেখেছেন প্রায় সবাই বললেন এটি প্রামাণ্যচিত্র।
একই ঘটনার সম্মুখীন হলাম মহান মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করে এক ঘণ্টার একটি গল্প বলে। ‘যুদ্ধের শেষ নেই’ শিরোনামের এই ফিকশনটি ১৯৯৮ সালে বিটিভিতে প্রচারের পর কেউ মানতে রাজি নন, এটি চলচ্চিত্র। এক কথায় এটি একটি নাটক। আমি কাউকে ব্যাখ্যা করিনি প্রথমটা ডকুমেন্টারি আর পরের ফিকশনটা ড্রামা জনরার হলেও দুটোই চলচ্চিত্র।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কারাজীবনের সময়ের গল্পে ‘তৈরী হলো বন্দিশালায় ৯ মাস’- এ নিয়ে কেউ কথা বলেনি। ছবিটি যারা উপভোগ করলেন তাদের কেউই বুঝেননি যে এটা ডকুমেন্টারি না, হাইব্রিড জনরার ছবি। আসলে এগুলো প্রফেশনাল আর একাডেমিক কথাবার্তা। দর্শককে এগুলো বলার কোনো অর্থ নেই।
২০১৮ সালে এসেও যখন দেশের একটি চলচ্চিত্র উৎসবে সতীর্থ চলচ্চিত্র নির্মাতা ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’ (অনেকগুলো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়া) এর প্রদর্শনী পরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বে জিজ্ঞাসা করেন এটা ডকুমেন্টারি না ফিল্ম তখন আসলেই ভাবায়, হতাশায় নিমজ্জিত হই এই কারণে যে, এখনো আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাতারা ফিল্মের ক্যাটাগরি বলতে শুধু আর্ট ফিল্ম আর কমার্শিয়াল ফিল্মে আটকে রয়েছেন। যেমনটি আমাদের টেলিভিশন সংশ্লিষ্ট পেশাদার লোকজন আটকে রয়েছেন নাটকে। দুনিয়াজুড়ে নাটক বা প্লে মঞ্চেই পরিবেশিত হয়ে আসছে।
শুরুর দিকে টেলিভিশন মাধ্যমে চেষ্টা চালালেও কর্মক্ষেত্র হিসেবে অনেক স্বাধীন নির্মাতা টেলিভিশনকে বেছে নেননি। সাম্প্রতিক বাংলা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দাগ’র সফলতা এসেছে আমেরিকান টেলিভিশনের মাধ্যমে। ছবিটির ব্রিটিশ পরিবেশক শর্টস ইন্টারন্যাশনাল পশ্চিমা মূলধারার টেলিভিশনকে বেছে নিয়েছে এর যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপ প্রিমিয়ারের জন্য। টেলিভিশনে হোক আর সিনেমা হলে প্রদর্শন করা হোক তাতে কিছু যায় আসেনি এ ছবির ক্ষেত্রে। চলচ্চিত্রটি দেশকেও প্রতিনিধিত্ব করেছে সার্ক চলচ্চিত্র উৎসবে।
অনেক স্বাধীন নির্মাতা টেলিভিশনে হাত পাকালেও কাজের ক্ষেত্র হিসেবে টেলিভিশনকে বেছে নেননি কেনো সেটা একটি দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। আবার অনেকে নিয়েছেন। দু’দিকেই রয়েছেন বরেণ্য ব্যক্তিরা।
মাসুম রেজা, শহীদুজ্জামান সেলিম, সালাউদ্দিন লাভলু, ইরেশ জাকের। যথাক্রমে তারা নাট্যকার সংঘ, অভিনয় শিল্পী সমিতি, ডিরেক্টরস গিল্ড এবং প্রেবের সভাপতি। শিল্পের নানা শাখায় তারা সফল ব্যক্তিত্ব, তারকা। তাদের সংগঠনগুলোর সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতারাও শিল্পমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে সকলেই জানেন এবং বিশ্বাস করতে চান তারা শিল্পী।
বেশ কিছুদিন ধরে শিল্পীদের এই সংগঠনগুলো জোটবদ্ধ হয়ে টেলিভিশন ফিকশন আর অনুষ্ঠানের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে জেনে অনেকেই আশার আলো দেখছিলেন। মনে হচ্ছিলো, দেশের টিভি পর্দা থেকে মুখ ফেরানো দর্শককে ফিরিয়ে আনতে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিবেন তারা। এজেন্সির দখলদারি থেকে মুক্ত করবেন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে। যাতে করে নির্মাতারা যথাযথ সম্মান পান। একইসঙ্গে পরিচালক, শিল্পী, কলাকুশলীদের পেশাগত উৎকর্ষতার দিকে নজর দিবেন। কার্যক্রম পিকনিক আর নির্বাচনে সীমাবদ্ধ না রেখে নিজেদের তৈরি করা ফিকশনের মানোন্নয়নের জন্য সব প্রতিবন্ধকতা দূর করার প্রত্যাশা ছিলো সবার। প্রত্যাশার এমন চাপ মাথায় নিয়ে তারা একটি চার দফা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছেন। এখানেই বিপত্তি।
চার দফার দুই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে। তারা ২ এবং ৩ নম্বর সিদ্ধান্তকে স্বৈরাচারী, ঔপনিবেশিক, স্বেচ্ছাচারিতা বলে আখ্যা দিচ্ছেন। মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
আগে দেখে নেওয়া যাক সিদ্ধান্ত দুটি কী?
দুই নম্বরে বলা আছে, সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সদস্য ছাড়া কেউ নাটক/অনুষ্ঠান নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে তাকে অবশ্যই প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করতে হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে কেনো কাউকে অযৌক্তিক, সংবিধান প্রদত্ত অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন সিদ্ধান্ত মানতে হবে? কাউকে শিল্পচর্চা করতে হলে কোনো সংগঠনের সদস্য হতে হবে কেনো? প্রত্যেক নাগরিক তার মত প্রকাশ করতে পারেন নিজের ভাষায়। সভ্য সমাজে এতে কোন বাঁধা থাকা উচিত নয়। সংবিধান প্রদত্ত এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
একজন চিত্রশিল্পী তার আঁকা ছবিতে, সাংবাদিক তার লেখায়, কবি তার কবিতায় নিজের বক্তব্য যেমন তুলে ধরেন, তেমনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা তার বক্তব্য তুলে ধরবেন তার তৈরি করা চরিত্রে, নির্মিত দৃশ্যে। তার এই চলচ্চিত্র তিনি টিভি মাধ্যম হোক, সিনেমা হল, অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটে প্রদর্শন করতে পারেন বা যেখানে ইচ্ছা সেখানে দেখানো তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে যদি প্রচলিত আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ না হয় এর বিষয়বস্তু।
তার যেমন চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বাধীনতা রয়েছে, তেমনি তিনি কোনো সমিতির সদস্য হবেন, কী হবেন না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার খর্ব করার এখতিয়ার সংবিধান, দেশের প্রচলিত আইন কি এসব পেশাদারী সংগঠনকে দিয়েছে? যদি এই ক্ষমতা রাষ্ট্র তাদের দিয়ে না থাকে এবং একজন বা একাধিক নির্মাতা এই সিদ্ধান্ত অমান্য করেন তাহলে তারা কী করবেন সেই সিদ্ধান্তও আগাম নিয়েছেন। আর সেটি হচ্ছে তাদের ৩ নম্বর সিদ্ধান্ত।
এবার দেখা যাক এখানে কী করেছেন তারা। বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সদস্য নন এমন কারও সঙ্গে আন্তঃসংগঠনের সদস্য শিল্পী-কলাকুশলী, প্রযোজক-পরিচালক, নাট্যকার উক্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না।
এর মাধ্যমে তারা নিজেদের সংগঠনভুক্ত সদস্যদের মৌলিক অধিকার হরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অনেক সদস্যই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে।
এই শর্তটি কতটা অবিবেচনা প্রসূত, স্বৈরতান্ত্রিক বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন নাগরিকের স্বাভাবিক চলাফেরা ও জীবিকার জন্য কর্ম সম্পাদন, বা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করা তার সাংবিধানিক অধিকার। জরুরি অবস্থায় সংবিধান স্থগিত ছাড়া রাষ্ট্র যেখানে তা বাধাগ্রস্ত করে না সেখানে পেশাদারী সংগঠনগুলো কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিজ সদস্যদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে, বোধগম্য হচ্ছে না।
সংগঠনগুলোর সদস্যরা যেহেতু শিল্পী তারা এমন আইন মানবেন কী না তা ভেবে দেখার সময় এখনই। যে সিদ্ধান্তটি মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক শিল্পীসমাজ এটা প্রত্যাখ্যান করবে এমন প্রত্যাশা অনেকেই করবেন যারা বিশ্বাস করেন শিল্পীরা মেরুদণ্ডহীন নন।
আগাম ধারণা করা যেতে পারে, যদি শিল্পীরা এ সিদ্ধান্ত অমান্য করেন দিন শেষে সমিতির সদস্যরা নির্মাতাকেই আটকানোর চেষ্ঠা করবেন এটি চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে বয়কটের ঘোষণা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, নিজেদের সৃজনশীল কাজে মনোযোগ না দিয়ে তারা অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে সময় ও শক্তি ব্যয় করছেন কেনো? তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেদের কন্টেন্ট উন্নয়নের চেষ্টা করা কি যৌক্তিক নয়? এসব সমিতি, নেতৃত্ব ক্ষমতার অপচয় কোনোকিছুই শেষ পর্যন্ত থাকবে না। যা থাকবে তা হচ্ছে সৃষ্টি।
জাতির এই মেধাবী সন্তানদের কাছ থেকে সৃজনশীল কাজের প্রত্যাশা কি খুব বেশি চাওয়া?
এবার দেখা যাক তাদের চার নম্বর সিদ্ধান্তটি কী? এখানে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত কর্মঘণ্টা হবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অর্থাৎ শিল্পী-কলাকুশলীদের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে সেটে উপস্থিত নিশ্চিত করবেন। তবে চিত্রগ্রহণের কাজ শুরু হবে সকাল দশটায় শেষ হবে নির্ধারিত রাত দশটায়।
এই নির্দেশনা মিডিয়ায় কাজ করা মানুষদের পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি? এই যে চিত্রগ্রহণের কাজ শুরু হবে সকাল ১০টায়, আইন জারি হলো। যদি দৃশ্যের প্রয়োজনে নির্মাতার সূর্যোদয় ধারণ করতে হয় এ ক্ষেত্রে কী হবে? সব শিল্পী-কলাকুশলী যদি একযোগে বলে ওঠেন আমাদের ১০টার আগে কাজ করার নিয়ম নেই। নির্মাতার তখন উপায় কী? একবারও কি মনে হয়নি ফিকশন বা নন-ফিকশন কোনো কর্পোরেট কাজ নয়? এক্ষেত্রে কর্ম ঘণ্টা ঠিক রেখে শুরু যেকোনো সময় করতে দেওয়াটা যৌক্তিক ছিলো। শিল্পীরা মেধার চর্চা করলেও শুটিংয়ের কাজটি বেশ কষ্টের। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা একটানা কাজ করা স্বাস্থ্য সম্মত কী না, তা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে বলে অনেকেই একমত হবেন।
এতোগুলো খারাপ সিদ্ধান্তের চাপে একটি ভালো সিদ্ধান্ত আড়াল হয়ে গেছে। তা হচ্ছে প্রথমটা। এখানে বলা হয়েছে, আগামী ১ নভেম্বর ২০১৯ থেকে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। চলমান নাটক/অনুষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। চুক্তিপত্র নিকেতনস্থ সংগঠনের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করতে হবে।
এই সিদ্ধান্তটি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য হলেও পরিপূর্ণ নয়। লাভজনক সব খাত থেকে রাষ্ট্রের রাজস্ব পাওনা রয়েছে। চুক্তিপত্রের মাধ্যমে কাজ করার কথা বলা হলেও পেমেন্ট মেথড নিয়ে কোনো নির্দেশনা নেই বলে এটি অসম্পূর্ণ। অবশ্যই সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্মানীসহ সবধরনের লেনদেন চেকের মাধ্যমে করা উচিত। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উৎস কর প্রদান করা বাঞ্ছনীয়। প্রচলিত আইন মানা সব নাগরিকের জন্য কর্তব্য নয় কি?
যুগে-যুগে দেশে-দেশে শিল্পীরা মানুষের মৌলিক অধিকারের সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন নিজ-নিজ অবস্থান থেকে। একজন শিল্পী যখন তার শিল্পী সত্তার উন্মেষ ঘটান ক্ষমতাধর আর বুর্জোয়া সিস্টেম তার শত্রু হয়ে যায়। প্রকৃত শিল্পী তবুও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ উঁচুতেই রাখেন। আমাদের সমাজে দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। মৌলিক অধিকারের পক্ষে যাদের সোচ্চার হওয়ার কথা তারাই অন্যের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন, আমরা লজ্জায় মুখ লুকাই।
জসিম আহমেদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)
Comments