অভিনয় শিল্পীরা যখন নাট্যপরিচালক
অভিনয় শিল্পীরা অভিনয় করবেন সেটাই স্বাভাবিক। অভিনয় ছাড়াও এদেশের টিভি নাটকের শিল্পীরা কেউ কেউ নাটক পরিচালনা-প্রযোজনাও করছেন বেশ কিছুদিন ধরে। অর্থাৎ একের ভেতর তিনটি কাজ করছেন তারা। নাট্যপরিচালক হিসেবে কোনো কোনো অভিনয় শিল্পী সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। দর্শকরাও এসব অভিনয় শিল্পীদের পরিচালিত নাটকগুলো গ্রহণ করেছেন বেশ ভালো ভাবেই। তাদের নিয়েই এই ফিচার।
টিভি নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান নাটকের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন বছর দশেকের কিছু আগে। তার প্রোডাকশন হাউজের নাম পুস্পিতা ভিজ্যুয়াল। জনপ্রিয় মেগাসিরিয়াল- লাল নীল বেগুনি তার প্রযোজিত প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত হয়েছিল। এই নাটকটির পরিচালকও ছিলেন জাহিদ হাসান। এছাড়া প্রচুর নাটক তার হাউজ থেকে নির্মিত হয়েছে।
জাহিদ হাসান বলেন, অভিনয় তো রক্তে মিশে আছে। পরিচালনাও এখন নেশা হয়ে গেছে। সেজন্যই কাজগুলি করতে পারছি।
জনপ্রিয় টিভি অভিনেতা মাহফুজ আহমেদও প্রোডাকশন হাউজ গড়েছেন। তার হাউজ থেকে অনেকগুলো ধারাবাহিক নাটক ও এক ঘণ্টার নাটক নির্মিত হয়েছে। জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক- চৈতা পাগল নির্মিত হয়েছে তার নিজের প্রোডাকশন হাউজ থেকেই। তার হাউজের নাম নকশীকাঁথা। মাহফুজ আহমেদ নিজেই চৈতা পাগল নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন।
মাহফুজ আহমেদ বলেন, একসাথে তিনটি কাজ করা কঠিন। তারপরও আমি তো নাটকের বাইরে কখনো কিছু করিনি। এই মাধ্যমেই কিছু করার জন্য একসাথে তিনটি কাজ করেছি।
নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা এখনো অভিনয়ে সরব। তিনি নিজেও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, যেখান থেকে অনেকগুলো ধারাবাহিক নাটক নির্মিত হয়েছে। তার হাউজের নাম সাতকাহন। মেগাসিরিয়াল গহীনে নির্মিত হয়েছে এখান থেকেই। তবে, তার হাউজের বেশিরভাগ নাটক পরিচালনা করেছেন বদরুল আনাম সৌদ।
সুচিত্রা ভট্টাচার্যের আলোচিত উপন্যাস ‘কাছের মানুষ’ অবলম্বনে বড় ধারাবাহিক নির্মাণ করেছিলেন অভিনেত্রী আফসানা মিমি। সেটা তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকেই নির্মিত হয়েছে। আফসানা মিমিও অনেকদিন আগেই নাটক প্রযোজনা শুরু করেন। অবশ্য তিনি ধারাবাহিক নাটকই বেশি করেছেন নিজ হাউজ থেকে। সেসব নাটক পরিচালনাও করেছেন আফসানা মিমি নিজে।
শহীদুজ্জামান সেলিমও অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক প্রযোজনা করছেন অনেকদিন ধরে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ড্রিম ফ্যাক্টরী। ড্রিম ফ্যাক্টরী থেকে অনেকগুলো নাটক তিনি নিজেই পরিচালনা করেছেন।
তৌকীর আহমেদ অভিনয় ছাড়া নাটক প্রযোজনা করছেন অনেকদিন ধরে। তার হাউজ থেকে জোৎস্নাকাল নামের একটি বড় ধারাবাহিক নাটক নির্মিত হয়েছে। এছাড়া শংখ বাস নামের আলোচিত একটি ধারাবাহিক নাটক প্রযোজনা করেন তিনি। নাটকগুলোর পরিচালকও ছিলেন তৌকীর আহমেদ।
একসঙ্গে তিনটি কাজ করা বিষয়ে তৌকীর আহমেদ বলেন, সমন্বয় করে ও যত্ন নিয়ে করলে একসাথে তিনটি কাজ করা সম্ভব।
অভিনেতা আজিজুল হাকিম ও তার স্ত্রী জিনাত হাকিম মিলে অনেক আগেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। একটা সময়ে নিয়মিত ধারাবাহিক নাটক প্রযোজনা করেছেন দুজনে। তাদের প্রযোজিত নাটকগুলোর কয়েকটি আজিজুল হাকিম পরিচালনা করেছেন। এখন অবশ্য এক ঘণ্টার নাটকই বেশি করছেন নিজ হাউজ থেকে।
অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাসও বেশ কিছু নাটক প্রযোজনা করেছেন। সেসব নাটক অরুণা বিশ্বাস পরিচালনাও করেছেন।
মীর সাব্বিরও নাটক প্রযোজনা করছেন কয়েক বছর ধরে। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ফুলঝুড়ি। এক ঘণ্টার নাটক দিয়ে প্রযোজনা শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর মকবুল নামের একটি ধারাবাহিক নাটক প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন। চলতি সময়ে প্রচারিত নোয়াশাল নামের একটি বড় ধারাবাহিক নাটক প্রযোজনা করছেন মীর সাব্বির যার পরিচালকও তিনি।
অভিনয়, পরিচালনা ও প্রযোজনা অর্থাৎ একের ভেতর তিন, এই পরিচয়ে আছেন হৃদি হক। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম টিকিট। এই হাউজ থেকে নির্মিত হয়েছে বড় ধারাবাহিক নাটক আমাদের আনন্দবাড়ি। যা এনটিভিতে প্রচারিত হয়েছে।
অভিনয় শিল্পী শাহরিয়ার নাজিম জয় নাটক ও চলচ্চিত্র দুটিই পরিচালনা করছেন। শাহেদ শরীফ খান বেশ কয়েকটি নাটক পরিচালনা করেছেন। শামীম জামান অভিনয় করছেন এবং নাটকও পরিচালনা করছেন। শামীম জামানের পরিচালনায় বাংলাভিশনে প্রচারিত হচ্ছে মেগা ধারাবাহিক।
অভিনয় শিল্পীদের পরিচালনায় একটার পর একটা নাটক চলছেই।
Comments