সাদেক হোসেন খোকা আর নেই

Sadeque Hossain Khoka
মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। ছবি: সংগৃহীত

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা আর নেই। তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আজ (৪ নভেম্বর) নিউইয়র্ক সময় রাত ২টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৫০ মিনিট) চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

খোকার বড় ছেলে ইশরাক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার খোকার মরদেহ দেশে আনতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।

খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে তারিখ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

তিনি মাওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন এবং দলের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি হন।

খোকা প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৯১ সালে ঢাকা-৭ আসন থেকে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর, ২০০২ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। এই পদে তিনি প্রায় নয় বছর ছিলেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে সাদেক হোসেন খোকা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।

২০১৪ সালের মে মাসে ক্যানসার চিকিৎসার উদ্দেশে ভ্রমণ ভিসায় স্ত্রীসহ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।

স্লোয়ান ক্যাটারিং হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুর পর প্রতি সপ্তাহে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তিনি চিকিৎসকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ছিলেন।

২০১৭ সালের শেষদিকে তার এবং স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। দীর্ঘদিনেও তাদেরকে পাসপোর্ট না দেওয়ায় এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে খোকা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন।

ছয় মাস আগে ইসমত হোসেন সশরীরে কনস্যুলেটে গিয়ে পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা প্রথম সচিব শামীম হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। তার কাছ থেকে পাসপোর্টের বিষয়ে কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় তিনি হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।

দীর্ঘদিন চিকিৎসার মধ্যে থাকার পর গত কয়েক মাস ধরে সাদেক হোসেন খোকা দেশে ফেরার জন্য বার বার আকুতি প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি বলতেন, ঢাকায় যাওয়ার পর জেলে যেতে হলে যাবো, চিকিৎসার জন্য আর আসতে না দিলেও সমস্যা নাই। দেশে গিয়েই মরবো।

সাদেক হোসেন খোকার ফুসফুসে ক্যানসার মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় তার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। কিডনি ক্যানসারের চিকিৎসা নেওয়ার সময় হঠাৎ করেই ফুসফুস আক্রান্ত হলে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। তিনি প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

গত সাড়ে পাঁচ বছর যাবৎ ছিলেন নিউইয়র্ক সিটির ইস্ট এলমহার্স্ট এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।

উল্লেখ্য, চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসার চেষ্টা করলে ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের বাধায় প্রথম দফা তিনি ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের আদেশে তার বিদেশ গমনে বাধা দূর হলে প্রায় তিন সপ্তাহ পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

ওই তিন সপ্তাহ দেরি হওয়ার কারণেও ক্যানসার তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। তারপরও নিউইয়র্কে চিকিৎসা শুরুর পর গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে তার ক্যানসার নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিলো।

আরও পড়ুন:

খোকা একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধা: নাসির উদ্দিন ইউসুফ

‘ট্রাভেল পারমিট’ পেতে পারে খোকার পরিবার

খোকাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে বিএনপি

খোকা ও তার স্ত্রীকে পাসপোর্ট প্রদানে ‘কিছুই করার নেই’ দূতাবাসের

খোকার শারীরিক অবস্থা উন্নতির আশা ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

6h ago