শিক্ষার্থী-শিক্ষক নিপীড়ন ও উপাচার্যের ‘আনন্দের দিন’
প্রেম, পূর্ণতা, পুলক, উল্লাস, আহ্লাদ শব্দগুলোর একক বা সম্মিলিত অনুভূতির আভিধানিক অর্থ ‘আনন্দ’। ৫ নভেম্বর দিনটি ছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের ‘আনন্দের দিন’। শুধু আনন্দের নয় ‘অত্যন্ত আনন্দের দিন’। নিজেই বলেছেন ‘আজকের দিনটি আমার জন্যে অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন’।
‘অত্যন্ত আনন্দ দিন’র দুই রকম প্রেক্ষাপট-
ক. দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে- এই দাবিতে আগের দিন থেকে বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের একাংশ। অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে তাকে বের করে আনার পর তিনি বলেছেন ‘দিনটি অত্যন্ত আনন্দের’।
খ. বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রাখা উপাচার্যকে বের করে আনার আগে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের উপর প্রথমে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। উপাচার্যের পক্ষের শিক্ষক হিসেবে পরিচিত এমন কয়েকজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে হয়েছে হামলা। গণমাধ্যমের সংবাদে সেসব শিক্ষকের নামও এসেছে। স্থিরচিত্র এবং ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উপর আক্রমণ করছেন। ছাত্ররা রক্তাক্ত হয়েছেন। ছাত্রীদের পেটে লাথি দিয়ে আহত করা হয়েছে। লাথি খাওয়া শিক্ষক সাঈদ ফেরদৌস নিজেই বলেছেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাকে মাটিতে ফেলে লাথি মারছিলো। পাশ থেকে উপাচার্যের পক্ষের শিক্ষক হাততালি দিয়ে তাদের উৎসাহিত করছিলো। নিপীড়িত ছাত্রীদের পড়ে থাকা, উদ্ধার ও হাসপাতালে নেওয়ার ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত, ছাত্রদের আহত ও ছাত্রীদের পেটে লাথি দিয়ে ক্যাম্পাসের রাস্তায় ফেলে রেখে, ছাত্রলীগ উপাচার্যকে পাহারা দিয়ে তার বাসভবন থেকে বের করে এনেছেন। উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বাসভবন থেকে বের হয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘আজকের দিনটি আমার জন্যে অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন’। উপাচার্যপন্থি শিক্ষক-কর্মচারীরা হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তখনও পেটে লাথি খাওয়া মেয়েটি ব্যথায় চিৎকার করছিলেন! ছাত্রলীগের লাথি খাওয়া শিক্ষক রাস্তায় পরে কোকাচ্ছিলেন!
১. এমন একটি ‘আনন্দ দিন’ উপহার দেওয়ার জন্যে উপাচার্য ‘বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের প্রতি। ‘ছাত্রলীগ অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে কাজটি করেছে’- বলেছেন উপাচার্য।
শিক্ষক লাঞ্ছনা, ছাত্রছাত্রীদের পিটিয়ে আহত করা- উপাচার্যের ভাষায় ‘দায়িত্ব নিয়ে করা একটি কাজ’।
ছাত্রলীগের এই ‘কাজটি’কে উপাচার্য হামলা মনে করেন না। তিনি পরিষ্কার করে সংবাদকর্মীদের বলেছেন ‘আপনারা হামলা বলতে পারেন, আমি বলেছি গণঅভ্যুত্থান’।
২. যেকোনো বিষয়েরই তো ভিন্ন ভিন্ন দিক থাকতে পারে। ব্যাঙকে ঢিল ছোড়া দুষ্টু বাচ্চাদের কাছে একটি খেলা, আর ব্যাঙের একটি গোটা জীবন। নিপীড়িত-লাঞ্ছিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবন আর ব্যাঙের জীবনের সঙ্গে মিল কতোটা বা পার্থক্যই বা কী, জানি না। কয়েকজন ছাত্রীকে পেটে লাথি দিয়ে ফেলে রাখা, মাটিতে ফেলে শিক্ষক-ছাত্রদের পেটানো-লাথি মারা ‘গণঅভ্যুত্থানে’ পদ বা ক্ষমতাই শেষ কথা। নীতি-নৈতিকতা, সম্মান- এগুলো শুধুই মূল্যহীন কয়েকটি শব্দ।
৩. ১৯৯৭-৯৮ বা তার পরের সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম করে দখলের চেষ্টা করতো। সংবাদকর্মীর অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সেই সময় শিবিরকে প্রতিহত করার সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দিয়েছেন বাম মনোভাবাপন্ন শিক্ষকরা। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী সমর্থক শিক্ষকরা শিবির প্রতিহতের সেই সংগ্রামে শরীক ছিলেন। তবে নেতৃত্ব ছিলো বাম ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষকদের হাতেই। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নবিরোধী প্রতিটি আন্দোলন হয়েছে মূলত বাম সংগঠনগুলোর সক্রিয় নেতৃত্বে। অভিযোগের প্রায় পুরোটা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ধর্ষক সেঞ্চুরিয়ান ছাত্রলীগ নেতা মানিকের কথা তো কারো পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’- এখনকার এই আন্দোলনও চলছে বাম ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষকদের নেতৃত্বেই। আর ছাত্রলীগ তাদের উপর আক্রমণ করে বলছে ‘তারা শিবির’! ‘শিবির’ বলে যে কাউকে পেটানো যায়। পিটিয়ে মেরে না ফেললে, তা খুব একটা আলোড়ন তৈরি করে না। নিজের ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়ায় শহীদউল্লাহ হলের শিক্ষার্থী এহসান রফিককে পিটিয়ে নাক-মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। সেই ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো ‘নির্দেশ’ কোথাও থেকে আসেনি। ভিপি নুরকে বারবার পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে প্রমাণ ছিলো। কিন্তু, ব্যবস্থা নেওয়ার ‘নির্দেশ’ কেউ দেয়নি। কারণ, এহসান বা নুর মারা যাননি আবরারের মতো।
পিটিয়ে মেরে না ফেলা পর্যন্ত তা বড় ঘটনা হয় না! সাধারণ জনমানুষের তো নয়ই, শুধু পিটিয়ে রক্তাক্ত করলে উপাচার্য বা শিক্ষকদের বড় অংশটির বিবেকও নাড়া দেয় না। উপাচার্য ও সেসব শিক্ষকরা ছাত্রলীগের ‘দায়িত্ব নিয়ে’ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পেটানোকে স্বাগত জানান, জাস্টিফাই করেন। টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে গিয়ে জাবি উপাচার্য ছাত্রলীগের এই কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন।
৪. যে ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয়েছে, সেই জুয়েল রানা উপাচার্যের কাছ থেকে ‘২ কোটি টাকা’র ভাগ পাওয়া অভিযুক্তদের অন্যতম। ছাত্রলীগের নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন উপাচার্য জুয়েল রানাকে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে। উপাচার্য যে ছাত্রলীগ নেতাকে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দিয়েছেন, তিনি প্রকাশ্যে সুনির্দিষ্ট করে তথ্য প্রকাশ করেছেন।
যে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম চাঁদা দাবির অভিযোগ করেছেন, যে ছাত্রলীগ নেতাদের তিনি এক কোটি টাকা ভাগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে, যে ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করেছেন, উপাচার্য এক কোটি টাকা তাদের ভাগ করে দিয়েছেন, সেই ছাত্রলীগের কাছে উপাচার্য ‘বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ’!
৫. উপাচার্য বারবার বলছেন, তার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে অপদস্থ-অসম্মান করা হচ্ছে। কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। প্রমাণ কী করে হবে বা কোনটি প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত হবে?
জাবি উপাচার্য ২ কোটি টাকা জাবি ছাত্রলীগ নেতাদের ভাগ করে দিয়েছেন। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার নির্মাণ কাজে ছাত্রলীগ যাতে বাধা না দেয়, সেই শর্তে টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগের তথ্য প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম। জাবিতে সক্রিয় ছাত্রলীগের তিন গ্রুপের কোন নেতাকে কতো টাকা দিয়েছে গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে সেই তথ্যও। অভিযোগ এসেছে এভাবে যে, জাবি উপাচার্য তার স্বামী ও ছেলের উপস্থিতিতে তার বাসভবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে মিটিং করে টাকা দিয়েছেন। গণমাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশের পর জাবি ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দামের মুখ দিয়ে স্বীকারোক্তি এসেছে যে জুয়েলকে (সভাপতি) ৫০ লাখ, চঞ্চলকে ২৫ লাখ এবং তাকে ২৫ লাখ টাকা উপাচার্য হলে পৌঁছে দিয়েছেন। জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ গণমাধ্যমের সামনে বলেন, “আমাদের বলা হয়েছে, তোমরা (তাজ ও সাদ্দাম) ২৫ লাখ নিবা, শাখার সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল ২৫ লাখ নিবে আর সভাপতি মো. জুয়েল রানা ৫০ লাখ নিবে। আমরা আমাদেরটা পেয়েছি। তবে অপ্রকাশ্যে এর বেশি কে কতো পেয়েছে, তা আমরা জানি না। কেউ এর বেশিও পেতে পারে।” (যুগান্তর, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯)
সুনির্দিষ্ট করে প্রমাণিত না হলেও, তথ্যের ধরণের উপর ভিত্তি করে জনমানুষের উপলব্ধিতে সত্য-অসত্য বিষয়ে ধারণা তৈরি হয়। এই অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই তা তৈরি হয়েছে। কী তৈরি হয়েছে, সেই প্রশ্নে না যাই।
জাবি উপাচার্য বলছেন, এসব তথ্য মিথ্যা। হ্যাঁ, এই তথ্যগুলো যে মিথ্যে তা প্রমাণ হওয়া দরকার ছিলো। যদি অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হতো। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ব্যক্তি এবং অভিযোগও তার বিরুদ্ধেই। প্রশাসন ও শিক্ষকরা যেহেতু দৃশ্যমানভাবে পক্ষ-বিপক্ষ, ফলে উপাচার্য তদন্তের উদ্যোগ নিলেও সত্য প্রকাশিত হতো কী না, সন্দেহমুক্ত হওয়া যায় না। কিন্তু, তারপরও সবচেয়ে বিস্ময়কর এই যে, উপাচার্যের পক্ষ থেকে কোনো তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কেনো নেওয়া হয়নি? উপাচার্য বলেছেন, তিনি নিজের বিরুদ্ধে নিজে তদন্ত কমিটি করতে পারেন না। আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বলছেন, টাকা ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি এতোটাই প্রকাশ্য ও সত্য যে যাদেরকে দিয়েই তদন্ত করা হোক না কেনো, প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসতোই। তাছাড়া, যেহেতু ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা আন্দোলন করছিলেন, ফলে তাদের প্রতিনিধি তদন্ত কমিটিতে রাখতে হতো। একারণেই উপাচার্য তদন্ত কমিটি গঠন করেননি।
উপাচার্য নিজের বিরুদ্ধে নিজে তদন্ত করবেন, বিষয়টি আসলে তেমন নয়। তদন্তের বিষয় কারো বিরুদ্ধে নয়, তদন্তের বিষয় অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তা জানা। জানার চেষ্টা না করে ‘অভিযোগ মিথ্যা’ বলে দিলে, মানুষ উল্টোটা বিশ্বাস করে নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখাশোনা করার জন্যে ‘ইউজিসি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান যে আছে, জাবির ক্ষেত্রে তা বোঝার কোনো সুযোগ নেই।
৬. উপাচার্য বলেছেন মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে রেখেছেন। সেই ২৫ জনকে তিনি ছাত্রলীগ দিয়ে ‘খেদিয়ে’ বাসা থেকে বের হয়েছেন। মাত্র ২৫ জনের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হলো? ৩০০ পুলিশ দরকার হলো, ২৫ জনের জন্যে? ছবি-ভিডিওচিত্রে যে শত বা হাজার প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের দেখা গেলো, তারা কারা?
৭. একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলো। ছাত্রলীগ নেতা শোভন-রাব্বানী চাঁদা দাবি করায় পদ থেকে অপসারিত হলেন। দেরিতে হলেও আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বললেন। অভিযোগ লিখিত দিতে বললেন। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বললেন, এভাবে আন্দোলন করা ঠিক হচ্ছে না। আন্দোলনকারীদের উচিত অভিযোগ লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো। শিক্ষামন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী লিখিতভাবে অভিযোগ চাইতেই পারেন। আন্দোলনকারীরা লিখিতভাবে তা জানাতেও পারেন। হয়ত জানাবেন, তেমনই আভাস পাওয়া গেছে। আবার সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন, জাবি পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী নিজে নজর রাখছেন। সঠিক সময়ে তিনি কার্যকর ব্যবস্থা নিবেন।
প্রধানমন্ত্রী নিজে যেখানে নজর রাখছেন, সেখানে শিক্ষামন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী লিখিত অভিযোগ কেনো চাইছেন তা পরিষ্কার নয়। ‘এভাবে আন্দোলন করা ঠিক হচ্ছে না’- বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়েও এই প্রশ্ন কী করা যায় না যে, আন্দোলন এই পর্যায়ে এলো কেনো? শুরুতে আন্দোলন ছিলো মূলত অপরিকল্পিতভাবে প্রকৃতি ধ্বংস করে হল-ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ কর্তৃক টেন্ডার ছিনতাইয়ের লিখিত অভিযোগেরও তদন্ত করা হয়নি।
শুরুতেই তদন্ত করে সত্য বের করে ব্যবস্থা নিলে নিশ্চিত করেই বলা যায় আন্দোলন এতোদিন ধরে চলতো না, এই পর্যায়ে আসতো না। তা করা হলো না কেনো? এখনও কেনো করা হচ্ছে না? ছাত্রলীগ দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পেটানোর উদ্যোগ কেনো নেওয়া হলো?
আরও একটি তথ্য জানা থাকা দরকার, গত কয়েক মাস ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের নানা সংস্থার সক্রিয় অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেন। এসব সূত্র থেকে কী শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথ্য পান না? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ঘটছে, উপাচার্যের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, তা জানেন না বা জানার সুযোগ নেই? সময় ক্ষেপণ কোনো ভালো লক্ষণ নয়। এই কৌশল বুঝতে কারও কষ্ট হয় না।
মূল সমস্যা পাশ কাটিয়ে কোনো কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগেরও একটি মানদণ্ড থাকা দরকার।
রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ এই প্রথম নয়। কারও অজানা নয় যে, এদেশে সব সময় উপাচার্যরা রাজনৈতিক বিবেচনাতেই নিয়োগ পেয়েছেন। সেই রাজনৈতিক বিবেচনার সঙ্গে ‘যোগ্যতা-দক্ষতা’ও বিবেচনা করা হতো। উপাচার্যদের বিরুদ্ধে আর্থিক অসততার অভিযোগ, কল্পনার বিষয়ও ছিলো না। আর এখন উপাচার্যদের বিরুদ্ধে আর্থিক অসততা ও অনৈতিকতার অভিযোগ, এক নম্বর স্থান দখল করে নিয়েছে। একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সামনে এসেছে। সেসব কথোপকথনের টেলিফোন সংলাপ ফাঁস হয়েছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাচার্য-ডিন মিলে ৩৪ জন ছাত্রলীগ নেতাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেছেন। অভিযোগের তদন্ত হয়নি। আরেক উপাচার্য ৩৬৫ দিনের মধ্যে ২০ দিনও ক্যাম্পাসে না গিয়ে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।
বছরের পর বছর ধরে এসব অভিযোগ নিয়ে উপাচার্যরা মূলত অরাজকতা তৈরি করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এর একটি জীবন্ত উদাহরণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
দেখার বা ব্যবস্থা নেওয়ার যেনো কেউ কোথাও নেই।
Comments