বাবরি মসজিদ মামলার রায়

বিতর্কিত জমিতে মন্দির, মসজিদের জন্য বিকল্প জায়গা

ভারতের বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।
babri_masjid.jpg
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উগ্রবাদী হিন্দু কর সেবকরা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।

আজ (৯ নভেম্বর) দুপুরে ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এই মামলার রায় পড়া শুরু করেন প্রধান বিচারপতি।

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মন্দির নির্মাণের জন্য তুলে দিতে হবে সরকারি ট্রাস্টের হাতে এবং শহরের ‘উপযুক্ত’ ৫ একর জমি মুসলিমদের দিতে হবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

এই রায় দানের মধ্য দিয়েই শেষ হলো দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি। সর্বসম্মত রায় দান করলো সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ।

বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি এসএ বোবদে, বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি আব্দুল নাজির।

এর আগে, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ও নির্মোহী আখড়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছেন, বিতর্কিত মূল জমি পাবে ‘রাম জন্মভূমি ন্যাস’। এই জমিতে মন্দির তৈরিতে কোনো বাধা নেই। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। ওই ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই থাকবে বিতর্কিত মূল জমি। কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে মন্দির তৈরি হবে, তারও পরিকল্পনা করবে ট্রাস্ট।

অপরদিকে, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বিকল্প ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। নির্দেশে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ কোনো জায়গায় ওই জমির বন্দোবস্ত করতে হবে সরকারকে।

রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, বাবরের সেনাপতি মির বাকিই যে মসজিদ তৈরি করেছিলেন, তার প্রমাণ রয়েছে। তবে সেটা কোন সালে, তা নির্ধারিত নয় এবং তারিখ গুরুত্বপূর্ণও নয়। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সমীক্ষা বিভাগের (এএসআই) খননে অন্য কাঠামোর প্রমাণ মিলেছে। তবে সেই কাঠামো থেকে এমনও দাবি করা যায় না যে সেগুলি মন্দিরেরই কাঠামো। আবার সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের দাবি খারিজ করে শীর্ষ আদালত বলেছে, শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনো অধিকার দাবি করা যায় না। জমির মালিকানা আইনি ভিত্তিতেই ঠিক করা উচিত।

ভারতের রাজনীতিতে সব থেকে স্পর্শকাতর এ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গোটা উত্তরপ্রদেশকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে চার হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ৭৮টি রেল স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

আগামী সোমবার পর্যন্ত উত্তর প্রদেশের সমস্ত স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।

লক্ষ্ণৌ এবং অযোধ্যায় দুটি হেলিকপ্টার মোতায়েন রাখা হয়েছে। গতকাল রাত থেকেই গোটা উত্তর প্রদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ একাধিক টুইটবার্তায় লিখেছেন, “অযোধ্যা মামলার রায়ে কারও জয় বা পরাজয় হবে না।”

তিনি আরও লিখেন, “সম্প্রীতি রক্ষা করা দেশবাসীর সবার আগে কর্তব্য।”

এছাড়াও, কোনোরকম গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রায়কে ঘিরে তিনি শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন বলে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে, টানা ৪০ দিন শুনানির পর গত ১৬ অক্টোবর রায় স্থগিত করে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।

উল্লেখ্য, অযোধ্যায় ২ দশমিক ৭৭ একর বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে আসছিলো হিন্দু ও মুসলিম দুপক্ষই। ১৯৮০ সাল থেকে এই মামলাটি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেয়েছে। ওই জায়গায় রামমন্দির তৈরি করতে চায় হিন্দু সংগঠন। মুসলিমদের পক্ষে বলা হয়েছে, সেই জায়গায় মন্দির থাকার কোনো প্রমাণ নেই। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয় দক্ষিণপন্থী আন্দোলনকারীরা। তাদের বিশ্বাস, পুরানো মন্দির ভেঙে দিয়ে সেই জায়গায় মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে, যে জায়গাটি ছিলো ভগবান রামচন্দ্রের জন্মভূমি।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিতর্কিত জমিটিকে তিনভাগে ভাগ করে দেয় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রাম লালার মধ্যে। তবে এই রায়ে অসন্তুষ্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় তিনপক্ষই।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago