নাঈম একা ৮১, বাকি ১০ জনে মিলে ৬৩

লক্ষ্য বড় হলেও জয়ের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন তরুণ মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ২০ বছর বয়সী এ তরুণ বুক চিতিয়ে লড়াই করে খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। কিছু সময় সঙ্গে পেয়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুনকে। তার গড়েছেন দারুণ এক জুটি। কিন্তু তার লড়াই বৃথা গেল বাকী ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। আশা যাওয়ার মিছিলে ব্যস্ত ছিলেন তারা। ফলে ভারতের মাঠ থেকে সিরিজ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ মিস করে বাংলাদেশ। ৩০ রানের বড় ব্যবধানেই হারে টাইগাররা। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় স্বাগতিকরা।
ছবি: এএফপি

লক্ষ্য বড় হলেও জয়ের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছিলেন তরুণ মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ২০ বছর বয়সী এ তরুণ বুক চিতিয়ে লড়াই করে খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। কিছু সময় সঙ্গে পেয়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুনকে। তার সঙ্গে গড়েছেন দারুণ এক জুটি। কিন্তু তার লড়াই বৃথা গেল বাকী ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়।  তিনি একা করেছেন ৮১ রান, দলের বাকি দশ মিলেই করেছেন আর ৬৩ রান। এরমধ্যে দুই অঙ্কের রান পেয়েছেন আর কেবল মোহাম্মদ মিঠুন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ৩০ রানের বড় হারে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও খুইয়েছেন মাহমুদউল্লাহরা।

অবশ্য বাংলাদেশকে হারানোর মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল ভারতের। ব্যাটিং স্বর্গে বরাবরই হিমশিম খায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে ম্যাচটা যদি হয় টি-টোয়েন্টি। সে সুবিধা নিতে নাগপুরের চিরাচরিত মন্থর উইকেটও হয়ে উঠেছিল এদিন প্রাণবন্ত। ম্যাচ শুরুর আগে পিচ রিপোর্ট দেখে সুনীল গাভাস্কার ও মুরালি কার্তিক জানিয়ে গেছেন ব্যাটিং স্বর্গই এই উইকেট। অর্থাৎ ততোটা মন্থর থাকবে না। হয়ওনি। বেশ সাবলীল ভাবেই শট খেলেছেন ব্যাটসম্যানরা। যেমনটা ছিল রাজকোটে। ফলে চার বল বাকী থাকতেই ম্যাচ জিতে নেয় তারা।

তবে ভারতের তৈরি মঞ্চের পানি ঢেলে দিতে বসেছিলেন তরুণ নাঈম। একাই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের জয়ে। দারুণ সব শট খেলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন জয়ের দিকে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল দুই উইকেটে ১১০ রান। শেষ সাত ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল মাত্র ৬৫ রান। কিন্তু নাঈমকে থামানোর পরই বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। এরপর আর লড়াইটুকুও করতে পারেনি বাংলাদেশ। সিভাম দুবের দারুণ ইয়র্কারে ফিরে যান নাঈম। ৪৮ বলে করা ৮১ রানের ইনিংসে ১০টি চার ও ২টি ছকা মেরেছেন এ তরুণ।

বড় লক্ষ্য তাড়ায় এদিন দরকার ছিল পাওয়ার প্লের সঠিক ব্যবহার। প্রথম ওভারে দুটি বাউন্ডারি মেরে ইঙ্গিতটা এমনই দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় ওভারেই জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় টাইগাররা। ছয় ওভারে রান আসে মাত্র ৩২। তাও ষষ্ঠ ওভারে টানা তিনটি বাউন্ডারি মেরে কিছুটা সন্তোষজনক সংগ্রহ এনে দেন তরুণ নাঈম। শুধু তাই নয়, উইকেটে দারুণ সেট হয়ে মিঠুনের সঙ্গে গড়েন ৯৮ রানের জুটি। তাতে ইনিংস মেরামত তো হয়েছেই, পাওয়া যায় জয়ের ভিত্তিও। কিন্তু প্রথম বলেই ইনসাইড এজ হয়ে ফিরে যান মুশফিক। মজার ব্যাপার একটি উইকেট পড়ার পর ঠিক পরের বলেই আউট হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা মোট চারবার। শেষবার তো হয় হ্যাটট্রিকই। তাতেই ব্যাকফুটে চলে যায় টাইগাররা।

শিশিরের কারণে এদিন সুবিধা করে উঠতে পারেননি ভারতীয় স্পিনাররা। নিজের শেষ ওভারে অবশ্য দারুণ বোলিং করেছেন যুজবেন্দ্র চেহেল। তবে এদিন সব আলো কেড়ে নিয়েছেন পেসার দিপক চাহার। একাই পেয়েছেন ৬টি উইকেট। শেষ দিকে করেছেন হ্যাটট্রিকও। অনিয়মিত বোলার দুবেরও মিলেছেন ৩টি উইকেট। 

এর আগে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ছিল যাচ্ছেতাই। কথায় বলে ক্যাচ মিস মানে ম্যাচ মিস। আর সেখানে মিস তো হয়েছে দুই দুইটি। তাও বেশ সহজ ক্যাচ। ধারাভাষ্যকার তো বলে উঠলেন ললিপপ ক্যাচ। মিস হয়েছে রানআউট করার সুযোগও। যদিও বাংলাদেশকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন শফিউল ইসলাম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই তাকে বোল্ড করে দেন তিনি। রোহিত আউট হয়ে গেলে কিছুটা হাত খুলে খেলে ভারতের রানের চাকা সচল রাখতে চেষ্টা করেছিলেন শেখর ধাওয়ান। তাকেও ফেরান এ পেসার। টাইগাররা তখন দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়া ভারতকে আরও বড় চাপে ফেলতে পারত।

শ্রেয়াস আইয়ার তখন মাত্রই উইকেটে এসেছেন। শফিউল ইসলামের বলটি তেমন ভালো না হলেও জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে পয়েন্ট ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু করলেন আমিনুল ইসলাম। উত্তেজনার বশে সহজ ক্যাচটি ধরতে গিয়ে ফেলে দেন তিনি। বাংলাদেশের সংগ্রাম যেন তখন থেকেই শুরু হয়। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়েছেন আইয়ার। তাতেই বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় ভারত।

ক্যাচ মিস করা আমিনুল এদিন বোলিংয়েও নিজের ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি। তিন ওভার শেষে খরচের খাতায় থাকে ২৯ রান। উইকেট নেই। তৃতীয় ওভারে সেই আইয়ারের তোপে পড়ে দিয়েছেন ১৬ রান। শুধু আমিনুল না প্রায় সব বোলারদের উপরই চড়াও হয়েছেন আইয়ার। আফিফ হোসেন ধ্রুবর করা ইনিংসের ১৫তম ওভারে তো প্রথম তিন বলেই তিনটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।

উড়তে থাকা আইয়ারকে থামিয়েছেন সৌম্য সরকার। তবে এর আগেই নামের পাশে ৬২ রানের ইনিংস। মাত্র ৩৩ বলের এ ইনিংসে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কার মার। রাহুলের ব্যাট থেকেও আসে ৫২ রান। শেষ দিকে মানিশ পাণ্ডের ব্যাট থেকে আসে ঝড়ো ২২ রান। তাতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রানের সংগ্রহ পায় ভারত।

তবে ব্যতিক্রম ছিলেন আল-আমিন হোসেন। দারুণ বোলিং করেছেন। চার ওভার বল করে মাত্র ২২ রান দিয়ে পেয়েছেন রাহুলের উইকেট। ভাগ্য সঙ্গে থাকলে হয়তো পেতে পারতেন আরও। পার্ট টাইম বোলার সৌম্য সরকার বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন। চার ওভার বল করে ২৯ রানের খরচায় পেয়েছেন ২টি উইকেট। ৩২ রানের খরচায় শফিউলও নেন ২টি উইকেট। পেসাররা যেখানে সবাই কমবেশি ভালো করেছেন সেখানে মোস্তাফিজুর রহমানের বাজে সময় এ ম্যাচেও কাটেনি। বেদম পিটুনি খেয়ে এদিনও চার ওভারে দিয়েছেন ৪২ রান।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago