অপসারণের পর তুরিন আফরোজ: আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি মো. ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপনে দেখা করার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে অপসারণ করা হয়েছে।
tureen.jpg
তুরিন আফরোজ। স্টার ফাইল ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি মো. ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপনে দেখা করার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে অপসারণ করা হয়েছে।

আজ (১১ নভেম্বর) আইন, বিচার বিভাগ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের দায়ে প্রসিকিউটরের পদ থেকে অপসারণ করা হলো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তুরিন আফরোজ দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, “আমাকে কোনো তদন্তের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি, আমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসাও করেনি, কোনো কিছুই করা হয়নি। তো এক বছর চার-পাঁচ মাস পরে হঠাৎ করে...তদন্তে তো আত্মপক্ষ সমর্থনেরও একটি জায়গা থাকে। কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কী না, সেটিও আমি জানি না।”

তিনি বলেন, “বিষয়টি এখন আমাকে লিগ্যালি দেখতে হবে। প্রসিডিংটা কী হয়েছে, আসলে কী হলো, কারণ একটি তদন্ত হওয়ার কথা ছিলো, সেটিই আমি জানি। তবে আজ পর্যন্ত কোনো তদন্তের জন্য আমাকে ডাকা হয়নি।”

সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের দায়ে আপনাকে প্রসিকিউটরের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

তুরিন আফরোজ বলেন, “আমি তো আসলে জানি না, উনারা কি মিন করেছেন। এটি তো এক লাইনের লেখা। আমার জানা মতে, আমি কোনো অসদাচরণ করিনি, পেশাগত কোনো আইন ভঙ্গ করিনি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করে গেছি।”

তিনি বলেন, “যেটি নিয়ে ডিসপিউট ছিলো, সে ডিসপিউটের তদন্ত হওয়ার কথা ছিলো। এখন সে তদন্ত না হয়ে, আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে, যদি একপাক্ষিক একটি সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে তো আমার আইনগত অবস্থানটি আরেকবার বিবেচনা করে দেখতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাকে কেউ কিছুই এ পর্যন্ত জানায়নি। ৯ মে থেকে আজ পর্যন্ত এক বছরে একটিবারও আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কোনোরকম এক্সপ্লেনেশন, কোনো কিছুই জানতে চাওয়া হয়নি।”

যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত একজনের সঙ্গে দেখা করার জন্য ফোনে তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, সেই টেলিফোন সংলাপ ফাঁস হয়েছিলো। এই যে তদন্ত চলাকালে আসামির সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ার বিষয়টিকে এখনও সঠিক বলে মনে করেন কী না?

এই প্রশ্নের জবাবে তুরিন আফরোজ বলেন, “এই কাজটি শুধু একজনের ব্যাপারে নয়, অনেকের ব্যাপারেই হয়েছে। এটি আমার পেশাগত দায়িত্ব এবং আইনগত দায়িত্বের মধ্যেই পরে।”

উল্লেখ্য, তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অভিযোগ, তিনি ২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি মেজর (অব.) মো. ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে টেলিফোন করে গোপনে বৈঠক করতে চান। এর পরদিন তিনি রাজধানী গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় ওয়াহিদুল হক, তার স্ত্রী ও একজন আত্মীয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি আসামির কাছে ঘুষ চেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ওয়াহিদুল হক সেই বৈঠকের কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করেন। গত বছরের ২৪ এপ্রিল ওয়াহিদুল হককে গ্রেপ্তারের পর তার মোবাইল ফোনে সেই রেকর্ড পায় পুলিশ।

ওয়াহিদুল হক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। একাত্তর সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে চালানো গণহত্যায় তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেসময় ১৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বদলি হয়ে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান এবং সেখানে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৬ সালে ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ গঠনের পর ১১ নভেম্বর এই মামলার প্রসিকিউটরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো তুরিন আফরোজকে।

Comments

The Daily Star  | English

What is seat-sharing and why as a voter you should know about it

In the lead-up to the national election on January 7, 2024, parties that have committed to participating in the polls have put forth their nominees

2h ago