‘চালক সম্ভবত তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগে গতকাল উদয়ন এক্সপ্রেসকে ধাক্কা দেওয়ার সময় তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের চালক সম্ভবত তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি তদন্ত কমিটির প্রধান।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে ফোনে আলাপকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, “আমাদের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, তূর্ণা নিশীথা সংকেত লঙ্ঘন করেছিলো। আমাদের মনে হয়েছে, ট্রেনটির চালক সম্ভবত তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন।”
তিনি জানান, কোনো চালক যদি সংকেত খেয়াল করতে ব্যর্থ হন, তাহলে সহকারী চালকের দায়িত্ব হলো তাকে সতর্ক করা। এমনকি ট্রেনের প্রহরীরও সংকেতের দিকে নজর রাখা দায়িত্বের মধ্যে পরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “কিন্তু এ ঘটনায় আমরা দেখতে পেয়েছি যে, উপরোক্ত তিনজনই সংকেত মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছেন।”
দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত ও বহু হতাহতের ঘটনাটি তূর্ণা নিশীথার চালক ও তার সহকারীদের ভুলের কারণে ঘটেছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
মন্ত্রী বলেন, “আমরা উদয়ন এক্সপ্রেস অথবা রেললাইন ও সংকেত ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি খুঁজে পাইনি।”
এ ঘটনায় তূর্ণা নিশীথার চালক (লোকোমাস্টার) তাছের উদ্দিন, সহকারী লোকোমাস্টার অপু দে এবং ওয়ার্কিং গার্ড আব্দুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংঘর্ষে তাছের ও অপু আহত হওয়ায় বর্তমানে একটি হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিয়া জাহান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ‘মানবিক ব্যর্থতার’ ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সিগন্যালে কোনো ত্রুটি ছিলো না।
তিনি বলেন, “ট্রেনটি (তূর্ণা নিশীথা) সংকেত অমান্য করে এবং এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে অপর ট্রেনকে ধাক্কা দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “রাত তিনটার দিকে উদয়ন এক্সপ্রেস মেইন লাইন থেকে লুপ লাইন ক্রস করছিলো। এ সময় সংকেত অমান্য করে দ্রুতগতির তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস সেটির একটি বগিকে বাজে ভাবে ধাক্কা দেয়। আমাদের বিশ্বাস- নিহতদের বেশিরভাগই ওই বগিতে ছিলেন।”
এসময় উদয়ন এক্সপ্রেসের আরও কয়েকটি বগি আঘাতপ্রাপ্ত হয় বলেও জানান তিনি।
রেলওয়ে পরিচালন বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা জানান, তূর্ণা নিশীথা তিনটি সংকেতের (আউটার, হোম এবং অ্যাডভান্স স্টার্টার) সবকটিই অমান্য করেছিলো।”
তিনি বলেন, “চালক যদি জেগে থাকতেন, তাহলে তার পক্ষে তিনটি সংকেত এড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক।”
“এছাড়া চালকের পাশাপাশি তার সহকারী ও প্রহরীরও সেসময় তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না”, বলেন তিনি।
মারাত্মক এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গতকাল পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। এর মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে তিনটি এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত সারাদেশে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১১৫ জন নিহত এবং ২৯৫ জন আহত হয়েছেন।
Comments