ফোকফেস্টের পঞ্চম আসর মাতাবেন যারা
আজ ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের পঞ্চম আসর। তিনদিনব্যাপী এ আয়োজন চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দর্শকরা উপভোগ করবেন বিভিন্ন দেশের লোকসংগীত। সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এশিয়ার লোকসংগীতের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট’। এক নজরে জেনে নিন কারা ফোকফেস্টের পঞ্চম আসর মাতাবেন
প্রথমদিন
প্রেমা ও ভাবনা নৃত্য দল
২০০৭ সালে শুদ্ধ নৃত্য চর্চায় বিশ্বাসী ‘ভাবনা নৃত্যদলের’ আগমন। প্রথম থেকেই ভাবনা নৃত্যদল বিভিন্ন নৃত্য আঙ্গিকের মাধ্যমে নজরুল ও রবীন্দ্রনাথকে মঞ্চে নিয়ে আসতে চায়। ভাবনা নৃত্যদল বিশ্বাস করে এর মাধ্যমে আমাদের দেশের সংস্কৃতি এবং শেকড়ের সংরক্ষণ করা ও সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। ইতোমধ্যে তারা ‘ভানু সিংহের পদাবলি’, ‘শকুন্তলা’, ‘পাপমোচন’ প্রভৃতি পরিবেশন করেছে।
শেভেনেবুরেবি (জর্জিয়া)
জর্জিয়ান ফোক ব্যান্ড শেভেনেবুরেবির যাত্রা শুরু ২০০১ সালে। বিভিন্ন ধরনের ফোক ইন্সট্রুমেন্টের সমন্বয়ে ভিন্নধর্মী সংগীতায়োজন তাদের গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য। গান গাওয়ার পাশাপাশি ব্যান্ডটি জর্জিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফোক গান সংগ্রহ করে থাকে। ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বড় বড় কনসার্টে গান করেছে তারা।
শাহ্ আলম সরকার
বাংলা বাউল গানের এক অনন্য শিল্পী, গীতিকার ও সুরকারের নাম শাহ্ আলম সরকার। পারিবারিকভাবেই তিনি বাউল গানের সঙ্গে যুক্ত। সংগীত জীবনে তার ৬৫০টিরও বেশি অ্যালবাম বের হয়েছে তার। গুণী এই শিল্পী বাউল সংগীতকে সবার মাঝে পৌঁছে দিতে চান।
দালের মেহেন্দি (ভারত)
দালের মেহেন্দির জন্ম বিহারের পাটনায়। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাঞ্জাবি ভাঙড়া গান দিয়ে সারা ভারতে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৫ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘বোলো তা রা রা রা...’ প্রায় ২০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। ‘দ্য কিং অব ভাঙড়া’ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
দ্বিতীয়দিন
কামরুজ্জামান রাব্বি
কামরুজ্জামান রাব্বি বাংলা লোকগানের একটি শ্রোতাপ্রিয় নাম। দোতারা বাজিয়ে লোকগান গেয়ে এই শিল্পী খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ২০১৬ সালে সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত বাউল গানের রিয়ালিটি শো ‘বাউলিয়ানা’র মঞ্চে সর্বপ্রথম নজর কাড়েন রাব্বি। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের একজন তালিকাভুক্ত শিল্পী।
শফিকুল ইসলাম
মাটির গান গেয়ে কৈশোরেই শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে শফিকুল ইসলাম। ২০১৬ সালে সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাউলিয়ানা’য় প্রথম রানারআপ হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। ইউটিউবে তার গাওয়া বিভিন্ন গান পেয়েছে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা।
মালেক কাওয়াল
মালেক কাওয়াল বাংলা লোকসংগীতের এক অনন্য নাম। চার দশকের বেশি সময় ধরে কাওয়ালি গেয়ে আসছেন তিনি। গানে হাতেখড়ি তার গুরু মহীন কাওয়ালের কাছে। পরবর্তীতে তিনি ওস্তাদ মরহুম টুনু কাওয়ালের কাছে তালিম নিয়েছেন। কাওয়ালি গানের পাশাপাশি তিনি মাইজভাণ্ডারী গানেও পারদর্শী।
হিনা নাসরুল্লাহ (পাকিস্তান)
হিনা নাসরুল্লাহ তার সুরেলা কণ্ঠের জন্য সুপরিচিত। তিনি মূলত সুফি ঘরানার গান করেন। খুব ছোটবেলায় পাকিস্তানি টেলিভিশনে হামদ ও না’ত পরিবেশনার মাধ্যমে তার সংগীত জীবনের শুরু। বিশ্বের নানা প্রান্তে সুফি কনসার্টে সুরের মূর্ছনায় শ্রোতাদের মাতিয়ে রেখেছেন তিনি।
ফকির শাহাবুদ্দিন
বাংলাদেশের লোকসংগীত, বাউল ও সুফি গানের জনপ্রিয় শিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন। পাশাপাশি তিনি একজন গীতিকার, সুরকার ও সংগীত গবেষক। লোকগানের কিংবদন্তী শাহ আবদুল করিমের সান্নিধ্যে আসার পর বাউল গানের দিকে ঝুঁকে পড়েন ফকির শাহাবুদ্দিন। প্রায় চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ হাজার বাউল গান সংগ্রহে রয়েছে তার। বাংলা লোকসংগীতকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে দেশে-বিদেশে গান করে করেন শাহাবুদ্দিন।
হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা (মালি)
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির লোকসংগীতের কিংবদন্তী হাবিব কইটে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তার প্রথম অ্যালবাম ‘মুসো কো’ দিয়ে বিশ্বব্যাপী সংগীতপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি নিজের ব্যান্ড বামাদাকে নিয়ে প্রায় ১৭শ কনসার্টে গান করেছেন, পারফর্ম করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় মঞ্চে।
তৃতীয়দিন
কাজল দেওয়ান
বাউলশিল্পী কাজল দেওয়ান ছোটবেলায় বাবা-মার সঙ্গে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গানের হাতেখড়ি। বাবা প্রখ্যাত বাউল মাতাল কবি আব্দুর রাজ্জাক দেওয়ানের হাত ধরে নিজেকে বাউল গানের সুরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেন নিজের গানের মাধ্যমে। পালাগান ও লোকসংগীতকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন কাজল দেওয়ান।
সাত্তুমা (রাশিয়া)
রাশিয়ার কারেলিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি সাত্তুমা। পারিবারিক এই ব্যান্ডটির যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে। মঞ্চে নানা ধরনের ইন্সট্রুমেন্ট বাজিয়ে এক অদ্ভুত মূর্ছনায় দর্শককে আবিষ্ট করে রাখেন সাত্তুমার সদস্যরা।
চন্দনা মজুমদার
চন্দনা মজুমদার মূলত লালনসংগীত শিল্পী। লালনের বাইরে রাধা-রমণ, হাসন রাজা, শাহ্ আবদুল করিমসহ আরও বিভিন্ন গীতিকবির গান করেন তিনি। ২০০৯ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
জুনুন (পাকিস্তান)
উপমহাদেশের সংগীতপ্রেমীদের কাছে ‘জুনুন’ এক উন্মাদনার নাম। পাকিস্তানি এই ব্যান্ডটি সুফি ঘরানার গান দিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে শ্রোতাদের মোহিত করে রেখেছে। ১৯৯৭ সালে নিজেদের চতুর্থ অ্যালবাম ‘আজাদি’ দিয়ে সারা উপমহাদেশে ঝড় তোলে জুনুন। অ্যালবামের প্রথম গান ‘সাইওনি’ পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশ- তিনদেশের শ্রোতাদের কাছেই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। বিশ্বব্যাপী ‘জুনুন’র ত্রিশ মিলিয়নেরও বেশি অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে।
Comments