রেলে ৫৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, নজর নেই মানবসম্পদ উন্নয়নে

২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে রেলওয়ের ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্পে ৫৪ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নে এই বিপুল অর্থ ব্যয় করা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া না হলে যাত্রীসেবার মান বাড়ানো সম্ভব নয়।
উদ্বোধনের দিন বেনাপোল এক্সপ্রেস। ১৭ জুলাই ২০১৯, বেনাপোল স্টেশন। স্টার ফাইল ছবি

বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল ব্যয় করা হলেও এই খাতের জনবল সংকটের ব্যাপারে খুব সামান্যই উদ্যোগী হয়েছে সরকার। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে রেলওয়ের ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্পে ৫৪ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে এই বিপুল অর্থ ব্যয় করা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া না হলে যাত্রীসেবার মান বাড়ানো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে ৩৫৬টি যাত্রীবাহী ও ৩০টি মালবাহী ট্রেনের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে লোকো মাস্টার (ট্রেন চালক) পদ রয়েছে ১,৭৫৭টি। কিন্তু এই পদে মাত্র ১,১১৮ জন রেখে ৪৪ জেলায় ২৯৫৫ কিলোমিটার পথে ট্রেন চালানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নিয়োগ নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় এখন এই সমস্যার সমাধানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রেখেছে। এর জন্য কিছুদিন সময় লাগবে।

“আমাদের জনবলের সক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি আমরা। কিন্তু বিদ্যমান প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা আধুনিক নয় বলেই মনে হয়,” বলেন রেলমন্ত্রী।

পাকিস্তান আমলের পাঠ্যক্রম দিয়ে এখনও রেল কর্মীদের প্রশিক্ষণ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা সংস্কার করা হবে।

নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেন চালকদের প্রশক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, আগে একজন ট্রেন চালকের সহকারী হিসেবে রেখে নতুনদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। মোটামুটি সাত বছর সহকারী চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ট্রেন চালানোর খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে তাদের শিখতে হতো। কিন্তু সম্প্রতি নতুন চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য লোকোমোটিভ সিমুলেটর আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবর্তন দৃশ্যমান পর্যায়ে যেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন সিমুলেটর ব্যবহার শুরু হবে বলে যোগ করেন তিনি।

ট্রেন চালক সংকটের বাইরেও সার্বিকভাবে জনবল সংকট রয়েছে রেলওয়েতে। তথ্য বলছে, রেলের নির্ধারিত জনবল ৪০,২৭৫ জন হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে আছেন ২৫,৮৪৫ জন। পাকিস্তান আমলেও প্রায় ৬০,০০০ কর্মী ছিল রেলওয়ের। এমনকি গত শতাব্দীর আশির দশকেও ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করতেন রেলওয়েতে।

কিন্তু লোকসান কমানোর কথা বলে ব্যাপকমাত্রায় জনবল কমানোর পন্থা নেওয়া হয় রেলওয়েতে। ১৯৮৫ সালে একবার নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৯২ সালেও নিয়োগ বন্ধ রেখে ১০ হাজার কর্মীকে অবসরে পাঠানো হয়। ২০০০ সালের মধ্যে রেলের কর্মী সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে।

এখন প্রতি বছর রেলের প্রায় ১০০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন। এই জনবল সংকটের মধ্যে বিপুল সংখ্যায় অবসরে যাওয় অনেকটা বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে দেখা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জনবল সংকটের কারণে কখনও কখনও বাড়তি কাজের জন্য কর্মীদের ওপর চাপ থাকে। কিন্তু আমরা পরিস্থিতি পাল্টানোর চেষ্টা করছি। তবে এই সময় রেলের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নেই যে মূল দৃষ্টি সেকথাও জানান তিনি।

রেল সচিব আরও জানান, ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি ও নতুন গন্তব্যে রেলসেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রেলওয়ের অরগানোগ্রাম হালনাগাদ হয়নি। ৫০ হাজার জনবল নিয়ে হালনাগাদ করা একটি অরগানোগ্রাম ২০১৬ সালে প্রস্তাবনা আকারে পাঠানো হয়েছে। এই অরগানোগ্রাম পাস হয়ে গেলেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে, এমনটাই আশা রেল সচিবের।

রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিয়া জাহান বলেন, রেলের এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে সরাসরি জনবল নিয়োগ দেওয়া যায় না। সময়ের সঙ্গে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মাধ্যমে এই দক্ষ জনবল তৈরি হয়। রেলের জনবল সংকটের তীব্রতা বোঝাতে গিয়ে তিনি জানালেন, সারাদেশে ৪৮২টি স্টেশনের মধ্যে ১১১টি স্টেশন বন্ধ করে দিতে হয়েছে রেলওয়েকে।

স্টেশন মাস্টার, লোকো মাস্টার, বুকিং ক্লার্ক, এটেন্ডেন্ট ও নিরাপত্তা গার্ডের পদগুলোতে জনবল সংকট থাকার কথা জানান রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মো. শামসুল হক বলেন, রেলওয়ের উন্নয়নে সরকার অবকাঠামোর দিকেই শুধু লক্ষ্য রাখা হয়েছে। যেখানে যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া দরকার ছিল। তার মতে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে জনবলের সক্ষমতা উন্নয়নের দিকেও আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত।

Click here to read the English version of this report

Comments

The Daily Star  | English
$8b climate fund rolled out for Bangladesh

Lenders join hands over $8b climate fund for Bangladesh

In a first in Asia, development partners have come together to announce an $8 billion fund to help Bangladesh mitigate and adapt to the effects of climate change.

12h ago