মেসির গোলে ব্রাজিলকে হারাল আর্জেন্টিনা
তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটানোর পর এদিন ফিরলেন নিয়মিত অধিনায়ক লিওনেল মেসি। আর অধিনায়ককে পেয়ে যেন জ্বলে উঠল আর্জেন্টিনা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে দারুণ জয় তুলে নিয়েছে দলটি। সবচেয়ে বড় কথা ম্যাচে প্রায় একক আধিপত্য বিস্তার করেই খেলেছে তারা। যদিও জয় মিলেছে ন্যুনতম ব্যবধানে। মেসির দেওয়া একমাত্র গোলে ১-০ ব্যবধানে জয় পায় আলবিসেলেস্তারা।
দুই দলের সবশেষ দেখায় কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। এ নিয়ে টানা ছয়টি ম্যাচে অপরাজিত থাকল দলটি। যার মধ্যে পাঁচটিই জয়। অন্যদিকে কোপা জয়ের পর টানা পঞ্চম ম্যাচে জয়হীন থাকলো ব্রাজিল। এরমধ্যে দুইটিতে হেরেছে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
এদিন অবশ্য কিছুটা তারুণ্য নির্ভর দল গড়েছিল ব্রাজিল। নেইমার, এদেরসন ও দাভিদ নেরেস ছিলেন না ইনজুরির কারণে। তার সঙ্গে অভিজ্ঞ দানি আলভেস, মার্সেলো, ফের্নান্দিনহো, দগলাস কস্তার মতো তারকা খেলোয়াড়দের রাখেননি কোচ তিতে। তবে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি তার শিষ্যরা। প্রথমার্ধে লড়াই কিছুটা করলেও দ্বিতীয়ার্ধে একক আধিপত্য বিস্তার করেই খেলেছে আর্জেন্টিনা। বলের নিয়ন্ত্রণ ৬৪ শতাংশ ছিল তাদের। বার পোস্টে শট ১৪টি। যার ৮টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে মোট ছয়টি শটের মাত্র একটি লক্ষ্যে রাখতে পারে ব্রাজিল। এমনকি পেনাল্টি শটও মিস করেছে তারা।
সৌদি আরবের কিং সৌদি ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়ামে শুরুতে এগিয়ে যেতে পারতো ব্রাজিলই। ম্যাচের দশম মিনিটে স্পটকিক থেকে গোল আদায় করে নিতে ব্যর্থ হন জেসুস। শট ঠেকাতে গোলরক্ষক ঝাঁপ দিয়েছিলেন ডান দিকে। বাঁ দিকে শট নিলেও তা লক্ষ্যে থাকেনি। কদিন আগে ম্যানচেস্টার সিটির হয়েও একই ধরণের মিস করেছিলেন এ তারকা। ডি-বক্সের মধ্যে জেসুসকে লিয়েন্ড্রো পারেদেস ফাউল করায় পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি।
তবে জেসুস না পারলেও ঠিকই পেরেছেন মেসি। তিন মিনিট পর পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনাও। যদিও মেসির শট ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। তবে আলগা বল পেয়ে জালে পাঠাতে কোন ভুল করেননি এ বার্সেলোনা তারকা। ডান প্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে ঢোকার মুখে মেসিকে ফাউল করেছিলেন অ্যালেক্স সান্দ্রো। তাতেই পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি।
৩১তম মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারতো আর্জেন্টিনা। ডিফেন্ডারের ভুলে ডি-বক্সের বাইরে ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু তার শট এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বাইরে চলে যায়। বিরতির ঠিক আগে গোল করার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। ব্রাজিলিয়ান এক ডিফেন্ডারের ভুলে আলগা বল পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় মাঝমাঠ বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ভালো শট নিয়েছিলেন। কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক অ্যালিসন।
৫১তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন জেসুস। কিন্তু শট নিতে দেরি করে ফেলায় সে সুযোগ মিস করেন তিনি। যদিও পরে উইলিয়ানের শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তার শট এক ডিফেন্ডার ফিরিয়ে দেন। ৬৭তম মিনিটে ফ্রিকিক থেকে দারুণ শট নিয়েছিলেন মেসি। তবে গোলরক্ষক অ্যালিসন ছিলেন সতর্ক। কর্নারের বিনিময়ে ফিরিয়ে দেন সে শট। তিন মিনিট পর মেসির আরও একটি ফ্রিকিক সহজেই লুফে নেন অ্যালিসন।৭৬তম মিনিট পর হের্মান পেস্সেইয়ার জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে রুখে দেন ব্রাজিল গোলরক্ষক।
৮০তম মিনিটে অবিশ্বাস্য এক মিস করেন লাউতারো মার্টিনেজ। ডান প্রান্ত থেকে আকুনার ক্রস একেবারে ফাঁকায় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বল চলে যায় তার দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে। আলগা বলে আরেক খেলোয়াড় শট নিলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। পরের মিনিটে কর্নার থেকে জটলা থেকে আবারো ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন মার্টিনেজ। এবার তার নেওয়া শট বারপোস্টের উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৮৫তম মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি মিস করেন ওতামেন্দি। ডান প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত এক পাস দিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু বলের কাছে থেকেও মাথায় ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন এ ম্যানসিটি তারকা। এরপরও বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল তারা। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। তবে মেসির দেওয়া সে গোলেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।
Comments