দেশ-বিদেশের লোকজ সুরের মেলবন্ধন

‘ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্ট ২০১৯’ তিনদিনের এই উৎসবের দ্বিতীয় দিনেও যেনো মাটির গানে মেতে উঠলো উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা। একদিকে স্বদেশের হৃদয় জাগানিয়া গান, অন্যদিকে পাকিস্তান ও মালির লোকজ সুরে যেনো মেলবন্ধন গড়ে উঠলো গতকাল (১৫ নভেম্বর) রাতের লোক সংগীত উৎসব মঞ্চে।
Folk-Fest-1.jpg
১৫ নভেম্বর ২০১৯, রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ফোকফেস্টের দ্বিতীয় দিনে সংগীত পরিবেশন করেন মালির লোক সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি হাবিব কইটে ও তার ব্যান্ড বামাদা। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

‘ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্ট ২০১৯’  তিনদিনের এই উৎসবের দ্বিতীয় দিনেও যেনো মাটির গানে মেতে উঠলো উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা। একদিকে স্বদেশের হৃদয় জাগানিয়া গান, অন্যদিকে পাকিস্তান ও মালির লোকজ সুরে যেনো মেলবন্ধন গড়ে উঠলো গতকাল (১৫ নভেম্বর) রাতের লোক সংগীত উৎসব মঞ্চে।

দ্বিতীয় দিনে দেখা মিললো বাংলাদেশের কাজল দেওয়ান, কামরুজ্জামান রাব্বি, শফিকুল ইসলাম এবং পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ এবং মালির লোক সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি হাবিব কইটে ও তার ব্যান্ড বামাদার সদস্যদের।

গতকাল উৎসবের দ্বিতীয় দিনে শুরুতেই মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম। লোকগানের পরিবেশনা দিয়ে শ্রোতার মনোযোগ কেড়েছেন। ২০১৬ সালে সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাউলিয়ানা’য় প্রথম রানারআপ হয়ে আলোচনায় আসেন শফিকুল। এই খুদে শিল্পী বাউল ও বিচ্ছেদী গানের পাশাপাশি অন্যান্য ঘরানার গানেও দারুণ পারদর্শী।

মঞ্চে উঠেই শফিকুল গেয়ে উঠেন শাহ আব্দুল করিমের ‘মন মজাইলা ওরে বাউলা গান’। এরপর ধরেন বিরহের গান ‘ও তুমি কই গেলা বন্ধুরে’। ‘কি সুন্দর এক গানের পাখি’ দিয়ে নিজের পরিবেশনা শেষ করেন এই ক্ষুদে বাউল।  

তারপর  মঞ্চ আসেন লোক সংগীতশিল্পী কামরুজ্জামান রাব্বি। তিনিও ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র আরেক শিল্পী। মঞ্চে উঠেই একে একে গাইতে থাকেন ‌‘বাংলাদেশের ঢোল’, ‘তোমার সঙ্গে কিসের পিরিতি’, ‘আমি তো ভালা না’। সর্বশেষ ‘গ্রামের নওজোয়ান’ গান দিয়ে তার পরিবেশনা শেষ করেন তিনি।

এরপর মঞ্চে উঠেন বাংলাদেশের লোক গানের গায়ক কাজল দেওয়ান। মঞ্চে উঠেই তিনি শুরু করেন, ‘দিন ফুরাইলেই ভাইঙ্গা যাইবো এই রঙ্গের মেলা’। এরপর একে একে গেয়ে শোনান, ‘পিরিতের বাজার ভালো না’, ‘আমায় এত দুঃখ দিলি বন্ধু রে’, ‘আরে ও জীবন রে, তুই জীবন ছাড়িয়া গেলে’, ‘নানা কদম তলায় আমি যাবো না’। সর্বশেষ, ‘ওরে বাঁশি, সুর দিয়ে জ্বালাইলি আগুন’ গানের মাধ্যমে কাজল দেওয়ান তার পরিবেশনা শেষ করেন।

স্টেডিয়াম জুড়ে কিছুক্ষণের জন্য নেমে আসে অদ্ভুত নীরবতা। অন্ধকারে আলোর ঝলকানি যেনো জানান দেয়, বিরহবাসী হয়েছেন উপস্থিত সবাই। এরপরই মঞ্চে আসেন আফ্রিকার মালির হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে হাবিব কইটের প্রথম অ্যালবাম ‘মুসো কো’ প্রকাশিত হয়। আর প্রথম অ্যালবামের গানগুলো দিয়ে বিশ্বের অগণিত সংগীত প্রেমীর মনোযোগ কেড়ে নেন তিনি। সেই শুরু, এরপর আর থেমে থাকার অবকাশ পাননি হাবিব। একই সঙ্গে তিনি ব্যান্ড বামাদাকে নিয়ে প্রায় ১৭শ’ কনসার্টে গান করেছেন। পারফর্ম করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় মঞ্চে। আফ্রিকান লোকধারার গান নিয়ে তিনি টানা এক ঘণ্টা মঞ্চে থাকেন।

তার পরিবেশনার পর সুরের স্বাদ দিতে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের ফকির শাহাবুদ্দিন। বাউল গানের এ জাদুকর মঞ্চে উঠেই বাউল সম্রাট লালন সাঁইয়ের গান   ‘আল্লাহ বল মন রে পাখি’ দিয়ে শুরু করেন পরিবেশনা। এরপর একে একে গাইতে থাকেন ‘একদিন মাটির ভেতরে হবে ঘর’, ‘মাঝি পাল তুলে দে’ গানগুলো।  এসময় আধ্যাত্মিকতার স্বাদে কিছুক্ষণ ডুবে থাকেন শ্রোতারা।

এরপর মঞ্চে আসেন দ্বিতীয় দিনের প্রতীক্ষিত সেই গায়িকা পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ। যার গান শুনতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষমাণ দর্শক প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে নতুন উদ্যমে। তিনি একের পর এক গাইতে থাকেন তার জনপ্রিয় গানগুলো। তার গানেই ইতি টানা হয় উৎসবের দ্বিতীয় দিনের এ আয়োজন।

সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সান কমিউনিকেশনের আয়োজনে মেরিল নিবেদিত লোক গানের এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া লোক সঙ্গীতের এ আয়োজনের সমাপনী দিন আজ।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago