‘পড়ে আছে ৬ লাখ মেট্রিক টন অবিক্রীত লবণ’

লবণের ঘাটতি নিয়ে গুজবের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার কেন্দ্রিক বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, তাদের কাছে যে পরিমাণ লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে তা দিয়ে আরও অন্তত দুই মাসের চাহিদা মিটবে। মাঠে ও মিলে পড়ে রয়েছে অন্তত ৬ লাখ মেট্রিকটন অবিক্রীত লবণ। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী লবণের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জমিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লবণ চাষিরা। স্টার ফাইল ছবি

লবণের ঘাটতি নিয়ে গুজবের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার কেন্দ্রিক বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, তাদের কাছে যে পরিমাণ লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে তা দিয়ে আরও অন্তত দুই মাসের চাহিদা মিটবে। মাঠে ও মিলে পড়ে রয়েছে অন্তত ৬ লাখ মেট্রিকটন অবিক্রীত লবণ। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী লবণের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

তাদের অভিযোগ দেশের লবণ খাতকে ধ্বংস করে আমদানি নির্ভরতা বাড়াতে এই গুজব রটানো হয়েছে। এদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

আজ  মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সভা কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, অসাধু ও দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু মিল মালিক লবণের নামে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সোডিয়াম সালফেট বিদেশ থেকে আমদানি করে বাজার সয়লাব করে ফেলেছিল। বন্ড লাইসেন্স, কাস্টিং সল্ট ইত্যাদি নামে লবণ আমদানি করছিল একটি শ্রেণি। আমরা ওই রকম লবণ আমদানি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। লবণের জাতীয় চাহিদা নিরূপণে সবাইকে এক টেবিলে বসতে হবে। লবণ ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হলে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব।”

লবণ ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের বাজারে লবণের কোনো সংকট নেই। অথচ সোমবার সন্ধ্যা ও রাতে এই লবণ নিয়ে ঘটে গেছে তুঘলকি কাণ্ড। সিলেট বিভাগ জুড়েই একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে।”

মিল মালিকরা বলেন, “আয়োডিনের সর্বোচ্চ কেজি প্রতি ১,০০০ টাকা থেকে ১,২০০ শত টাকা হওয়া দরকার। কিন্তু আমাদের কিনতে হচ্ছে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত দামে। মাঠে ও মিলে পড়ে রয়েছে অন্তত ৬ লাখ মেট্রিকটন অবিক্রীত লবণ। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কালোবাজারিরা বিদেশ থেকে লবণ আমদানির কারণে দেশীয় লবণ খাত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। পিছিয়ে যাচ্ছে দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ খাত। দরপতন অব্যাহত থাকলে সামনের মৌসুমে লবণ চাষিরা মাঠে যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।”

 মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  ৮০ কেজি লবণের প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা দরে। সে হিসেবে প্রতি কেজিতে দাম পড়ছে মাত্র চার টাকা। যা দিয়ে মজুরি ও উৎপাদন খরচ সামাল দিতে পারছেন না চাষিরা। অথচ বাজারে প্যাকেটজাত লবণ কেজিতে বিক্রি করা হয় প্রায় ৪০ টাকা। উৎপাদনের পর থেকে বাজারে পৌঁছানো পর্যন্ত অন্তত তিন বার হাত বদল হয় লবণের। মাঝের সবার লাভ হয়। কেবল লোকসান সয়ে যেতে হচ্ছে প্রান্তিক চাষিদের।

লবণ মিল মালিকরা জানায়, অপরিশোধিত লবণ খাবার উপযোগী ও বাজারজাত করতে কেজিতে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় টাকা খরচ হয়। সে হিসেবে এক কেজি লবণের দাম হওয়ার কথা সাড়ে পাঁচ টাকার নীচে। কিন্তু বাজারে ভোক্তাদের গুণতে হচ্ছে প্রায় ৪০ টাকা।  লবণ চাষিদের অবহেলা, রাঘববোয়াল ও শিল্প কারখানার মালিকদের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষপাতের কারণে এমনটি হচ্ছে।

নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে লবণের মৌসুম। ইতিমধ্যে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। গেল মৌসুমেও অন্তত ছয় লাখ মেট্রিক টন লবণ উদ্বৃত্ত ছিল।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ মৌসুমে বিসিকের চাহিদা ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় উৎপাদনযোগ্য লবণ জমির পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৫৯৬ একর। চাষির সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ২৮৭ জন। ওই মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ লাখ মেট্রিক টন। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন, যা বিগত ৫৮ বছরে লবণ উৎপাদনের মধ্যে রেকর্ড।

আরও পড়ুন:

দাম বাড়ার গুজবে লবণ কেনার হিড়িক

লবণের মজুদ পর্যাপ্ত, গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান বিসিকের

Comments

The Daily Star  | English

Fire breaks out on LPG tanker at Kutubdia anchorage

31 people, including 18 crew comprising nine Bangladeshis, eight Indonesians, and one Indian, were rescued

2h ago