বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য তুরস্কের প্রতি অর্থমন্ত্রীর আহ্বান

বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ ১৫টি লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে তুরস্কের আঙ্কারায় আজ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-তুরস্ক যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন সভা।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ ১৫টি লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে তুরস্কের আঙ্কারায় আজ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-তুরস্ক যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন সভা। তিন দিনের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আইসিটি, শিপ বিল্ডিং, শিল্প, কর্মসংস্থান, নৌ-পরিবহন, কৃষি, শিক্ষা, নগরায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পর্যটন ও বিমান পরিবহন, জ্বালানি-বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি-ট্যুরিজম, ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পাট-টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়া এতদিন ধরে চলে আসা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক পর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন করে আর কি কি খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যায় সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল আজ সন্ধ্যায় তুরস্কের গ্রান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলির স্পিকার মুস্তফা সেন্তোপের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে মন্ত্রী বলেন, তুরস্ক একটি অন্যতম অসাম্প্রদায়িক দেশ। যে দুটি কারণে তুরস্ক সারা বিশ্বে অত্যধিক সমাদৃত হয় তার একটা হলো অসাম্প্রদায়িকতা আর দ্বিতীয়টি হলো জঙ্গিবাদের কারণে বিশ্বের কোথাও কোন মানুষের যেন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ। বাংলাদেশের সাথে তুরস্কের এই নীতিতে অত্যন্ত সামঞ্জস্য রয়েছে কেন না বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে।

অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউট সোর্সিংয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে। দেশে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে। বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে এবং এ বছর ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আমরা আগামী বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি, যা ২০২৪ সাল নাগাদ দাঁড়াবে ১০ শতাংশ এবং সেটা অব্যাহত থাকবে।

তিনি তুরস্ককে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান করে বলেন, তুরস্ক বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। তাই তুরস্ক যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার জন্য জায়গা নিতে চায় তাহলে সরকার তাদেরকে সর্বোতভাবে সহায়তা করবে। ইলেকট্রনিক্স, ঔষধ, গ্যাসসহ বেশ কিছু খাতে তুরস্কের বিনিয়োগের ইতিবাচক সাড়াকে মন্ত্রী সাধুবাদ জানান এবং আরও বেশী বেশী বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান।

তুরস্কের স্পিকার মুস্তফা সেন্তোপ বলেন, বাংলাদেশের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দূরত্ব অনেক হলেও দুই দেশের মধ্যে ধর্ম, সংস্কৃতিসহ রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য। আমি আপনার এই সফরে অত্যন্ত আনন্দিত এবং আশা করছি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উদারতার এক মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আরাকানের এই মুসলিমদের উপর যে অবিচার করা হয়েছে সেটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। তুরস্ক এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, তুরস্কও চার মিলিয়ন শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, আর বাংলাদেশ এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হলেও এখন তার উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে।

কথা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবতার ইতিহাস তৈরি করেছেন এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদেরকে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছেন তাতে তাদের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওযা উচিৎ। আশা করা যায় সারা বিশ্ব এ বিষয়ে একমত পোষণ করবেন।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago