১৩০ বিলিয়ন ডলারের শিল্প ‘চাইনিজ ওষুধ’ নিয়ে ইউরোপের উদ্বেগ

ছবি: সংগৃহীত

চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ মানবদেহের নানাবিধ জটিল রোগ নিরাময় ও প্রাণশক্তিবর্ধক হিসেবে পৃথিবীব্যাপী পরিচিত। চাইনিজ থেরাপির মধ্যে রয়েছে কাপিং, আকুপাংচার বা ভেষজ চিকিৎসা। এই পদ্ধতিগুলো কয়েকশো বছর ধরে সফলভাবে চলে আসলেও ইউরোপের কোনো কোনো সমালোচক যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করছেন যে, এসব ওষুধ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত নয়।

ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধের মধ্যে এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যা তাদের দাবি অনুযায়ী মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে, প্লীহা নিরাময় করে, অনিদ্রা দূর করে, ব্রণ নিরাময় করে এমনকি ক্যান্সার নিরাময় করে। এই ওষুধগুলো শত শত বছর ধরে ব্যবহৃত ও সমাদৃত। প্রচলিত ধারার অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য চিকিৎসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

বিষয়টিকে এখন ইউরোপের চিকিৎসকদের একটি অংশ বলছেন, বৈজ্ঞানিক ওষুধতত্ত্ব অনুযায়ী এগুলো স্বীকৃত না। ‘চীনা ওষুধ’ তৈরিতে বাঘের পুরুষাঙ্গ, গণ্ডারের শিং ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে সেসব ওষুধ তৈরির কারণে বন্য প্রাণী হত্যা করা হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ চীনা ওষুধের ব্যাপক প্রচারণা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

গত ১৭ নভেম্বর মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই শীর্ষস্থানীয় ইউরোপীয় বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) চীনা ঐতিহ্যের এই ওষুধগুলোকে বৈধতা দিয়েছে। এটিকে অনেক বিশেষজ্ঞ ভিত্তিহীন দাবির বৈধতা হিসেবে দেখছেন।

এতে আরও বলা হয়, ইউরোপীয় একাডেমির বিজ্ঞান পরামর্শদাতা কাউন্সিল (ইএএসএসি) এবং ইউরোপীয় একাডেমি অফ মেডিসিন ফেডারেশন (এফএইএম) এক যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

ব্লাক সালভ পদ্ধতির মাধ্যমে টিউমারের, এমনকি ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হয় বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে এই পদ্ধতির মাধ্যমে শরীরের মাংস পোড়ানো হয়। যা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

শুধুমাত্র আকুপাংচারের দ্বারাই ক্যান্সার, স্ট্রোক, হার্টের সমস্যা থেকে শুরু করে হাঁপানির সমস্যার সমাধান হয় বলে দাবি করেন ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ প্রস্তুতকারীরা।

সমালোচকরা এই পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে দাবি করলেও, কিছু কিছু বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবেই এর উপকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৫ সালে, চীনা বিজ্ঞানী তুই ইউইউ ম্যালেরিয়া সম্পর্কিত গবেষণার জন্য চিকিত্সায় নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন যা এই পদ্ধতিতেই করা হয়েছিলো।

কার্যকর, প্রমাণিত ও কম খরচে ক্যান্সারের চিকিৎসা পাওয়া যায় চীনা ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে। উপকার না পেলে এমন চিকিৎসা পদ্ধতি সমাদৃত হতো না বলে মন্তব্য করেন চীনা বিজ্ঞানীরা। তারা এও মনে করেন যে প্রতিযোগিতা টিকতে না পেরে ইউরোপীয় চিকিৎসকরা এমন নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ঐতিহ্যবাহী ওষুধ শুধুমাত্র চীনেই প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলারের শিল্প, যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Mahfuj Alam apologises for past 'divisive' statements

"The patriotic people who stood united during the July uprising now face a long test"

1h ago