বাস-মাইক্রো সংঘর্ষে একই পরিবারের ৬ জনসহ ৯ জনের মৃত্যু
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাস ও বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নয়জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একই পরিবারের ছয় সদস্য রয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আজ (২২ নভেম্বর) দুপুরে শ্রীনগরের ষোলঘরে ঢাকা থেকে মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ঢাকাগামী মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এসব তথ্য দিয়ে শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেদায়েতুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসটি লৌহজং উপজেলার কনকসার থেকে বরযাত্রী বহন করে কেরানীগঞ্জের কামরাঙ্গিরচর যাচ্ছিলো। বেপরোয়া গতির বাসটি ওভারট্রেক করলে মাইক্রোবাসের সঙ্গে এর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। নিহতদের লাশ শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, বাস ও মাইক্রোবাসের দুজন যাত্রীকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হলে, সেখান থেকে একজন মারা যান। অপর আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাস ও মাইক্রোবাস দুটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। বাসের চালক ও সহকারী পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
দুর্ঘটনার সময় বাসটি রাস্তার পাশে ছিটকে গেলে এর ১০ যাত্রী আহত হন বলেও জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লৌহজং উপজেলার কনকসার থেকে মুদী দোকানি রুবেল হোসেনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কেরানীগঞ্জের কামরাঙ্গিরচর যাচ্ছিলো মাইক্রোবাসটি। স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ছয়জনসহ নয়জনই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিলেন।
দুর্ঘটনায় রুবেল হোসেনের (বর) বাবা আব্দুর রশীদ ব্যাপারী (৬০), বোন লিজা (২২) ও তার মেয়ে তাবাসসুম (৪), ভাবী রুনা আক্তার (২২) ও তার ছেলে তাহসিন (৩), মামাতো বোন রানু (১২) এবং প্রতিবেশী কেরামত আলী (৭০) ও মফিুজুল (৬০) এবং মাইক্রোবাসের চালক বিল্লাল (২৮)।
এদের মধ্যে রুবেলের ভাই সোহেলের স্ত্রী রুনা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মাইক্রোবাসের ভেতরে আটকে পড়া নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ৩০ মিনিট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিলো।
মাওয়ায় কর্মরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কাওসার-ই-আলম বলেন, “রাস্তার একপাশে কাজ চলছিলো। তাই একপাশ দিয়েই দুই ধরনের গাড়ি চলছিলো। এ সময় বাসটির সামনের ডান পাশের চাকা ফেটে যায়। এতে বাসটি মাইক্রোবাসটির ওপর উঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।”
বরের মাইক্রোবাসে থাকা কনকসার গ্রামের শফিকুল সিকদারের পুত্র নজরুল ইসলাম জানান, তারা দুটি মাইক্রোবাস নিয়ে রুবেলের বিয়ের কাবিন করতে যাচ্ছিলেন। পেছনে থাকায় এ দুর্ঘটনা থেকে তারা প্রাণে বেঁচে যান।
ক্ষতিপূরণ ও মামলা
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, এ ঘটনায় শ্রীনগরের হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। নিহতদের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন।
বিয়ে নয়, যেনো শোকের বাড়ি
আজ বিকেলে লৌহজংয়ের কনকসার গ্রামে রুবেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিয়ে বাড়ি পরিণত হয়েছে শোকের বাড়িতে। সেখানে নেই কোনো ধুমধাম। শুধুই স্বজনদের আহাজারি। শত শত লোক ভিড় করেছেন সেই বাড়িতে। কিন্তু সকলেই মুখেই হতাশার ছাপ। কারো মুখে কোনো কথা নেই।
নিহত রশিদ বেপারীর ভাতিজি রেহানা বেগমের আহাজারি কিছুতেই থামছে না। তিনি বুক চাপরে বলছিলেন, “সব শেষ। কাকার জন্য বাবা হারানোর শোক ভুলে গেছিলাম। এখন আমাদের সবই গেলো।”
রুবেল ও সোহেল দুই ভাই নির্বাক
এ দুর্ঘটনার পরই বর রুবেল বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তার মুখে কোনো কথা নেই। শুধুই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। একই অবস্থা রুবেলের ভাই সোহেলেরও। তিনিও স্ত্রী ও সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন।
তদন্ত কমিটি
এ দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায়কে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্যরা হলেন- শ্রীনগরের ইউএনও, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক, শ্রীনগর থানার ওসি, হাসাড়া হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এবং স্থানীয় ষোলঘর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম।
মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার রাতে এই তথ্য দিয়ে বলেন, “কমিটি আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে।”
Comments