‘যে কোনো মুহূর্তে আমার জীবনের ওপর হামলা করতে পারে’

'আমার শেষ কথা হলো আমি বলেছি, যে আইন ঘোষণা হয়েছে সেটার বাস্তবায়ন হতে হবে। সেটা দেখে আমরা পদক্ষেপ নিব। আইন বাস্তবায়ন না হলে দেশের জনগণকে নিয়ে, বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ব।'
ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে  আন্দোলনের কারণে পরিবহন মালিক, শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের চক্ষুশূল হয়েছেন। নতুন সড়ক আইনের বিভিন্ন দিক, আইন বাস্তবায়ন না হলে আগামী পরিকল্পনা সবকিছু ভাগাভাগি করলেন দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে।

২৬ বছর ধরে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ দাবিতে আন্দোলন করছেন। কেমন লাগে নিজের কাছে?

খুব ভালো লাগে না। এর কারণ হলো, দেশ স্বাধীন হয়েছে নয় মাসে। যদিও তার প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে এতটা বছর যুক্ত থাকার পরেও কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে পারিনি। এত বছর পর একটা আইন হয়েছে। এই চাওয়া শুধু আমার একার না, সারাদেশের মানুষের। কিন্তু আইন বাস্তবায়নের আগেই প্রতিকূল একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারকেও দেখছি নমনীয়। সেটা আরও বেশি চিন্তার কারণ। সিদ্ধান্ত তো সিদ্ধান্তই। সরকারকে সম্মান করা প্রতিটা মানুষের কর্তব্য। আমার চাওয়া-পাওয়া থাকতেই পারে, মতবিরোধ থাকতে পারে। সেটা একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু ১৯৯৩ সাল থেকে দেখে আসছি তারা সরকার, মানুষকে জিম্মি করে অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া আদায় করে নিচ্ছে।

এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে বারবার আপনাকে অপমান করা হয়েছে। এবারও একইভাবে পোস্টার প্রকাশ করে পুড়িয়ে অপমান করা হয়েছে।

এটা হয়েছে তার কারণ, এর আগে যখন আমাকে অপমান করা হয়েছে তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। সেই সময় যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে আজকে এই সাহস তারা পেত না। আইনের বিরুদ্ধে কাজ করতে করতে তারা সাহস পেয়ে গেছে। আইনে যেখানে ১০ বছরের শাস্তির বিধান, জামিনযোগ্য ছিল, সেটাকে তিন বছরে নামিয়ে এনে জামিনযোগ্য করল। এইভাবে চাপ সৃষ্টি করে সাহস পেতে পেতে এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

আপনার কাছে নতুন সড়ক আইন কেমন মনে হয়েছে?

আমার কথা হলো, যে আইনটা হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি কোনো রকম সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সেটাকে সরকার দেখবে। পরবর্তীতে সংসদে সেটা উপস্থাপন করবে। কিন্তু আইনটা বাস্তবায়নই করা হলো না। তার আগেই প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি সংসদকে অবমাননা করা, জনগণের চাওয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

আপনাকে অসম্মানিত করা হলো কিন্তু চলচ্চিত্রের সহকর্মীদের খুব বেশি সোচ্চার হতে দেখা গেল না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই আমাকে ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আমাকে সাহস জোগানোর কথা বলেছেন। আমি তো এখন রাস্তায় নামিনি, যখন রাস্তায় নামব তখন দেখা যাবে। এখন বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি।

আইন যদি বাস্তবায়ন না হয়, তখন আপনাদের অবস্থান কী হবে?

আইনটাকে প্রথমে বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়ন করার পর যদি কোনো অসঙ্গতি থাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটা পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু বাস্তবায়নের আগে রাষ্ট্রকে, জনগণকে চাপের মুখে ফেলে তারা যে দীর্ঘসময় ধরে এটা করে আসছে এবং জয়লাভ করছে। এবারও যদি তারা জয়লাভ করে তাহলে আমাদের আর দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না। আগে দেখি তারপর আমি কর্মসূচি দেব। আমার শেষ কথা হলো আমি বলেছি, যে আইন ঘোষণা হয়েছে সেটার বাস্তবায়ন হতে হবে। সেটা দেখে আমরা পদক্ষেপ নিব। আইন বাস্তবায়ন না হলে দেশের জনগণকে নিয়ে, বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ব।

সড়ক আন্দোলনের কারণে কোনো হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন?

না হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি না, তবে ভয় পাচ্ছি। আমার নামে অপমানজনক পোস্টার করে সেটা পোড়ানে হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এই বিষয়ে সরকার যেহেতু তাদের কিছুই করছে না, কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না আমার ভয় হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে আমার জীবনের ওপর হামলা করতে পারে।

আপনার কি দলীয় রাজনীতিতে আসার কোন ইচ্ছা রয়েছে?

আমার সেইরকম কোনো ইচ্ছা নেই। কোনো দলীয় রাজনীতি করতে চাই না।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago