তাজরীন ট্র্যাজেডির ৭ বছর, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে

Tazreen-Fashion.jpg
২৪ নভেম্বর ২০১৯, তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডে আহত, নিহতদের স্বজন এবং কয়েকটি শ্রমিক ও মানবাধিকার সংগঠন প্রতিষ্ঠানটির সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেন। ছবি: স্টার

সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাত বছর পূর্ণ হলো আজ (২৪ নভেম্বর)। ২০১২ সালের আজকের দিনে সংঘটিত ওই দুর্ঘটনায় ১১৩ জন পোশাক শ্রমিক নিহত ও ১৭২ জন শ্রমিক আহত হয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী।

দিনটি উপলক্ষে আজ সকাল সাতটায় প্রতিষ্ঠানটির সামনে জড়ো হন দুর্ঘটনায় আহত, নিহতদের স্বজন এবং কয়েকটি শ্রমিক ও মানবাধিকার সংগঠন। এসময় তারা মানববন্ধন করে এ ঘটনায় তাজরীন ফ্যাশনসের মালিকসহ জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি, হতাহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের যথাযথ পূনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।

পাশাপাশি তাজরীন ফ্যাশনসের জায়গায় একটি হাসপাতাল ও আহত শ্রমিকদের বসবাসের জন্য একটি আবাসন কেন্দ্র (ডরমিটরি) নির্মাণের দাবিও করেছেন তারা।

সবিতা রানী নামে আহত এক শ্রমিক বলেন, “ওই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা ১০ জন শ্রমিক মিলে গত বছরের ১ অক্টোবর আশুলিয়ার বুড়িপাড়া এলাকায় ‘তাজরীন আহত শ্রমিক আমরা ঘুরে দাঁড়াতে চাই’ নামে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে সেটিকে বেশিদিন চালিয়ে নিতে পারিনি।”

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি।”

শিল্পী আক্তার নামে আরেক আহত নারী বলেন, “সরকার তাজরীন অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে ফেরাদের জন্য তেমন কিছুই করেনি। আমরা যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।”

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, “দুর্ঘটনার সাত বছর পার হতে যাওয়া সত্ত্বেও ভুক্তভোগীদের পরিবার প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ পায়নি। এমনকি এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার ত্বরান্বিত করা হয়নি।”

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে তাজরীন কারখানায় আগুন লাগে। এই দুর্ঘটনায় ১১৩ জন নিহত ও আরও ১৭২ জন আহত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। শ্রমিক পক্ষের দাবি, আগুন লাগায় কারখানাটিতে দুই হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছিলেন। তাই আহতের সংখ্যা অবশ্যই আরও বেশি।

Tazreen-Tragedy-1.jpg
স্টার ফাইল ছবি

কারখানাটিতে আগুন লাগার সময় সামনের গেট দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন শ্রমিকরা। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে গেটটিতে তালা দেওয়ায় ভেতরেই আটকা পড়েন বিশাল সংখ্যক শ্রমিক। প্রাণে বাঁচতে সেদিন অনেককেই কারখানা থেকে লাফ দিতে হয়েছিলো।

এই ঘটনায় হওয়া মামলায় কারখানা মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। মামলায় দায়িত্বে অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। মামলাগুলো ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১ এ মামলাটি বিচারাধীন।

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেলোয়ারকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন আদালত। ছয় মাস পর জামিন নিয়ে তিনি মুক্ত রয়েছেন।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে বিপ্লবী গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফোরামের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, “এখন পর্যন্ত ৩৬ বার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পরেছে। এতোগুলো তারিখের মধ্য ৬ বার সাক্ষীকে হাজির করতে পেরেছে সরকার। গত ৭ নভেম্বর সর্বশেষ ঢাকা জজ কোর্টে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ছিলো। আগামী ২০ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে।”

“আমরা মনে করি- সরকারের গাফিলতির কারণে মামলার সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছেন না। মামলাটি যেকোনভাবে দুর্বল করা হচ্ছে”, বলেন এই শ্রমিক নেতা।

তিনি আরও বলেন, “মামলার মুল আসামি বিদেশে যাওয়ার জন্য তার জব্দকৃত পাসপোর্ট ফেরত পেতে পায়তারা করছেন।”

Comments

The Daily Star  | English

BNP shutting down Nagar Bhaban to realise demands by force: Asif Mahmud

Supporters of Ishraque today announced they would continue their sit-in tomorrow from 10:00am to 5:00pm

24m ago