ধর্ষকদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় সুবর্ণচরের সেই নারী

নোয়াখালীর সুবর্ণচারের গণধর্ষণের শিকার সেই নারী অভিযোগ করে বলেছেন, অপরাধীরা তাদের হুমকি দিয়ে চলেছে। এ কারণে তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন।

“আসামিরা যারা কারাগারে এবং বাইরে রয়েছে তারা এখনও আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে যাতে আমরা কথা না বলি। কিছুদিন আগে আদালতের শুনানিতে অংশ নিতে গেলে আমার বাড়িতে আগুন দেওয়ার হুমকি দেয় এবং আমার বড় মেয়েকে হত্যার চেষ্টা চালায়।”

নারী অধিকার নিয়ে সক্রিয় বেসরকারি সংস্থা ‘ইউ ক্যান’আয়োজিত দিনব্যাপী প্রতীকী অনশনে গতকাল সোমবার (২৫ নভেম্বর) এসব কথা বলেন, সুবর্ণচরের ওই নারী। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক দিবস পালন করতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এই অনশন পালন করা হয়। ধর্ষণ, যৌন হয়রানির শিকার, ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার নারীদের পরিবারের সদস্যরা এই এতে অংশ নেন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে সুবর্ণচর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত তাকে গণধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ ওঠার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ন্যায়বিচার চেয়ে ওই নারী বলেন, “থাকার জন্য একটি বাড়ি ও একখণ্ড জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু এখনও এর কিছুই পাইনি। মানবাধিকার সংগঠন ছাড়া সরকারের কোনো লোক এখন পর্যন্ত আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।”

চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার রুপা খাতুনের মামলাটি দুই বছর ধরে হাইকোর্টে ঝুলে রয়েছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে রুপার ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, “নিম্ন আদালত রায় দিয়েছে তবে মামলাটি অনেক দিন থেকেই উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। রায়টি বহাল থাকবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ...।”

যৌন নিপীড়ন ও স্বামীর হাতে হত্যার শিকার একজন নারীর ভাই মাহবুবুর রহমান বলেছিলেন যে তিনি আর বিচার দাবি করেন না কারণ তিনি জানেন তা পাবেন না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “নির্যাতনের শিকার কয়েকজন এখানে জড়ো হয়েছে। তবে পরিসংখ্যান দেখলে হতবুদ্ধি হতে হবে। গত ১০ মাসে প্রায় ৫০০০ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সংখ্যা শোনার পরে আমরা কেন এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি না? কারণ একটি মানসিকতা আমাদের মধ্যে বেড়েছে যে আমরা চাওয়ার পরও ন্যায়বিচার পাই না। আমরা এই ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছি কিন্তু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এর পেছনের মূল কারণ হলো আমরা দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছি।”

অনুষ্ঠান চলাকালীন আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ধর্ষণ ও হয়রানির নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে।

প্রতিবেদনে নয়টি জাতীয় দৈনিক-- প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, সংবাদ, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক নয়াদিগন্ত, দ্য ডেইলি স্টার, নিউ এজ এবং ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তৈরি করা।

এই প্রতিবেদনের সঙ্গে নয় দফা দাবিসহ একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেওয়া হবে।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন রোধ ট্রাইব্যুনালকে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, বিচারকালে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও সুরক্ষা প্রদান এবং ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এবছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে কমপক্ষে ১২৫৩ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ধর্ষণের পরে ৬২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণের পরে আরও ১০ জন আত্মহত্যা করেছেন এবং ৭৬৭ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

6h ago