দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও রিয়ালকে রুখে দিল পিএসজি
ম্যাচ শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে পর্যন্ত করিম বেনজেমার জোড়া লক্ষ্যভেদে দুই গোলের ব্যবধানেই এগিয়ে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় প্যারিস সেইন্ত জার্মেইর (পিএসজি)। দুই মিনিটের ঝলকে দুটি গোলই শোধ করে দেয় সফরকারীরা। ফলে রিয়ালের মাঠ থেকে ২-২ গোলের ব্যবধানে স্বস্তির ড্র নিয়ে ফিরছে ফরাসী ক্লাবটি।
এর আগে প্রথম লেগের ম্যাচে নিজেদের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল পিএসজি। তবে প্রতিপক্ষের মাঠে ড্র মেনেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। আর এ ড্রয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অপরাজিত রইল দলটি। টানা চার জয়ের পর এদিন ড্র করে দলটি। পাঁচ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ১৩ পয়েন্ট। অন্যদিকে সমান ম্যাচে রিয়ালের সংগ্রহ ৮ পয়েন্ট। দুটি দলই এর মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে।
তবে এদিন ম্যাচে বেশ প্রাধান্য বিস্তার করেই খেলেছিল রিয়াল। বারপোস্টে ২৭টি শট নিয়েছিল তারা। যার ১২টি ছিল লক্ষ্যে। পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের অবিশ্বাস্য কিছু সেভে জয় পায়নি দলটি। তবে গোল করার প্রথম সুযোগটি পেয়েছিল ফরাসী ক্লাবটিই। ম্যাচের নবম মিনিটে হুয়ান বেরনাতের ক্রসে ঠিকঠাকভাবে পায়ে লাগাতে পারলে তখনই এগিয়ে যেতে পারতো পিএসজি।
১৭তম মিনিটে এগিয়ে যায় রিয়াল। ডান প্রান্ত থেকে ফেদেরিকোর ভালভার্দের কাছ বল পেয়ে দারুণ শট নিয়েছিলেন ইস্কো। কিন্তু গোলরক্ষক নাভাসকে পরাস্ত করতে পারলেও ফিরে আসে বারপোস্টে লেগে। আলগা বল একেবারে ফাঁকায় পেয়ে যান বেনজেমা। আলতো শটে বল জালে জড়াতে কোন ভুল করেননি এ ফরাসী ফরোয়ার্ড।
চার মিনিট পর বেনজেমার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান নাভাস। ২৭তম মিনিটে বেনজেমা কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নিয়েছিলেন টনি ক্রুস। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ফিরিয়ে দেন পিএসজি গোলরক্ষক নাভাস। দুই মিনিট পর আনহেল ডি মারিয়াকে বঞ্চিত করে থিবো কর্তুয়া। ঝাঁপিয়ে পড়ে তার দূরপাল্লার শট ফিস্ট করে ঠেকিয়ে দেন তিনি। ৩৩তম মিনিটে টনি ক্রুসের আরও একটি শট আবারো ঝাঁপিয়ে ঠেকান নাভাস।
৩৬তম মিনিটে এমবাপেও হতাশ করেন কর্তুয়া। দারুণ দক্ষতায় তার শট ফিরিয়ে দেন এ বেলজিয়ান গোলরক্ষক। ৩৯তম মিনিটে মার্সেলোর জোরালো শট ঠেকিয়ে দেন নাভাস। ৪৩তম মিনিটে ভিএআর নাটকে বড় বাঁচা বেঁচে যায় রিয়াল। ডি-বক্সে মাউরো ইকার্দিকে ফাউল করলে লাল কার্ড দেখেন গোলরক্ষক কর্তুয়া। যাচাই হচ্ছিল পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে। কিন্তু পরে দেখা যায় মাঝ মাঠে মার্সেলো ফাউল করেছিলেন পিএসজির ইদ্রিসা গায়ে। ফলে বাতিল হয় লাল কার্ড। এমনকি পেনাল্টিও।
দ্বিতীয়ার্ধে ইদ্রিসার পরিবর্তে নেইমারকে মাঠে নামান পিএসজি কোচ টুখেল। ফলে পিএসজির খেলায় বেশ প্রাণ ফিরে আসে। তবে শুরুতেই ব্যবধান বাড়াতে পারতো রিয়াল। মার্সেলোর ক্রস থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন বেনজেমা। কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত শট নিতে পারেননি তিনি। গোলরক্ষক বরাবর শট নিলে নষ্ট হয় সে সুযোগ। ৫৯তম মিনিটে ক্রুসের দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৬১তম মিনিটে ফের নাভাস। এবার ফেরান ইস্কোর শট। ৬৬তম মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো পিএসজি। ডি-বক্সে এমবাপেকে নিখুঁত এক পাস দিয়েছিলেন নেইমার। তবে অল্পের জন্য বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি এমবাপে। ৭৯তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন বেনজেমা। বাঁ প্রান্ত থেকে মার্সেলোর ক্রসে দারুণ এক হেডে বল জালে জড়ান এ ফরাসী তারকা।
দুই মিনিট পরই ব্যবধান কমায় পিএসজি। থমাস মিউনিয়েরের ক্রস থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে আলতো টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপে। এর দুই মিনিট পর সমতায় ফেরে দলটি। হুলিয়ান ড্রাক্সলারের শট এক ডিফেন্ডার প্রতিহত করলে আলগা বল পেয়ে যান আরেক বদলী খেলোয়াড় পাবলো সারাবিয়া। তার শট ফেরাতে পারেননি কেউ।
৮৬তম মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি মিস করেন রিয়ালের তরুণ তারকা রদ্রিগো। অবিশ্বাস্য এক সেভ করেন নাভাস। ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে জোরালো শট নিলেও তা ঠেকিয়ে দেন নাভাস। পরের মিনিটে কর্নার থেকে ফাঁকায় হেড নিয়েও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি রাফায়েল ভারানে। ম্যাচের যোগ করা সময়ে এগিয়ে যাওয়ার ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপে। কিন্তু তার কোণাকোণি শট অল্পের জন্য বাইরের জাল কাঁপায়।
ম্যাচের শেষ মুহূর্তে বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রিকিক পায় রিয়াল। দারুণ এক শটও নিয়েছিলেন বদলী খেলোয়াড় গ্যারেথ বেল। কিন্তু বারপোস্টে লেগে ফিরে আসলে হতাশ হতে হয় স্বাগতিকদের। ফলে ড্র মেনেই মাঠ ছাড়তে হয় দুই দলকে।
Comments