ঘুমের কারণে খেলায় প্রভাব পড়ে স্মিথের

টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না অস্ট্রেলিয়ার তারকা ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ। তার চোখ থেকে ঘুম একেবারে উড়েই যায় বলা চলে। ঘুমের ঘাটতির প্রভাব পড়ে তার ব্যাটিংয়ে। পরিসংখ্যান বলছে, কোনো টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে স্মিথকে যতটা অতিমানবীয় দেখায়, চতুর্থ ইনিংসে তিনি ততটাই সাদামাটা।
টেস্ট ম্যাচের পাঁচ দিনে সবমিলিয়ে মাত্র পনের থেকে বিশ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকেন স্মিথ। খেলা চলাকালীন তার মস্তিস্ক থাকে খুব উত্তেজিত। তিনি থাকেন ভীষণ রোমাঞ্চিত। নিজের ব্যাটিং নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমানোর সময়টা কাটিয়ে দেন তিনি। কোন শট খেলবেন, কোন বোলারকে কীভাবে মোকাবেলা করবেন- এসব বিষয় তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
সবশেষ অ্যাশেজ সিরিজ চলাকালে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই স্পোর্টসের কাছে স্মিথ বলেছিলেন, ‘আমি ইতিবাচক সব বিষয় নিয়ে ভাবি। কে আমাকে বল করছে, আমি বলটা পিটিয়ে কোথায় পাঠাব, আমি কীভাবে খেলব, মাঠের কোন অংশ দিয়ে রান করব। নেতিবাচক চিন্তা আমার মাথায় খুব একটা আসে না। যদিও বা আসে, আমি সেসব খুব দ্রুত সরিয়ে দেই।’
কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে মনোযোগে ব্যাঘাত হওয়া স্বাভাবিক। তার সঙ্গে ক্লান্তিও জুড়ে যায়। ফলে টেস্ট ম্যাচে দিন যত গড়াতে থাকে, স্মিথের পারফরম্যান্সের মান তত নামতে থাকে।
স্মিথের ২৬টি টেস্ট সেঞ্চুরির ১৬টিই এসেছে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে। তিনি সেসময় যেন অপ্রতিরোধ্য। মাত্র ৩৯ ইনিংসে ৩ হাজার ১৮৪ রান করেছেন। গড় ৯৩.৬৪! এরপর থেকে তার গড় লক্ষণীয়ভাবে নামতে থাকে। দ্বিতীয় ইনিংসে তার সংগ্রহ ১ হাজার ৭১১ রান। ২৯ ইনিংসে তার গড় ৬৩.৬৭। সেঞ্চুরি ৬টি। টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে তার গড় ৫১.৬৮। এসময় ৩৬ ইনিংসে ব্যাট করে তিনি তুলেছেন ১ হাজার ৪৯৯ রান। সেঞ্চুরি করেছেন ৪টি।
চতুর্থ ইনিংসে একেবারে বেহাল দশা স্মিথের। পরিসংখ্যানে গড়পড়তা ব্যাটসম্যানদের চেয়েও পিছিয়ে তিনি। ২১ ইনিংসে নেই কোনো সেঞ্চুরি! মাত্র ৩০.৬৮ গড়ে তার নামের পাশে রয়েছে মোটে ৫৮৩ রান।
ঘুম যেন ঠিকঠাক হয় সেজন্য নানা ধরনের কৌশলও অবলম্বন করছেন স্মিথ। শান্ত থাকতে ঔষধ সেবন থেকে শুরু করে নিজের মোবাইল ফোনে অ্যাপ পর্যন্ত ডাউনলোড করে রেখেছেন তিনি যেখানে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শোনা যায়। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডও (সিএ) এই বিড়ম্বনা কাটাতে স্মিথের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
স্মিথকে নিয়ে বর্তমান অজি টেস্ট অধিনায়ক টিম পেইন বলেছেন, ‘স্মিথ এমনই। তবে একইসঙ্গে আমি জানি, সে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) ও অন্যান্যদের সঙ্গে কাজ করছে যেন (টেস্ট চলাকালীন) রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারে।’
পেইনের মতে, স্মিথের এই ভিন্নধর্মী ব্যাপারটা তাকে সেরাদের কাতারে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। তবে কেবল প্রথম ইনিংসের পারফরম্যান্স দিয়ে সবসময় ম্যাচ জেতা যায় না উল্লেখ করে স্মিথের কাছে থেকে ধীরে ধীরে উন্নতি প্রত্যাশা করছেন তিনি। যদিও কাজটা সহজ হবে না বলেই মনে করেন তিনি।
‘যদি আপনি ওকে জিজ্ঞেস করেন যে সে প্রথম নাকি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে চায়, তাহলে সপ্তাহের প্রতিটি দিনে সে প্রথমটা বেছে নেবে। আর এসময় তার রেকর্ডও বাকি সবার চেয়ে অনেক অনেক বেশি ভালো। রাতে ভালো ঘুমের জন্য সে নানাভাবে চেষ্টা করছে। তবে স্মিথের পরিস্থিতি বেশ জটিল হওয়ায় আমি মনে করি, এর সমাধান করাটা সহজ হবে না।’
(পরিসংখ্যান: অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের চলমান অ্যাডিলেড টেস্টের আগ পর্যন্ত)
Comments