‘আমরা ভেবেই নিয়েছিলাম ইলিয়াস কাঞ্চন আর বেঁচে নেই’

champa
অভিনেত্রী চম্পা। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

চম্পা নামেই দেশজুড়ে পরিচিত। অসম্ভব মেধাবী একজন অভিনেত্রী তিনি। পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আরও বহু পুরস্কার উঠেছে তার হাতে। প্রায় ২০০ সিনেমা করেছেন তিনি। ভারতীয় সিনেমা করেছেন ১৫টি। ভারতে জ্যোতি বসু পুরস্কার, বেঙ্গল জার্নালিস্ট অ্যাওয়ার্ড এবং টেলিসিনে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ‘তিন কন্যা’-খ্যাত অভিনেত্রী। চম্পা ডেইলি স্টারকে বলেছেন তার না বলা কিছু কথা।

“এফডিসিতে যাওয়ার স্মৃতিটা এখনো চোখে ভাসে। আসলে সিনেমা করার আগেই আমি এফডিসিতে যাতায়াত শুরু করি। আমার বড় দুই বোন সুচন্দা ও ববিতা যেহেতু আগে থেকেই সিনেমায় ছিলেন, তাই তাদের জন্যই আমারও যাওয়া হয় এফডিসি দেখতে।

আমার স্মৃতিতে ভাসে- আলো ঝলমলে এফডিসি। কী চমৎকার পরিবেশ। তখন অনেক কালারফুল ছিলো এফডিসি! কখনো কখনো সারারাত শুটিং করতেন আমার দুই বোন। আমি সারারাত জেগে শুটিং দেখতাম। ওই দৃশ্য কখনও ভুলবার নয়।

সিনেমা করতে প্রথম এফডিসিতে যাই আরও পরে। আমার প্রথম সিনেমা ‘তিন কন্যা’। সেটির জন্য যখন এফডিসিতে ঢুকলাম, সে অনুভূতি ছিলো ভিন্ন। বাসা থেকে একটি মাত্র সিনেমা করার অনুমতি পেয়েছিলাম। প্রথম দৃশ্যটার কথা মনে পড়ে। প্রথম দৃশ্যে কোনো সংলাপ ছিলো না। কেবল হেঁটে হেঁটে আসার একটি দৃশ্য ছিলো। এক টেকেই ওকে হয়েছিলো।

ওই সময়ে সিনিয়রদেরকে দেখতাম সবার সঙ্গে কী সুন্দর সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন। শুটিংয়ের ফাঁকে তারা কথা বলতেন। ওটাকে আড্ডা বলবো না। গল্পগুলোও ছিলো অভিনয় নিয়ে। পরের দৃশ্য কী হবে তা নিয়ে কথা হতো। একটি সিনেমা কী করে ভালো করা যায় তা নিয়ে সবাই কথা বলতেন। সিনিয়ররা একজন আরেকজনকে সম্মান করতেন খুব।

অভিনয় জীবনে কতো স্মৃতি আছে। ‘ভেজা চোখ’ সিনেমার কথা মনে পড়ছে। ওই সময়ে ‘ভেজা চোখ’ খুব হিট হয়েছিলো। সবাই অনেক ভালোভাবে গ্রহণ করেছিলেন সিনেমাটি। ‘ভেজা চোখ’ সিনেমার শুটিং করেছিলাম তাজমহলের সামনে, মশৌরীতে এবং আমাদের দেশে।

তাজমহলের সামনে শুটিং করতে গিয়ে খুব সমস্যা হতো। প্রচণ্ড গরম ছিলো তখন। ডাক্তার সঙ্গেই থাকতেন। একটি দৃশ্য করে এসে প্রেসার মাপা হতো। স্যালাইন খাওয়া হতো। অনেক কষ্ট করে ‘ভেজা চোখ’ সিনেমার শুটিং করি। এই সিনেমার কিছু দৃশ্য ছিলো আমাদের দেশের হিমছড়িতে। আমি নিচে আর ইলিয়াস কাঞ্চন পাহাড়ের ওপরে। হঠাৎ ইলিয়াস কাঞ্চন পাহাড় থেকে পড়ে যান। আমরা ভেবেই নিয়েছিলাম তিনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু, ওপরঅলার রহমতে তিনি বেঁচে যান। এসব কথাও মনে পড়ে।

‘বিরহ ব্যথা’ সিনেমার কথা মনে পড়ে। বঙ্কিম চন্দ্রের ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছিলো গল্পটি। ‘বিরহ ব্যথা’ সিনেমাটিও সেসময় সুপারহিট হয়েছিলো। তখন অভিনয় অতোটা বুঝতাম না। কঠিন চরিত্র ছিলো। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজটি করেছিলাম। বিক্রমপুরে এক জমিদার বাড়িতে ও আশপাশে শুটিং করেছিলাম। শুটিং করার সময় গ্রামের মানুষরা দেখতে আসতেন। আলাদা সম্মান করতেন। তারপর কষ্ট করে কাজটি শেষ করলাম এবং সিনেমাটি মুক্তি পেলো। এরপর তো গল্পটা অন্যদিকে গেলো। কেননা, সিনেমাটি ব্যবসাসফল ছিলো।

জনপ্রিয়তা এক সময় বেড়ে যায়। একটির পর একটি সিনেমা করে চললাম। মনে আছে, সেসময় ঢাকার বাইরে শুটিং করতে গেলেই অসম্ভব ভিড় হতো। গ্রামের পর গ্রাম থেকে মানুষ দেখতে আসতেন। অনেকবার এমন হয়েছে- ভিড়ের কারণে শুটিং স্পটে পুলিশ আনতে হয়েছে। পুলিশ আনার পরও কাজ হয়নি। শেষে শুটিং বন্ধ করে চলে আসতে হয়েছে। এসব ঘটনা এখনো চোখে ভাসে অবসর সময়ে।

খুব করে মনে পড়ে প্রথম নায়িকা হওয়ার সিনেমাটির কথা। ‘নিষ্পাপ’ সিনেমায় প্রথম নায়িকা হই আমি। নায়ক আলমগীরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। এটি মুক্তির পর শুরু হয়ে যায় খুশির খবর। এতো এতো মানুষ সিনেমাটি দেখেছেন, কী আর বলবো!

নায়িকা হিসেবে আমার জার্নিটা ছিলো আনন্দের। নায়ক আলমগীর বলতেন, ‘নিষ্পাপ’ সিনেমাটি হচ্ছে তার প্রোডাকশনের সোনার হাঁস, যে শুধু সোনার ডিম দেয়। আসলে ‘নিষ্পাপ’ করার পর সিনেমার সঙ্গে লতার মতো জড়িয়ে গেলাম।

বাসা থেকে অনুমতি নিয়েছিলাম একটি সিনেমার। কিন্তু, ‘নিষ্পাপ’ সিনেমার সাফল্য আমাকে সিনেমার মোহে ফেলে দেয়। তারপর আর বের হতে পারিনি। এখনো সিনেমার সঙ্গেই আছি। থাকতে চাই আরও অনেকদিন।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

13m ago