‘জাদুকরী ফসল’

নীলফামারীর দুটি উপজেলার পাঁচটি গ্রামের প্রায় ২০০ কৃষক বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।
farmer_sukumar_roy-1.jpg
ডোমার উপজেলার শালমারা গ্রামের কৃষক সুকুমার রায় তার জমিতে লাগানো আদা গাছের পরিচর্যা করছেন। ছবি: স্টার

নীলফামারীর দুটি উপজেলার পাঁচটি গ্রামের প্রায় ২০০ কৃষক বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।

নীলফামারীর কৃষকরা এখন আদাকে ‘জাদুকরী ফসল’ বলে ডাকেন।

অন্যান্য ফসল চাষ করে যারা সফলতা পাচ্ছিলেন না, তারা প্রায় পাঁচ বছর আগে কৃষক মিজানুর রহমানের দেখানো পথ অনুসরণ করে আদার চাষ শুরু করেন।

সদর উপজেলার ইটাখোলা, সিংদোই, কানিয়ালখাতা, ছাপরা এবং ডোমার উপজেলার শালমারা গ্রামে প্রায় ২০০ কৃষক এই মশলা চাষ করে তাদের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার দিক নির্দেশনায় ইটাখোলা গ্রামের মিজান আদা চাষ শুরু করেন। ৫৫ বছর বয়সী এই কৃষক বলেন, “টানা চার বছর ধান চাষ করে লোকসান হয়। আমি এতোটা অসহায় হয়ে পড়ি যে, পরিবার চালাতে জমি বিক্রি করতে হয়েছিলো। পরে কৃষি কর্মকর্তা আমাকে ফসল বদলানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।”

মিজান এখন পাকা বাড়ি, পাওয়ার টিলার এবং আবাদি জমির মালিক।

আদা চাষ থেকে কেমন আয় করা যায়, তা জানাতে গিয়ে মিজানুর বলেন, “এটি একটি জাদুকরী ফসল। কারণ এটি দারিদ্র্য দূর করতে সহায়তা করে। চাষাবাদ শুরু করতে এবং উৎপাদন খরচ অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি হলেও, এর থেকে তিনগুণ বেশি আয় করা যায়।”

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফ রাব্বানী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “মিজানুরের আগে এখানকার কৃষকরা কেবল নিজেরা ব্যবহারের জন্য অল্প পরিমাণে আদা চাষ করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেন। চলতি বছরে কৃষকরা ২ হাজার ৭৩২ একর জমিতে ১১ হাজার ৫৫ টন আদা উৎপাদন করেছেন।”

নীলফামারী ডিএইর প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান মণ্ডলের মতে, “উত্তরের জেলাগুলোর মাটি ও আবহাওয়া আদা জাতীয় ফসলের জন্য উপযুক্ত।”

তিনি বলেন, “আদা মাটির নিচে বেড়ে ওঠে। এটি এমন এক স্তরে বড় হয়, যেখানে পানি জমা হতে পারে না। নীলফামারীতে উৎপাদিত আদা সেরা মানের এবং দামী।”

নভেম্বর মাসে আদার বীজ বপন করা হয়। আদা তোলা শুরু হয় মাসের শেষের দিকে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে।

শালমারা গ্রামের কৃষক সুকুমার রায় বলেন, “আমি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে আদা চাষ করে ৪৮ মণ ফসল পেয়েছি। প্রতি মণ ৪ হাজার টাকা করে বিক্রি করে এক লাখ ৯২ হাজার টাকা পেয়েছি। আমার খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা।”

ছাপরা গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “গত বছর আমি এক বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করে ১৬ মণ ধান পেয়েছি। এগুলি প্রতি মণ ৫০০ টাকার নিচে বেচতে হয়েছিলো। তবে এ বছর একই জমিতে আদা চাষ করে এক লাখ ২২ হাজার টাকা আয় করেছি।”

স্থানীয় কৃষকদের মতে, “আদা চাষের ক্ষেত্রে একমাত্র সমস্যা হলো চোরের হাত থেকে রক্ষা করা। চোরের হাত থেকে মাঠের আদা বাঁচাতে চব্বিশ ঘণ্টা পাহারা দিতে হয়।”

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

58m ago