তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

যুগান্তকারী এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও আদালতের মর্যাদা বাড়বে: জাফরুল্লাহ চৌধুরী

স্বেচ্ছায় কিডনি দানের পথে আইনি বাধা দূর করতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন তাকে ‘যুগান্তকারী’ বলে অভিহিত করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী

স্বেচ্ছায় কিডনি দানের পথে আইনি বাধা দূর করতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন তাকে ‘যুগান্তকারী’ বলে অভিহিত করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

কিডনি ডোনেশন সম্পর্কে মতামত নেওয়ার জন্য হাইকোর্ট সাত জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে যে কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার সদস্য ছিলেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী কিডনি ডোনেশন পক্ষে আদালতে তার যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। তবে ভিন্নমত পোষণকারী চিকিৎসকরা অঙ্গদানের বিষয়টি সবার জন্য উন্মুক্ত না করার পক্ষে অভিমত দিয়েছিলেন। তাদের মতে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ অভাবের তাড়নায় অঙ্গ বেচাকেনায় মেতে উঠবে। আর জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন, টাকা বা সম্পত্তি দান করার মতো অঙ্গদান করতে চাওয়াটা মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই কেবল নিকট আত্মীয়ের মধ্যে দানের প্রক্রিয়াটি সীমাবদ্ধ না রেখে যে কোনো সুস্থ অনাত্মীয় নাগরিকের জন্য অঙ্গদান উন্মুক্ত করতে হবে। তবে এতে মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আইনে তার বিশেষ বিধান রাখতে হবে।

ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নিজের দু’টি কিডনি প্রায় বিকল। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস করতে হয়। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে গড়ে তুলেছেন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অত্যাধুনিক কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার। মূলত দরিদ্র মানুষের জন্যেই তা গড়ে তুলেছেন তিনি।

সকল সুযোগ থাকার পরও নিজে বিদেশে গিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করাননি, দেশে করতে চেয়েছেন। কিন্তু দেশের আইনি প্রতিবন্ধকতায় অসত্য কথা বলে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হতো। অসত্য তথ্য দিয়ে তিনি কারও কিডনি কিনে নিতে চাননি। দেশের আইনের পরিবর্তন চেয়েছেন।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, যুগান্তকারী এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও আদালতের মর্যাদা বাড়বে। বিচারকরা সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি জ্ঞানগর্ভ রায় দিয়েছেন আজ।

কিডনি ডোনেশনে আইনগত বাধা দুর হলে দেশের রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানেরও অগ্রগতি হবে বলে মনে করছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, “এই রায়ে জনগণের বিরাট উপকার হলো। এর ফলে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানেরও বিরাট অগ্রগতি হবে। এখন বাংলাদেশের রোগীদের ভারতে, শ্রীলঙ্কায় গিয়ে এই চিকিৎসা করাতে ৩০-৪০ লাখ টাকা, সিঙ্গাপুরে ২-৩ কোটি টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আরও বেশি খরচ করতে হচ্ছে। সুতরাং তারা এখন দেশেই অস্ত্রোপচার করাতে পারবেন। জনগণকে আর দেশের বাইরে দৌড়াতে হবে না। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কিডনি দান করতে হবে না।”

কিডনি ডোনেশন যে স্বেচ্ছায় হচ্ছে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যয়ন বোর্ড  গঠন করার আদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, “ডোনার স্বেচ্ছায় কিডনি দিচ্ছেন নাকি জালিয়াতি বা চাপ দিয়ে এটা করানো হচ্ছে সেটি আর হবে না। যখন ডোনাররা ওই বোর্ডের কাছে যাবেন, তখন তারা দেখবেন যে এখানে বেচাকেনা হচ্ছে কি না।”

আদালতের রায়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এটা বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকারের একটা স্বীকৃতি। দান করতে পারা যে আমাদের মৌলিক অধিকার তার স্বীকৃতিই পাওয়া গেল এর মাধ্যমে।”

তিনি আরও বলেন, রায়ের সঙ্গে আদালত সময় বেঁধে দিয়ে আরও একটা ভালো কাজ করেছেন। কারণ অনেক সময়ই হাইকোর্টের ভালো রায় হয় কিন্তু কার্যকর হয় না।

“এর সঙ্গে যা করা দরকার তা হলো প্রত্যেক ডোনারকে পাঁচ লাখ করে টাকা দেওয়া। তারা যে মহৎ কাজ করেছে তার স্বীকৃতি হিসেবে এটা সরকারিভাবেই দেওয়া উচিৎ। এটা ইরানে করা হয়। সেখানে ডোনারদেরকে একটা কার্ডও দেওয়া হয় যার মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারা পরবর্তীতে চিকিৎসা নিতে পারেন,” যোগ করেন এই তিনি।

সেই সঙ্গে, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম যিনি বিনা টাকায় এই আইনি লড়াই করেছেন তাকেও অভিনন্দন জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

আরও পড়ুন: স্বেচ্ছায় কিডনি দান করা যাবে: হাইকোর্ট

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago