১৬ ডিসেম্বর প্রকাশ হতে পারে রাজাকারদের তালিকা

bd govt

মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও নৃশংসতা চালানো ১১ হাজার রাজাকারের নাম প্রকাশ করতে চলেছে সরকার। এই রাজাকারেরা পাকিস্তান সরকারের বেতনভুক্ত এবং হানাদার সেনাদের সহযোগী ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৬  ডিসেম্বর দেশের ৪৯তম বিজয় দিবসে থেকে পর্যায়ক্রমে এই রাজাকারদের নাম প্রকাশ করা শুরু করতে পারে। পরবর্তীতে আল-বদর ও আল-শামসের মতো অন্যান্য সহযোগী বাহিনীর সদস্যদের নাম প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে তা সরবরাহ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকের কাছে রাজাকারের তালিকা চেয়েছিল। কিন্তু সাড়া দেন মাত্র ১০ জন। তাদের মধ্যে পাঁচ জন জানিয়েছেন, তারা তাদের জেলায় কোনো রাজাকার খুঁজে পাননি।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমরা শিগগিরই রাজাকারদের (পাকিস্তানের বেতনভুক্ত ছিল এমন) তালিকা প্রকাশ করতে শুরু করব এবং বিজয় দিবস থেকেই তা শুরু করার সম্ভাবনা আছে।”

তিনি আরও জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নাম আসায় কেউ তালিকার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না।

মন্ত্রী জানান, রাজাকারদের নাম তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। তালিকা প্রকাশের পর সরকার একটি গেজেট প্রকাশ করবে।

তিনি আরও বলেন, “পরে আমরা আলবদর, আল-শামস সদস্য এবং অন্যান্য সহযোগীদের তালিকা তৈরি করব।”

গত ৪৮ বছরে কোনো সরকারই রাজাকার, আলবদর এবং আল-শামসের মতো স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা করেনি।

এই বছরের মে মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রাজাকারদের তালিকা তৈরি করা শুরু করে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আরিফুর রাহমান বলেন, “রাজাকারদের তালিকা চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।”

জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রথম চিঠি যায় ২১ মে এবং দ্বিতীয় চিঠিটি যায় ২৮ আগস্ট।

খাগড়াছড়ি, মাগুরা, শেরপুর, গাইবান্ধা, এবং যশোরের চেলা প্রশাসক মন্ত্রণালয়কে জানান তাদের জেলাগুলিতে এরকম কোনো রাজাকার নেই। তবে, চাঁদপুরের নয়জন, মেহেরপুরের ১৬৯ জন, শরীয়তপুরের ৪৪ জন, নড়াইলের ৫০ জন এবং বাগেরহাটের ১ জনের নাম পেয়েছে মন্ত্রণালয়।

রাজাকার হিসেবে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত না করা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকদের পাঠানো নাম প্রকাশ করা হবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী এবং সচিব দুজনই।

সচিব বলেন, “আমরা এমন নাম প্রকাশ করতে চাই যা কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করে না।”

১৯৭২ সালে জানুয়ারি মাসে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সহযোগী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য একটি আইন পাস করে। সে অনুযায়ী ৩৭ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর মুক্তি পায় প্রায় ২৬ হাজার জন।

১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি সায়েম ও জেনারেল জিয়াউর রহমানের সরকার এই আইন বাতিল করেন। তখনও এই আইনে প্রায় ১১ হাজার জন কারাগারে বন্দি ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে রাজাকারদের একটি তালিকা ছিল। তবে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ মন্ত্রী পদে থাকাকালীন সময়ে অনেক দলিল হারিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক এএসএম শামসুল আরেফিন একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। যেখানে ১২ হাজার রাজাকারের নাম ছিল। তিনি বলেছিলেন যে পাকিস্তান ৫০ হাজার রাজাকার এবং ১২ থেকে ১৫ হাজার আল-বদর ও আল-শামস সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল।

তিনি আরও জানান, পাকিস্তান প্রায় ৩৫ হাজার রাজাকার নিয়োগ করেছিল। আলবদর ও আল-শামসে কতজন সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তার কোন পরিসংখ্যান নেই।

শামসুল জানান, পুলিশের নিয়োগপ্রাপ্ত রাজাকারদের বেতন দেওয়ার তালিকার ভিত্তিতে তিনি রাজাকারদের নাম প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, “আলবদর এবং আল-শামস সদস্যদের তালিকা করা কঠিন হবে, তবে অসম্ভব না। তাদের খুঁজে পেতে সরকারের উচিত একটি গবেষণা দল গঠন করা।”

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

2h ago