চেক জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের ৪.৯৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ

গ্রাহকের স্বাক্ষর নকল ও চেক জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি ৯৭ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা। এই কাজে তার স্ত্রী জড়িত বলেও জানা গেছে।

গত ১০ ডিসেম্বর অভিযুক্ত দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ফেরদৌসী জামান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বনানী শাখার একজন গ্রাহক। ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তার হিসাবে ৬.৬ কোটি টাকা জমা ছিল। দুই বছর পরে এসে জানা গেছে ওই গ্রাহকের হিসাব থেকে ৪.৯৭ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই অর্থ আত্মসাতে গ্রাহকের নকল স্বাক্ষরযুক্ত ৬০টি চেক ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাংকটির বনানী শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক জাহিদ সারোয়ার গ্রাহকের স্বাক্ষর নকল করে এই টাকা উত্তোলন করেছেন।

এ ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক শফি উল্লাহ ব্যাংকটির কর্মকর্তা জাহিদ ও তার স্ত্রী ফারহানা হাবিবের বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং অর্থ পাচারের মামলা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কার্যালয় ডেইলি স্টারকে জানায়, এই দম্পতি গত বছরের ১৯ অক্টোবর এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে পালিয়ে যান।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল ফেরদৌসী এবং মাইশা আব্দুল্লাহ এমটিবি’র বনানী শাখায় একটি যৌথ হিসাব খোলেন। ওই বছরের ২ এবং ৮ মে তারা হিসাবটিতে ৬.৫ কোটি টাকা জমা দেন। ৬ অক্টোবর ফেরদৌসী সেখানে আরও একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন এবং যৌথ হিসাবের পুরো টাকা লভ্যাংশসহ নতুন হিসাবে জমা করেন। দুটি হিসাবই ব্যাংকটির নিয়ম মেনেই করা হয় এবং তা জাহিদের মাধ্যমেই করা হয়।

একইদিনে, ফেরদৌসী নতুন একটি চেক বই ইস্যু করার জন্য আবেদন করেন। অক্টোবরের ২৫ তারিখে তা ইস্যু করে তাকে দেওয়া হয় বলে দেখানো হয়। তবে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওই চেক বইটি ফেরদৌসীকে দেওয়া হয়নি।

এরপর, ২০১৭ সালের এপ্রিলে আরও একটি চেক বই ইস্যু করা হয়। ওই চেক বইটি ভুয়া আবেদনের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়ে বলে জানিয়েছে দুদক।

এই সময়ে ইশতিয়াক হোসেন তালুকদার নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ফেরদৌসী একটি চেক বই নেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। ফেরদৌসি এই চেক বইটি হাতে পান।

একই বছরের ২৩ আগস্ট ব্যাংকটিতে আরও একটি চেক বইয়ের জন্য আবেদন করা হয়। যা আবেদনের দুই দিন পরেই ইস্যু করা হয়। এই আবেদনের স্বাক্ষর এবং স্লিপ নকল ছিল।

এছাড়া গত বছরের ২৮ মার্চ আবারও একটি চেক বইয়ের জন্য আবেদন করা হয়। এই সময় জাহিদ, ব্যাংকটির সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট ভুয়া অনুমোদনপত্র তৈরি করেনে। যা তারা ফেরদৌসীর অনুমোদনে করা হয়েছে জানিয়ে তার পক্ষে চেক বই গ্রহণ করেন।

জানা গেছে, প্রতিটি চেক বইয়ে ২৫টি পাতা থেকে। যার মধ্যে ফেরদৌসী ১.৪৬ কোটি টাকা উত্তোলনে মাত্র ১৪টি পাতা ব্যবহার করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেরদৌসীর স্বাক্ষর নকল ও চেক জালিয়াতি করে জাহিদ ৬০টি চেকের মাধ্যমে ৪.৯৭ কোটি টাকা উত্তোলন করেন। এই টাকার মধ্যে তিনি তার স্ত্রীর হিসাবে ২.২৪ কোটি জমা করেন।

সাধারণত প্রতিটি লেনদেনের পরে গ্রাহকের মোবাইলে ব্যাংক থেকে এসএমএস পাঠানো হয়। তবে ফেরদৌসীর হিসাব খোলার ২৫ দিন পর তার মোবাইল নাম্বারটি পরিবর্তন করে ব্যাংকটির ডেটাবেসে নিজের নাম্বার দেন জাহিদ।

দুদকের অনুসন্ধানের জানা গেছে, ফেরদৌসীর হিসাবে যে মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে লেনদেন করা হয়েছে তা জাহিদের এনআইডি দিয়ে নিবন্ধিত।

এ প্রসঙ্গে এমটিবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এই ঘটনার যারা যারা জড়িয়ে রয়েছে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

10h ago