‘এ জায়গায় না এলে আমার অপূর্ণতা থেকে যায়’

সাধারণ পরিবারের ছেলে শেখ মতিউর রহমান। নিজের জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্যে তিনি প্রতিদিন সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে মাছ কিনে এনে মহল্লায়-মহল্লায় ফেরি করে বিক্রি করেন। ছোটবেলা থেকেই মতিউরের স্বপ্ন ছিলো- দেশের জন্যে কিছু করার।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার অধিবাসী মতিউর থাকেন মিরপুরের মাজার রোডে। দুই মেয়ে এক ছেলের বাবা মতিউর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমার মতো সাধারণ পরিবারের ছেলে ইচ্ছা করলেই দেশের জন্যে কিছু করতে পারে না। অনেক চিন্তা করে দেখলাম- যাই করতে চাই তাতেই টাকা-পয়সার দরকার। অবশেষে চিন্তা করে দেখলাম- অনেক বছর থেকে মিরপুরে থাকি। এখানকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আসি। এখানে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্যারদের সমাধি এখানে। … এখন যদি উনাদের আমি একটু সম্মান করতে পারি তাহলে আমার মনের ইচ্ছা পূরণ হবে।”

মতিউর জানান, তিনি সেখানে যখন কাজ করতে আসেন তখন জায়গাটি অনেক অপরিষ্কার ছিলো। লোকজন এসে আড্ডা দিতো। অনেক অনিয়ম চোখে পড়তো মতিউরের। ২০ আগস্ট বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান মৃত্যুবার্ষিকী। আজ থেকে ছয় বছর আগে মাছবিক্রেতা মতিউর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে এসে দেখেন- বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সুন্দর জাঁকজমক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

মতিউরের ভাষায়, “অনুষ্ঠানে একজনকে বলি- স্যার, আপনারা এতো সুন্দর আয়োজন করেছেন। এই জায়গাটি সারাবছর অপরিষ্কার থাকে।… তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আমি আবার বললাম, আপনারা যদি অনুমতি দেন আমি পরিচ্ছন্নতার কাজ স্বেচ্ছায় করবো। কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না। তিনি আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। উনি আমাকে এক শুক্রবারে আসতে বললেন। আমি সেই মোতাবেক আসলাম। তিনি আমাকে অনেকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারা আমার নাম-পরিচয় জানার পর আমাকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে নিলেন।”

“যতোই দিন যাচ্ছে ততই দেখি এই জায়গার প্রতি আমার ভালোবাসা সৃষ্টি হচ্ছে। এখন আমি ঝড়-বৃষ্টি মানি না। এ জায়গায় না এলে আমার অপূর্ণতা থেকে যায়। অনেক সময় মাছ বিক্রি শেষ করতে অনেক বেলা হয়ে যায়। এখন শীতকালে বেলা ছোট। তারপরও আমি দুপুরের খাওয়া শেষ করেই এখানে চলে আসি,” যোগ করেন তিনি।

আপনার প্রত্যাশা কী?- জানতে চাওয়া হলে মতিউর বলেন, “আমার প্রথম চাওয়া হলো- আমরা যেনো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেই। আমার দ্বিতীয় চাওয়া হলো: আমি যখন এখানে কাজ করতে আসি তখন অনেকেই আমাকে গ্রহণ করে নিতে চান না। তাই আমাকে এখানে কাজ করার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হোক যাতে কেউ যেনো আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে বের করে দিতে না পারেন।”

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago