রানার তোপের পর চাপে পড়া দলকে জিতিয়ে নায়ক সোহান

লেন্ডন সিমন্স ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সহজ লক্ষ্যেও হেরে যাওয়ার সব সম্ভাবনা তখন প্রস্তুত। মনে হচ্ছিল দিশেহারা সিলেট থান্ডারকে বোধহয় প্রথম জয় উপহারই দিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ভীষণ চাপে পড়া দলকে তখনই খাদের কিনার থেকে উদ্ধারে নামেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। বিশাল সব ছক্কায় কার্যকর ইনিংসে পাইয়ে দেন দারুণ এক জয়।
Nurul Hasan Sohan
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

লেন্ডন সিমন্স ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সহজ লক্ষ্যেও হেরে যাওয়ার সব সম্ভাবনা তখন প্রস্তুত। মনে হচ্ছিল দিশেহারা সিলেট থান্ডারকে বোধহয় প্রথম জয় উপহারই দিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ভীষণ চাপে পড়া দলকে তখনই খাদের কিনার থেকে উদ্ধারে নামেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। বিশাল সব ছক্কায় কার্যকর ইনিংসে পাইয়ে দেন দারুণ এক জয়।  

চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মাত্র  মেহেদী হাসান রানার তোপে ১২৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল সিলেট থান্ডার। ওই রান নিতেই জান যায় অবস্থা চট্টগ্রামের। সিমন্সের ৪৪ রানের পর সোহানের  ২৪ বলে ৩৭ রানে ২ ওভার আগে জিতেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।

সপ্তম উইকেটে ২৬ বলে ৪৫ রানের জুটিতে সোহানকে সঙ্গ দেওয়া কেসরিক উইলিয়ামস ছক্কা মেরে শেষ করে দেন খেলা।

আগের ম্যাচে যে উইকেটে ১৯০ তাড়া করতে দেখা গেছে, সেখানে ১৩০ তুড়িতে উড়ে যাওয়ার রান। পুরো টুর্নামেন্টে নেতিয়ে পড়া সিলেট থান্ডারকে দমিয়ে অনায়াসেই তা তুলে ফেলার কথা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। কিন্তু তা আর হলো কই।

বাজে শুরু, ভুল শটে তালগোল পাকানোর দিকে কাজটা ক্রমেই কঠিন করে ফেলে চট্টগ্রাম। ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন লেন্ডল সিমন্স। টপ অর্ডারে দায়িত্ব নিয়েছেন কেবল তিনিই। আরেক প্রান্তে অন্য কোন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান সে দায় নিতে পারেননি। 

ওপেনার আবিস্কা ফার্নেন্দোকে দিয়েই শুরু। ক্রিসমার সান্টোকির বলে স্টাম্প খোয়ান তিনি। ছন্দে থাকা ইমরুল কায়েস ফেরেন ছক্কা মারার নেশায়। সান্টকির বলেই লাইনে ধরা পড়েন ইমরুল। ইবাদত হোসেনের গতির কাছে হার মানেন মাহমুদউল্লাহ। সোজা বল আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড চ্যালেঞ্জার্স কাপ্তান।

ছন্দে থাকা আরেক ব্যাটসম্যান চ্যাডউইক ওয়ালটনও ভুল সময়ে মারতে গিয়ে করেন গড়বড়। মিডিয়াম পেসার দেলোয়ার হোসেনের নীরিহ বলে ক্যাচ উঠিয়ে ফেরেন তিনি।

৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকপুকানি চাঁটগার ফ্রেঞ্চাইজির। ভরসা ছিলেন কেবল সিমন্স। ভরসা রাখার মতই খেলছিলেন। কিন্তু অদ্ভুতুড়ে এক রান আউটে যবানিকাপাত তার।

দেলোয়ার হোসেনের বলে মিড অফে ঠেলে সঙ্গীর নিষেধ স্বত্ত্বেও এক রান নিতে গেলেন। অনেকটা আত্মহুতি দিয়ে ফেরেন ৩৭ বলে ৪৪ রান করে।

জিততে তখন ৪৩ বলে ৪৬ রান চাই চট্টগ্রামের। টি-টোয়েন্টির প্রেক্ষাপটে খুব সহজ কাজ। কিন্তু ক্রমাগত উইকেট হারাতে থাকা দলের জন্য পরিস্থিতি তখন ভীষণ চাপের। সেই চাপেই শূন্য রানে কাটা মুক্তার আলি।

স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে নুরুল হাসান সোহান। দেলোয়ার হোসেনকে বিশাল দুই ছক্কায় উড়িয়ে নিজের উপস্থিতির জানান দেননি। ১১০ মিটারের এক ছক্কা তো টুর্নামেন্টরই সবচেয়ে বড়। পরে ইবাদতকেও সোহান মেরেছেন আরেক ছয়।

সোহানের স্বচ্ছন্দ ভাব আরও বেড়ে যায় কেসরিক উইলিয়ামসের দারুণ সঙ্গত। আর কোন বিপর্যয় নয়, তারা দুজনেই কাজটা সেরে আসেন।

এর আগে টস হেরে সিলেটের ইনিংস যেন বিরক্তির আরেক নাম। মেডেন দিয়ে শুরু। আন্দ্রে ফ্লেচার ডানা মেলার চেষ্টা করলেন, কিন্তু থিতু হয়ে নিলেন বিদায়। এরপর মেহেদী হাসান রানার ছোবল, তার তোপে এল ডাবল উইকেট মেডেনও। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা সিলেট থান্ডারে দশা এদিনও বদলালো না। সিলেট ধসিয়ে চার উইকেট নিয়ে বরং উড়লেন বাঁহাতি পেসার রানা।

নেতৃত্বের ঘাটতি, পরিকল্পনার অভাব, কম্বিনেশনে তালগোল পাকানো। সব মিলিয়ে আত্মবিশ্বাসহীন দিশেহারা সিলেট অর্ধেক ইনিংস পেরুতেই যেন হাল ছেড়ে দেওয়া পথিক।

অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেনও এদিন আর পথ দেখাতে পারেননি। চেষ্টা চালিয়ে ৩০ রানের একটা ইনিংস খেলেছেন। তাতে কেবল তিন অঙ্কই স্পর্শ করা হয়েছে সিলেটের। তবে বোলারদের নৈপুণ্য, চট্টগ্রামের ব্যাটসম্যানদের বাজে দিন ওই রান নিয়েই লড়াই জমিয়ে ফেলেছিল তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

সিলেট থান্ডার: ২০ ওভারে ১২৯/৮ (রনি ২, ফ্লেচার ৩৮, শফিকুল্লাহ ৬, মিঠুন ১৫, চার্লস ৩ , মোসাদ্দেক ৩০ , নাঈম ১১, দেলওয়ার ৭*, সান্টোকি ৯, নাজমুল ০*; নাসুম ০/১৭, রুবেল ২/২৮ , রানা ৪/২৩, মুক্তার ১/২৬ , উইলিয়ামস ১/৩১ )

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৮ ওভারে ১৩০/৬ (সিমন্স ৪৪ , ফার্নেন্দো ৫ , ইমরুল  ৬, মাহমুদউল্লাহ ২, ওয়ালটন ৯, নুরুল ৩৭*, মুক্তার ০, উইলিয়ামস ১৮  ; নাজমুল  ০/৩৪, সান্টোকি ৩/১৩, ইবাদত ১/২৮, দেলোয়ার ১/৩১, নাঈম ০/১৮  )

ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৪ উইকেটে জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago