অশান্ত ভারত

ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে চলছে তীব্র বিক্ষোভ, জ্বালাও-পোড়াও। দেশটির কয়েকটি রাজ্যে বাস-ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিল্লির রাস্তা অবরোধ করে পুলিশের সঙ্গে সময়ে সময়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
India-Protests.jpg
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, দিল্লির সেলামপুর এলাকায় পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল উড়ে যাচ্ছে বিক্ষোভাকারীদের দিকে। ছবি: রয়টার্স

ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে চলছে তীব্র বিক্ষোভ, জ্বালাও-পোড়াও। দেশটির কয়েকটি রাজ্যে বাস-ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিল্লির রাস্তা অবরোধ করে পুলিশের সঙ্গে সময়ে সময়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

বেশ কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে অন্য রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বাইরেও।

আসাম, মেঘালয়, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ুসহ প্রায় গোটা ভারতের ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন থামাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। চলমান বিক্ষোভে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে, গ্রেপ্তার করেও আন্দোলনকারীদের দমাতে পারছে না পুলিশ।

এরইমধ্যে আইনটির বৈধতা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ২২ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

গতকাল বিকাল থেকে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লির উত্তর-পূর্ব জেলায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। সেখানে যেকোনো সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ছয়জনকে গ্রেপ্তার এবং কমপক্ষে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রতিবাদকারীরা এই আইনকে মুসলিমবিরোধী বলে উল্লেখ করে আসলেও, বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে উল্টো কথা। বিজেপি বারবারই বলছে, এই আইন ভারতের মুসলমানদের কোনো ক্ষতির কারণ হবে না।

পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হিন্দুদের সেদেশে নাগরিকত্ব দেওয়াকে অনেকেই দেখছেন মোদি সরকারের ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ তৈরির নীলনকশা হিসেবে। ভারত সাংবিধানিকভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হওয়ায়, বিজেপির এমন সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলছেন প্রতিবাদকারীরা।

নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারত জুড়ে চলমান আন্দোলন বিজেপি সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি তাদের।

ভারত জুড়ে চলা বিক্ষোভের ষষ্ঠ দিনেও কয়েক হাজার মানুষ মিছিল করেছেন পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা এবং তামিলনাড়ুতে। চলমান আন্দোলনে এরইমধ্যে ছয়জন মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

আমাদের নয়াদিল্লি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেখে কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী গতকাল রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করেছেন। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে নতুন নাগরিকত্ব আইন বাতিলের অনুরোধ জানান।

এখনই কোনো ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে জানালে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ জানান, তিনি এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে কলকাতার রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। মমতা ছাড়াও আরও অন্তত চার অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাদের রাজ্যে এই নাগরিকত্ব আইনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

ভারতের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এই আইন দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।”

আসামে নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় হওয়া প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন অন্তত চারজন।

দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গত সোমবারে জানান, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত দুইশ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে পুলিশ বলছে আহতের সংখ্যা ৩৯ জন। এসময় ৩০ জন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলেও দাবি তাদের।

দিল্লির এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, এমনকি দেশের বাইরেও। অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, ইয়েল এবং এমআইটির মতো আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ভারতীয় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়ে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago