বোলিং না করিয়ে পেসারদের উন্নতি করাবেন কীভাবে, প্রশ্ন আমিরের
মোহাম্মদ আমির বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পরিচিত মুখ। ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তার। পরবর্তীতে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া এই বাঁহাতি পেসার আবার ক্রিকেটে ফেরেন ২০১৬ সালে। ততদিনে খেলার অনেক বৈশিষ্ট্যই গিয়েছে পাল্টে। ক্রিকেটের পরিবর্তিত ঘরানার সঙ্গে কীভাবে নিজেকে মানিয়ে নিলেন এবং সফলতা পেতে নতুন করে ভাণ্ডারে কী কী অস্ত্র যোগ করলেন সেসব দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বলেছেন আমির। টেস্টে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের দুর্দশা নিয়ে নিজের ভাবনাও জানিয়েছেন খুলনা টাইগার্সের এই ২৭ বছর বয়সী তারকা।
একজন তরুণ গতিময় বোলার হিসেবে আপনি শুরু করেছিলেন। এখন আপনি অনেক পরিপক্ব। সেই সময়ের সঙ্গে আপনার বর্তমান মানসিকতার কী কী ফারাক দেখতে পান?
আমির: যখন ২০০৯ সালে আমি শুরু করেছিলাম, তখন ক্রিকেট অন্য রকম ছিল। এখনকার তুলনায় খেলাটা বেশ মন্থর ছিল। তখন বোলারদের উপযোগী কন্ডিশন ছিল। কিন্তু এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে (কন্ডিশন) ব্যাটিং-বান্ধব। ক্রিকেট এখন বোলারদের জন্য অনেক বেশি কঠিন। আমি মনে করি, একজন বোলারকে টিকে থাকতে হলে এখন অনেক নতুন নতুন বিষয় শিখতে হয়। সাদা বলের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কেবল আপনার ভাণ্ডারে যা আছে তার ওপর নির্ভর করতে পারবেন না। এখন ওয়ানডেতে দুই পাশ থেকে দুটি বল ব্যবহার করা হয়। ফলে বল পুরনো হয়ে যায় না। এটা ব্যাটসম্যানদের কাজ সহজ করে দেয়। রিভার্স (সুইং) হয় না, (পিচে) স্লোয়ার গ্রিপ করে না। তাই বৈচিত্র্য থাকতে হবে...সাদা বলের ক্রিকেট এখন অনেক কঠিন (বোলারদের জন্য)।
এ ধরনের ব্যাটিং-বান্ধব পিচকে আপনি কীভাবে মোকাবিলা করেন?
আমির: এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমি আমার পরিকল্পনাকে সহজ করে ফেলি। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে আপনাকে জানতে হবে আপনার শক্তির জায়গা কোনগুলো। যেমন- আমি যখন ডেথ ওভারে বল করব, তখন আমাকে জানতে হবে উইকেটের কন্ডিশন এবং চাহিদা কেমন। যদি ভেবে রাখি যে আমি দুইটা বা তিনটা ইয়র্কার করব, তাহলে সেই পরিকল্পনায় আমাকে অটল থাকতে হবে। যখন আপনি আপনার শক্তির জায়গাগুলোতে দৃঢ়তা দেখাতে পারবেন, তখন অনেক চাপ হালকা হয়ে যাবে।
এমন কি কখনো হয়েছে যে কোনো ম্যাচে প্রচুর মার খেলেন এবং কী করবেন বুঝতে না পেরে আপনার অসহায় লেগেছে?
আমির: চাপের মধ্যে কখনো কখনো এরকম ঘটে। শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে যখন আরেক প্রান্তে অন্য বোলাররা বোলিং করে তখনই আমি ভেবে ফেলি পরের ওভারে আমি কী কী করব। কিন্তু যদি আপনি ওভার চলাকালীন এসব ভাবতে যান, আপনি গভীর দুশ্চিন্তায় পড়ে যাবেন। যখন আমি বোলিং করছি না, তখনই আমি কী করব তা ভাবার চেষ্টা করে থাকি। আর শেষ কথা হলো, আমি জানি পরের ওভার করার জন্য বল হাতে পেলে আমি কী করব।
বোলিংয়ে বৈচিত্র্য থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ, এ বিষয়টা কবে অনুধাবন করলেন?
আমির: ২০১৬ সালে ক্রিকেটে ফেরার পর এটা আমি বুঝতে পারি। কারণ ততদিনে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খুবই জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে। এখন অনেক বেশি রান হয়ে থাকে খেলায়। তাই ফেরার সময়ে আমার চিন্তা ছিল আমাকে নতুন কিছু শিখতে হবে। এটা স্লোয়ার হতে পারে, ওয়াইড ইয়র্কার হতে পারে কিংবা স্লোয়ার ইয়র্কার হতে পারে। বর্তমান সময়ে আপনি যদি অনুমেয় বোলার হয়ে থাকেন, তাহলে প্রতি ওভারে ১০ থেকে ১২ রান আপনি খরচ করবেন। কেবল বৈচিত্র্য থাকলেই আপনি নিরাপদ থাকবেন। (ওয়াসিম) আকরাম ভাই যেমনটা বলে থাকেন, তিনি এখনও ক্রিকেট শিখছেন। যদি লম্বা সময় ধরে ক্রিকেটে টিকে থাকতে হয় তাহলে নিয়মিতভাবে নতুন নতুন স্কিল অর্জন করতে হবে।
চলতি বিপিএলে স্থানীয় তরুণ কোনো পেসার আপনার নজর কেড়েছে?
আমির: হ্যাঁ, একজন আছে। সিলেটের (থান্ডার) ইবাদত (হোসেন)। আমাদের দলেও আছে শহিদুল (ইসলাম)। তার স্কিল খুব ভালো। সে খুব আঁটসাঁট লেংথে বল করে এবং ভালো স্লোয়ার করে। (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের) মেহেদী (হাসান) রানাও আছে। আগের দিন (বুধবার) সে দারুণ খেলেছে।
প্রায়শই এটা বলা হয়ে থাকে যে, ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণে খেলার জন্য গতিময় বোলার তৈরির সংস্কৃতি বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি। এই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
আমির: কিছুদিন আগে আমি এক জনের সঙ্গে কথা বলছিলাম এই বিষয়টি নিয়ে। আমাকে বলা হলো যে (কন্ডিশনের কারণে) বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির চার দিনের ম্যাচের শুরুর দিন থেকেই হাঁটুর উপরে বল ওঠে না। এর অর্থ দাঁড়ায়, গতিময় বোলাররা খুব বেশি বল করেনও না। যদি বোলাররা লম্বা স্পেলে বল না করে তাহলে তো উন্নতি করতে পারবে না। এমন উইকেট বানাতে হবে যেন এক জন পেসার দিনে ১২ থেকে ১৪ ওভার বোলিং করতে পারে। আমাকে বলা হয়েছে, এখানে ইনিংসের পঞ্চম ওভার থেকে স্পিনাররা আক্রমণে আসে। যদি আপনি পেসারদের বোলিংই না করান, তাহলে তাদের উন্নতি করাবেন কীভাবে?
Comments