পাগলাটে রান উৎসবের ম্যাচেও অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে ব্যবধান গড়লেন রানা

Mehedi Hasan Rana
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ইমরুল কায়েস ঝড় তুললেন, খুনে ব্যাটিংয়ে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স বোলারদের তছনছ করলেন চ্যাডউইক ওয়ালটন। আড়াইশর কাছাকাছি পৌঁছে গেল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ওই রান তাড়াও এক সময় সম্ভব মনে হচ্ছিল ডেভিড মালানের বিস্ফোরণে। তবু তারা জিততে পারল না একজনের কারণেই। চার-ছক্কার বানে ভেসে যাওয়া ম্যাচেও তিনি যে থাকলেন আলাদা। আগের দুই ম্যাচের দারুণ বোলিংও ছাপিয়ে অবিশ্বাস্য হয়ে উঠলেন বাঁহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানা। তার স্পেল ঈর্ষা জাগাবে দুনিয়ার যেকোনো বোলারকে।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) আগে ব্যাট করে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স করল ২৩৮ রান। জবাবে  ২২২  রান পর্যন্ত গেল কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। দুদল মিলিয়ে এলো ৪৬০ রান! দুই ইনিংস মিলিয়ে বিপিএলে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড ভাঙল এক ম্যাচ পরই।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বোলারদের জন্য এমন দুঃস্বপ্নের রাতে চট্টগ্রাম ১৬ রানে জিতল আসলে একজন বোলারের নৈপুণ্যেই। মেহেদী রানা চার ওভারে এক মেডেনসহ ২৮ রানে নিলেন ৪ উইকেট। এর মধ্যে ২২ রানই তিনি দিয়েছেন নিজের শেষ ওভারে। অর্থাৎ প্রথম তিন ওভার শেষে রানের বোলিং ফিগার ছিল ৩-১-৬-৪!

চট্টগ্রামের কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু আগের ম্যাচে ৪২৬ রান হতে দেখেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি বলছিলেন, উইকেটে রান আছে আরও বেশি। সেটাই দেখা গেল যেন এদিন। দুদলের ব্যাটসম্যানের বৃষ্টির মতো চার-ছক্কা মারতে দেখে মনে হচ্ছিল, আসলেই বোধহয় এখানে কোনো কিছুই অসম্ভব না।

২৩৯ রানের পাহাড় ডিঙাতে নেমেই মারতে শুরু করেছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু রানাকে মারতে পারলেন না। গতির তারতম্যে সৌম্যকে বোকা বানিয়ে তার উইকেট নেওয়া শুরু। ভানুকা রাজাপাকশে এগিয়ে এসে রানার লেট স্যুয়িং মিস করে বোল্ড। সাব্বির রহমান আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিও।

৩২ রানে নেই ৩ উইকেট। দুই ওভার বল করে মাত্র ১ রান খরচ করে ৩ উইকেট নিয়ে কুমিল্লার টপ অর্ডার ধ্বংস করে দেন রানা।

এরপর আক্রমণ থেকে সরলেন রানা। ক্রিজে এসে তাণ্ডব চালাতে শুরু করলেন মালান। প্রথমে ইয়াসির আলি, পরে দাসুন শানাকাকে পাশে নিয়ে চালালেন ঝড়। প্রায় অসম্ভব সমীকরণ তার ব্যাটেই মনে হচ্ছিল মিলেই যাবে। কিন্তু রানা তা হতে দেবেন কেন!

পরের স্পেলে ফিরে ম্যাচের মোড় ঘোরানো উইকেটও এই বাঁহাতির পাওয়া। ৩৮ বলে ৭ আর ৫ ছক্কায় ৮৪ রান করা মালান রানাকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন মিড উইকেট। পুরো ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের মতিগতি পড়ে জায়গায় বল ফেলেছেন রানা। লেন্থের বৈচিত্র্যর সঙ্গে মিলিয়েছেন গতির তারতম্য।

২১ বলে ৩ চার ও ৩ ছয়ে ৩৭ করে মুক্তার আলির বলে খানিক পর আউট হন শানাকা। ম্যাচের ফল নিয়েও তখন দোলাচল অনেকটা উবে গেছে।

তবে নিজের শেষ ওভারে এসে আবু হায়দার রনির হাতে মার খেয়েছেন রানা। ১০ বলে ২৮ করা রনি শেষ ওভারের জন্য আবার জমিয়ে তুলেছিলেন রোমাঞ্চ। তবে ৬ বলে ২৫ রানের কঠিন অঙ্ক আর মেলানো হয়নি তাদের।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিং পাওয়া চ্যালেঞ্জার্সের শুরুটা গড়পড়তা। লেন্ডল সিমন্স ফেরেন ৭ বলে ১০ করে। দ্বিতীয় উইকেটেই হিসাব বদলে দিতে থাকেন আভিস্কা ফার্নান্দো আর ইমরুল। ৮৫ রানের জুটিতে ইমরুলই ছিলেন অগ্রণী।

২৭ বলে ৪৮ করে ফার্নান্দো ফেরার পর আরও কিছক্ষণ চালিয়েছেন ইমরুল। ৪১ বলে ৬২ করে থামেন দারুণ ছন্দে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

তবে তখনো প্রায় আড়াইশর কাছে চলে যাবে চট্টগ্রাম, তার ইঙ্গিত ছিল না। শেষ ৫ ওভারে রান হলো টার্নেডো গতিতে। এলো ৯২ রান। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ওয়ালটন ২৭ বলে ৭১ আর নুরুল হাসান ১৫ বলে ২৯ রানের ঝড়ে দলকে নিয়ে গেলেন ২৩৮ রানে।

এত রান করার পরও পরে একদম স্বস্তিতে থাকতে পারেনি চট্টগ্রাম। রানার অবিশ্বাস্য বোলিং তাদের এনে দেয় ৬ ম্যাচে পঞ্চম জয়। দুর্বার গতিতে এগিয়ে থাকা এই দল বহাল থাকল বঙ্গবন্ধু বিপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ২৩৮/৪ (সিমন্স ১০, ফার্নান্দো ৪৮, ইমরুল ৬২, ওয়ালটন ৭১*, নাসির ৩, সোহান ২৯*; মুজিব ১/৩১, আল আমিন ০/২৭, সুমন ০/২৫, আবু হায়দার ০/৩৮, মালান ০/২৫, সৌম্য ২/৪৪, শানাকা ১/৪৭)

কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স: ২০ ওভারে ২২২/৭ (রাজাপাকসে ৬, সৌম্য ১৫, সাব্বির ৫, মালান ৮৪, ইয়াসির ২১, শানাকা ৩৭, মাহিদুল ১৩, সুমন ৮*, আবু হায়দার ২৮*; নাসুম ০/৪০, রুবেল ১/৩০, মেহেদী রানা ৪/২৮, উইলিয়ামস ১/৫১, মুক্তার ১/৫৫, নাসির ০/১৬)।

ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মেহেদী হাসান রানা।

Comments

The Daily Star  | English

Students, teachers declare 'shutdown' at JnU

JnU students have continued their blockade at the capital's Kakrail intersection for the second consecutive day

1h ago