ট্যানারির সঙ্গে স্থানান্তর হয়েছে দূষণও

সাভারের ট্যানারিগুলোর তরল বর্জ্য গত দুই বছর ধরে কেন্দ্রীয় ইটিপির মাধ্যমে শোধন করা হলেও কঠিন বর্জ্য ফেলা হচ্ছিল ধলেশ্বরী নদীতে। এতে দূষিত হচ্ছিল পানি। কিন্তু এখন বর্জ্য পোড়ানোয় চামড়ার রাসায়নিকের বিষ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসেও।

সাভারের ট্যানারিগুলোর তরল বর্জ্য গত দুই বছর ধরে কেন্দ্রীয় ইটিপির মাধ্যমে শোধন করা হলেও কঠিন বর্জ্য ফেলা হচ্ছিল ধলেশ্বরী নদীতে। এতে দূষিত হচ্ছিল পানি। কিন্তু এখন বর্জ্য পোড়ানোয় চামড়ার রাসায়নিকের বিষ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসেও।

বায়ুদূষণ ঠেকাতে সরকার ২৫ নভেম্বর এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন ধরনের আবর্জনা না পোড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও সাভারে চামড়ার বর্জ্য ফেলার ভাগাড়ে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে চামড়ার ছোট টুকরা ও ছাটাই করা উচ্ছিষ্ট।

গত দুই বছর ধরে সাভারের ট্যানারিগুলোর তরল বর্জ্য শোধন করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ইটিপির মাধ্যমে। কঠিন  বর্জ্য নদীতে ফেলায় দূষিত হচ্ছিল ধলেশ্বরী। এখন চামড়ার বর্জ্য পোড়ানোর মাধ্যমে শুরু হয়েছে বায়ুদূষণ।

গত শনিবার ট্যানারি এস্টেট পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ট্যানারির শ্রমিকরা ট্রাক ভর্তি করে চামড়ার বর্জ্য ভাগাড়ে নিয়ে এসে তাতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ফলে দূষিত হয়ে পড়েছে পুরো এলাকার বাতাস।

কারণ হিসেবে ট্যানারির কর্মীরা জানান যে তাদের এই ভাগাড়টি এর মধ্যেই ভরাট হয়ে গেছে। আবর্জনা ফেলার জায়গা না থাকায় এখন বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) এক কর্মকর্তার হয়ে নুর ইসলাম নামের একজন শ্রমিক পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করছিলেন। এই কাজের জন্য বিসিকের সেই কর্মকর্তা প্রতিদিন তাকে ৫০০ টাকা করে দেন।

নুর বলেন, “আমার কাজ হলো এখানে সঠিকভাবে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে কিনা সেটি তদারকি করা।”

প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন ট্যানারি কারখানা থেকে ২০ থেকে ৩০ ট্রাক বর্জ্য এই ভাগাড়ে ফেলা হয়। আর সেগুলোতে আগুন ধরানো হয়। গত দুই-তিন মাস ধরে এভাবেই চলছে বলে জানান নুর।

সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট প্রকল্পের পরিচালক জিতেন্দ্র নাথ পালকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়ার জায়গাটি এখনও তৈরি হয়নি তাই অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে ভাগাড়ে ফেলা হচ্ছ । কিন্তু আগুন ধরানোর কোনো নির্দেশনা তাদের দেওয়া হয়নি। বরং কেউ আগুন ধরিয়ে দিলে আমাদের কর্মচারীদের বলেছি নিভিয়ে ফেলতে।

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শেড তৈরির জন্য একটি দরপত্র দেওয়া হয়েছে।

ট্যানারিতে উৎপন্ন মোট কঠিন বর্জ্যের প্রায় চল্লিশ শতাংশ বিষাক্ত নয়। এগুলো জেলটিন তৈরিতে ব্যবহৃত হবে এবং বিষাক্ত বর্জ্যগুলি কাগজের তৈরি বোর্ডের জন্য ব্যবহার করা হবে।

ট্যানারির দূষণের কারণে এরই মধ্যে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে স্থানীয় জনগণ।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, ট্যানারির স্থানান্তর হয়ে এখানে আসার পর থেকে তারা নানান সমস্যার মুখে পড়েছেন।

“তারা এখানে আসার পর থেকে নদী দূষণ করছে। এখন তারা চামড়া পুড়িয়ে বাতাসও দূষিত করছে,” অভিযোগ করেন তিনি।

Comments