ফুকুশিমা: দুর্যোগ কাটিয়ে পর্যটন নগরী

শরতের সকালে ছবি তোলার জন্য একঝাঁক ফটোগ্রাফার ভিড় জমান জাপানের ফুকুশিমায়। দাই-ইচি তাদামিগওয়া সেতু পার হতে থাকা ট্রেনের ছবি নিতে সবার প্রস্তুতি চোখে পড়ার মতো।
11.jpg
পাহাড়ের ওপর থেকে দেখা দৃষ্টিনন্দন ফুকুশিমা নগরী। ছবি: সংগৃহীত

শরতের সকালে ছবি তোলার জন্য একঝাঁক ফটোগ্রাফার ভিড় জমান জাপানের ফুকুশিমায়। দাই-ইচি তাদামিগওয়া সেতু পার হতে থাকা ট্রেনের ছবি নিতে সবার প্রস্তুতি চোখে পড়ার মতো।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ফুকুশিমা দেখলে কে বলবে- এই জায়গা কয়েক বছর আগেও মানুষের বসবাস অযোগ্য ছিলো।

২০১১ সালে ফুকুশিমায় ঘটে যায় একটি ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়। ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে ফুকুশিমা দাই-ইচি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছয়টি চুল্লীর দুটিতে বিস্ফোরণ ঘটে।

এই বিপর্যয়ের কারণে সেখানকার এবং আশপাশের বহু মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা প্রবল পরিমাণে পৌঁছে যাওয়ার কারণে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ফুকুশিমা হয়ে ওঠে একটি পরিত্যক্ত অঞ্চল।

55.jpg
ছবি: সংগৃহীত

অথচ কয়েক বছরের মধ্যে জাপান সরকার পুনরায় এই অঞ্চলকে সাজিয়ে ফেলেছে। গড়ে তুলেছে পর্যটন স্থান হিসেবে।

সকাল নয়টা পাঁচ মিনিটে ট্রেন পৌঁছে যায় সেতুর ওপর। মুহূর্তের মধ্যেই ট্রেনটি হয়ে ওঠে এক মহাতারকা।

অপেক্ষারত ফটোগ্রাফাররা সেদিকে তাক করে রাখা ক্যামেরাগুলোতে করতে থাকেন একের পর এক ক্লিক।

তাদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় ফটোগ্রাফার কেন হোশি। হোশি এই অঞ্চলে অন্য যে কারো থেকে বেশি ছবি তুলেছেন এবং অনেকটা এককভাবেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই অঞ্চলকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে।

22.jpg
ছবি: সংগৃহীত

পাহাড়ের চূড়া থেকে তাদামি নদীর দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ দেখার স্থানটি খুঁজে পাওয়ার পর থেকে, হোশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে রাজি করান পাহাড়ে সিঁড়ি তৈরি করার জন্য। যাতে পর্যটকরা সহজে চূড়ায় পৌঁছতে পারেন। এখন তিনি চেষ্টা করছেন সেখানে একটি লিফট লাগানোর জন্য, যাতে বয়স্ক পর্যটকরা সেখানে যেতে পারেন।

হোশি একজন দোভাষীর মাধ্যমে সিএনএনকে বলেন, “নতুন শিল্পকে সবার কাছে তুলে ধরা কঠিন। সেক্ষেত্রে পর্যটন হতে পারে উন্নতির সর্বোত্তম উপায়।”

ফুকুশিমাতে যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক পর্যটক আসেন, তা জাপানে আসা আন্তর্জাতিক পর্যটকের দুই শতাংশেরও কম।

জাপানের তৃতীয় বৃহত্তম এই অঞ্চলটিতে বিশ লাখেরও কম মানুষ বসবাস করেন। ফুকুশিমার বেশিরভাগ অংশই গ্রামাঞ্চল। পর্বতমালার রাস্তা, বন, ঝরনা, নদী, জলাভূমি এবং উঁচুভূমি নিয়ে পরিবেষ্টিত এই অঞ্চল।

ফুকুশিমায় আসা বেশিরভাগ পর্যটক শরত এবং শীতে ঘরে ফিরতে চান না। যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন তাইওয়ানের বাসিন্দারা।

33.jpg
ছবি: সংগৃহীত

পারমাণবিক বিপর্যয়ের আট বছর পেরিয়ে গেলেও ফুকুশিমার পরিবেশে থাকা তেজস্ক্রিয়তা এখনও পর্যটকদের জন্য কিছুটা চিন্তার কারণ। হয়তো এজন্যই ২০১৮ সালে মাত্র এক লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেখানে রাত্রিযাপন করেছেন।

তবে যারা কিয়োটো দেখেছেন কিংবা ভিড় এড়িয়ে সৌন্দর্য দেখতে চান, তাদের জন্য বিকল্প হতে পারে ফুকুশিমা।

জাপানিদের কাছে ফুকুশিমা শরতে গাছের পাতা পরিবর্তন, ভারী তুষারপাত, সামুরাই উদ্দীপনা ধারণ করা আইজুওয়াকামাতসু, পীচ এবং পার্সিমোন গাছের জন্য বিখ্যাত।

ফুকুশিমা খুব শীঘ্রই পূর্বের অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করছে জাপান। ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকের মশাল ফুকুশিমার জে-ভিলেজ থেকেই যাত্রা শুরু করবে। জাপানের সবচেয়ে বড় ফুটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জে-ভিলেজে। এটি বিস্ফোরিত পারমানবিক কেন্দ্র থেকে প্রায় সাড়ে বারো মাইল দূরে অবস্থিত। তবে এর ভূমি অনেক উঁচুতে হবার কারণে তা সুনামি থেকে বেঁচে যায়। এই জায়গাকে বেস ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করে জাপান। এখন এটি পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

ফুকুশিমার সবচেয়ে বেশি এবং বিখ্যাত দুর্গ দেখতে পাবেন আইজুওয়াকামাতসুতে। এটি আইজু শহরে অবস্থিত এবং সামুরাই শহর হিসেবে পরিচিত।

44.jpg
ছবি: সংগৃহীত

আইজুওয়াকামাতসুর পশ্চিমে আছে ইয়ানাইজু। তাদামি নদীর তীরে একটি সুন্দর গ্রাম। এই গ্রাম ফুকুমানকোকুজোবসাতসু এনজো-জি’র জন্য বিখ্যাত। এটি শহরের উপকণ্ঠে দুর্গম পাহাড়ের ওপর নির্মিত একটি মন্দির।

কিয়োটোর মতো শহরগুলো যদি আপনি ঘুরে থাকেন, তাহলে ফুকুশিমায় খরচ করে মজা পাবেন। কারণ এখানে সব কিছুর দাম কিয়োটোর তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম।

দ্রুততম শিনকানসেন বুলেট ট্রেনে টোকিও থেকে মাত্র ৯২ মিনিটে আপনি আইজাকা ওনসেন অঞ্চলে পৌঁছে যেতে পারেন। সেখানে নয়টি বিশেষ গোসলখানা এবং নাকামুরায়ার মতো রাইকান (জাপানি হোটেল) পাবেন।

এখানে হোটেল কর্মীরা আপনাকে গর্বের সঙ্গে সামুরাইদের ব্যবহার করা প্রাচীন নিদর্শনগুলো দেখাবেন।

এখানকার মত রান্না আপনি আর কোথাও পাবেন না। ১৩০টিরও বেশি রিসোর্ট এবং ৬০টিরও বেশি পানশালার আতিথ্য সেখানে আছে আপনার অপেক্ষায়।

Comments

The Daily Star  | English

Deeper crisis feared as 219 factories shut

With 219 garment factories shut in Ashulia yesterday amid worker unrest along the industrial belts, Bangladesh’s apparel sector is feared to get into a deeper crisis if production does not resume on Saturday after the weekend.  

4h ago