‘তু হিন্দু বনেগা, না মুসলমান বনেগা…’

সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বে যখন ধর্মান্ধতা নিয়ে একধরনের উন্মাদনা চলছে তখন ইউটিউবে যে কয়টি গান সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশ থেকে খোঁজা হয়েছে তা হলো ‘তু হিন্দু বনেগা, না মুসলমান বনেগা; ইনসান কী আওলাদ হ্যায় ইনসান বনেগা।’
Mohammad Rafi
ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বে যখন ধর্মান্ধতা নিয়ে একধরনের উন্মাদনা চলছে তখন ইউটিউবে যে কয়টি গান সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশ থেকে খোঁজা হয়েছে তা হলো ‘তু হিন্দু বনেগা, না মুসলমান বনেগা; ইনসান কী আওলাদ হ্যায় ইনসান বনেগা।’

এন দত্তের সুর আর সাহির লুধিয়ানভির লেখা এই গানটি গত ৬০ বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।

‘ধুল কা ফুল’ ছবির এই গানটির শিল্পী যিনি, তিনি নিজে সারাজীবন এই গানের কথা তার হৃদয়ে ধারণ করেছেন। তাইতো এতোটা আবেগ দিয়ে গেয়েছেন যে এখনো সমান আবেদন দিয়ে মানুষের মনকে আলোড়িত করে যাচ্ছে। এই গানটির শিল্পী মুহম্মদ রফি। যিনি ‘ঈশ্বরের কণ্ঠ’কে ধারণ করতেন বলে তার সমসাময়িক শিল্পীরা বলতেন।

১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরের কাছে কোটলা সুলতান সিং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা হাজি আলি মুহম্মদের ষষ্ঠ সন্তান রফি। যদিও তার ডাকনাম ছিলো ফিকু। গ্রামে এক ফকির আসতো আর তার গান শুনেই গানের প্রেমে পড়েন রফি।

পাঞ্জাব থেকে ১৯৩৫ সালে রফির পরিবার চলে আসেন লাহোরে। ভাট্টি গেটের নূর মহল্লায় একটি স্যালুনের মালিক হন রফির বাবা। সেখানে রফির বড় ভাই মোহাম্মদ দ্বীনের বন্ধু আবদুল হামিদের অনুপ্রেরণাতে গান শিখতে শুরু করেন তিনি। ওস্তাদ আবদুল ওয়াহিদ খান, পণ্ডিত জীবন লাল মাট্টু এবং ফিরোজ নিজামির কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন রফি।

বয়স যখন মাত্র ১৩ তখনই তিনি বিখ্যাত শিল্পী কেএল সায়গলের (কুন্দনলাল সায়গল) সঙ্গে জীবনের প্রথম দর্শক-শ্রোতাদের মুখোমুখি হয়ে কনসার্টে গান পরিবেশন করেন। অল ইন্ডিয়া রেডিও লাহোরে গান গাওয়ার সুযোগ পান তিনি। এরপর, পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রে তার গান গাওয়ারও সুযোগ হয়।

১৯৪১ সালে শ্যাম সুন্দরের পরিচালনায় ‘গুল বালোচ’ ছবির মাধ্যমে সংগীতে পেশাগতভাবে অভিষেক হয়। পরের বছর বোম্বের চলচ্চিত্র ‘গাও কি গৌরি’ ছবিতে নেপথ্য গায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটান। সংগীতের টানে ১৯৪৪ সালে মুম্বাই আসেন রফি।

সংগীত জীবনের প্রথম দিকে কাজ করেছেন সংগীতপরিচালক নৌশাদের সঙ্গে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কাজ করেছেন ওপি নায়ার, শঙ্কর জয়কিষান, শচীন দেববর্মন ও রোশনের সঙ্গে।

তবে রফির সংগীতজীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ‘বৈজু বাওরা’ (১৯৫২) ছবির গান- ‘ও দুনিয়া কে রাখওয়ালে’। তারপর রেসের ঘোড়ার মতো শুধুই এগিয়ে চলা। এখনো তিনি এই উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী।

সময় গড়িয়েছে অনেক কিন্তু ‘ধুল কা ফুল’ ছবির গান ‘তু হিন্দু বনেগা, না মুসলমান বনেগা; ইনসান কী আওলাদ হ্যায় ইনসান বনেগা’ আজও প্রাসঙ্গিক বা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি প্রাসঙ্গিক।

রফি সাহেব সম্পর্কে লেখার অনেক কিছুই রয়েছে। কিন্তু আজকে শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। আজ এই গুণী শিল্পীর জন্মদিন। শুভ জন্মদিন রফি সাহেব।

Comments

The Daily Star  | English

Mob beating at DU: Six students confess involvement

Six students of Dhaka University, who were arrested in connection with killing of 35-year-old Tofazzal Hossain inside their hall on Wednesday, confessed to their involvement in the crime before a magistrate

1h ago