শীর্ষ খবর

‘কেনো নির্বাচন নিরপেক্ষ শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না,’ বললেন মাহবুব তালুকদার

“কেনো নির্বাচন নিরপেক্ষ শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না?- এ প্রশ্নের উত্তর আত্মজিজ্ঞাসার কারণেই আমাকে খুঁজতে হয়েছে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি।”
Mahbub Talukder
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। ফাইল ছবি

“কেনো নির্বাচন নিরপেক্ষ শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না?- এ প্রশ্নের উত্তর আত্মজিজ্ঞাসার কারণেই আমাকে খুঁজতে হয়েছে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি।”

আজ (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে এ মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

“এজন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হয়, তাহলে গণতন্ত্রের পদযাত্রা অবারিত করতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের তিনবছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। বাকি দু’বছর সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনকে নিয়ে রাজধানীবাসীর উৎসুক্য ও উদ্বেগ অন্তহীন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও জাতীয় নির্বাচনের মতোই এতে সমগ্র দেশবাসীর দৃষ্টি নিবন্ধ।”

তিনি মনে করেন, “অতীতে যে সব সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে, তাতে প্রথম দুটি নির্বাচন- কুমিল্লা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমাদের সফলতা ছিলো। কিন্তু, বেশিদিন ‘আপনার রূপে আপনি বিভোর’ থাকা হলো না।”

“পরবর্তী পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তিনটির বিষয়ে আমি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি এককভাবে দায়িত্ব পালন করি এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমি প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে এই তিনটি নির্বাচনের স্বরূপ সন্ধান করি। কিন্তু এই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমার কাছে মোটেই সুখকর নয়। আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিগত ওই তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।”

“ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি কোন নিরাশার কথা শোনাতে চাই না। এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও অন্যান্য সহায়ক কর্মকর্তাগণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতা অর্জন করবেন, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।”

“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেহেতু আপনারা সবাই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, সেহেতু আপনারা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতাবলে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় সকল অপশক্তিকে পরাজিত করে সাফল্যলাভ করবেন। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিতে আপনারা নিশ্চয়ই শূন্যসহিষ্ণু নীতি বা ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাবেন। এক্ষেত্রে আপনাদের শিথিলতাও সহ্য করা হবে না এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” যোগ করেন মাহবুব তালুকদার।

তিনি জানান, “ঢাকার উভয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবারই সার্বিকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ইভিএম নিয়ে অংশীজনের অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা যদি সফলকাম হতে পারি, তাহলে পরবর্তীতে সর্বক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। এজন্য ইভিএম-এ সতর্কতার সঙ্গে ভোট গ্রহণ করে ভোটারদের আস্থা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।”

মাহবুব তালুকদারের মতে, “একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজধানীবাসীকে জনপ্রতিনিধি উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমান পর্যবেক্ষণে ধারণা হয়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। সবাই অংশ নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার পথ সুগম হয় ও অনিয়মের পথ রুদ্ধ হয়। তাই এই নির্বাচনে ভোটারদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই।”

“ভোটারদের বলি, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রহরণকারীদের উপযুক্ত জবাব দিন। উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির সংকট ছিলো।” তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসবেন বলে তার বিশ্বাস।

Comments

The Daily Star  | English

How much do the poor pay for rice? At least Tk 50 a kg

Rice price in Bangladesh is rising and the rate of coarse grain has crossed Tk 50 a kilogramme nearly after a year

5h ago