চট্টগ্রাম পর্বে আলো ছড়ালেন যেসব তরুণ

file photo bpl
ছবি: সম্পাদিত

বঙ্গবন্ধু বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব শেষ হয়েছে আগের দিন মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর)। বরাবরের মতো এবারও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হয়েছে রান উৎসব। আসরের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের শীর্ষ দশটির মধ্যে নয়টিই হয়েছে এই মাঠে। বন্দরনগরীর দর্শকরা তো বটেই, ক্রিকেটপ্রেমী প্রত্যেকে পেয়েছেন টি-টোয়েন্টি সংস্করণের নিখাদ বিনোদন।

ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের তালিকাতেও চট্টগ্রাম পর্বের জয়জয়কার। আসরের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের শীর্ষ দশের আটটির দেখা মিলেছে সেখানে। বোলিংয়েও একই চিত্র। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের শীর্ষ দশের সাতটির পাশে জ্বলজ্বল করছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নাম।

তবে সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, চট্টগ্রাম পর্বে দেশি-বিদেশি তারকা ক্রিকেটারদের পাশাপাশি আলো ছড়িয়েছেন উঠতি ও উদীয়মানরা। স্থানীয় খেলোয়াড়রা দারুণ সব নৈপুণ্য দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাদের প্রায় সবাই আবার বয়সে তরুণ। ফলে বিপিএলকে ঘিরে আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে আরও অনেকখানি।

আফিফ হোসেন:

বিপিএলে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে চার ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন আফিফ। ১৩০.০৮ স্ট্রাইক রেটে রাজশাহী রয়্যালসের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রান করেছেন মোট ১৪৭। এর মধ্যে ১১৭ রানই তিনি করেছেন চট্টগ্রামে। সর্বোচ্চ ৭৬ রানের ইনিংসটি খেলেছেন আগের দিন, কুমিল্লা ওয়ারিয়ির্সের বিপক্ষে। তার ৫৩ বলের ইনিংসে ছিল ৮ চার ও ২ ছক্কা। ম্যাচজয়ী ইনিংসে তিনি ম্লান করে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ দলের ডেভিড মালানের সেঞ্চুরিকেও।

বল হাতেও কম যাননি আফিফ। ডানহাতি অফ স্পিনে ১৯.৩৩ গড়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। ওভারপ্রতি রান দেওয়াতেও যথেষ্ট কৃপণতা দেখিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে আটটি টি-টোয়েন্টি খেলা ২০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গেও তার ইকোনমি মাত্র ৭.২৫।

রাজশাহীর কোচ ওয়াইজ শাহর প্রশংসাও এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন আফিফ। সাবেক এই ইংলিশ ক্রিকেটার আফিফের কাছ থেকে চাইছেন আরও বেশি ধারাবাহিকতা। নিজের মেধাটা মাঠে খাটাতে পারলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আফিফ দারুণ সফল হবেন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

মেহেদী হাসান:

চট্টগ্রাম পর্বে নিজ দল ঢাকা প্লাটুনের প্রথম ম্যাচেও নয় নম্বরে ব্যাট করেছিলেন স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী। তবে পরের ম্যাচেই তাকে হুট করে উঠিয়ে নেওয়া হয় তিনে। তাতেই বাজিমাত! ২৯ বলে ৭ ছক্কা আর ২ চারে মেহেদী খেলেন ৫৯ রানের এক বিস্ফোরক ইনিংস। কুমিল্লার স্পিনার রবিউল ইসলাম রবির এক ওভারেই বল মাঠের বাইরে পাঠান টানা চারবার!

সেখানেই শেষ নয়। পরের ম্যাচেও আবার মেহেদী ঝলক। আগের দিন আসরে টানা দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ২৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। এবারে তার তাণ্ডবের কোনো পাল্টা জবাব খুঁজে পায়নি সিলেট থান্ডার। ২৮ বলে ৫৬ রানের ঝড়ো ইনিংসে ১৭৫ রানের লক্ষ্যকেও মামুলি বানিয়ে দেন তিনি। মারেন ৫ চার ও ৩ ছয়।

অথচ মেহেদী ভ্যালুলেস (মূল্যহীন) উইকেট ধরে নিয়ে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে পাঠানো হয়েছিল। অনেকটা বাজি ধরার মতো। জুয়াটা কাজে লেগে গেছে। তাই বলে প্রতিভাবান মেহেদীর পারফরম্যান্সকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মার তিনি। ২০১৮ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছিলেন তিনি।

আসরে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলে ৫ উইকেট শিকার করেছেন মেহেদী। যার ৩টিই চট্টগ্রামে। এই অফ স্পিনারের সেরা বোলিং নৈপুণ্য কুমিল্লার বিপক্ষে ব্যাট হাতে বিস্ফোরণ চালানোর আগে চার ওভার বল করে মাত্র ৯ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নেওয়া।

মেহেদী হাসান রানা:

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ২২ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার রানা চলমান বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। পাঁচ ম্যাচে ১৩ উইকেট দখল করেছেন তিনি। তার গড় (৯.৪৬) আর ইকোনমি (৬.৪৭) দুটিই ঈর্ষা জাগাবে যেকোনো বোলারকে। চট্টগ্রাম পর্বে তার বোলিং ফিগারগুলো এরকম ৪/২৩, ৩/২৩, ৪/২৮ ও ১/১৬। অর্থাৎ কেবল উইকেট তুলে নেওয়াতে নয়, রান নিয়ন্ত্রণে রাখাতেও তিনি দারুণ দক্ষ। ম্যাচসেরাও হয়েছেন টানা দুবার।

চট্টগ্রাম পর্বে বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের ম্যাচ হয়েছে এবার। স্বাগতিকদের ২৩৮ রানের জবাবে কুমিল্লা করেছিল ২২২ রান। মোট মিলিয়ে ৪৬০ রান! চার-ছক্কার সেই বন্যার মাঝেও মেহেদী ছিলেন আলাদা করে চোখে পড়ার মতো। চার ওভারে মাত্র ২৮ রান খরচায় সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন কুমিল্লার সেরা ব্যাটসম্যানদের। তার গতি আর মুভমেন্টের তারতম্য বুঝতে না পেরে ঘায়েল হয়েছিলেন সৌম্য সরকার-সাব্বির রহমান-ডেভিড মালানরা।

রানাকে দলের ট্রাম্প কার্ড হিসেবে উল্লেখ করেছেন তার সতীর্থ ও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজারও তাকে মনে ধরেছে। অথচ এবারের বিপিএলে খেলাই হতো না তার! মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ইমরুল মিলে অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই তাকে চট্টগ্রাম শিবিরে টেনেছিলেন। নিজেদের সিদ্ধান্তের সুফলও দেখতে পাচ্ছেন তারা।

মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ:

১৯ বছর বয়সী মুগ্ধর বিপিএল অভিষেকই হয়েছে এবারের আসরের চট্টগ্রাম পর্বে। সেখানে তিন ম্যাচ খেলে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। শেষ ম্যাচে অবশ্য বেশ খরুচে ছিলেন এই ডানহাতি পেসার। তবে উইকেটে গতির ঝড় তোলায় নজর কেড়েছেন তিনি।

বয়স কম হলেও গতিময় বোলার হিসেবে মুগ্ধর নামডাক আছে ঘরোয়া ক্রিকেটে। বিপিএলে রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে নিয়মিতভাবে ঘণ্টায় ১৩৫-১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করছেন। গেল জাতীয় লিগে বল করেছিলেন আরও জোরে, ঘণ্টায় ১৪৩ কিলোমিটারের আশেপাশে।

মুগ্ধকে বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই চেনেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা পেসার মাশরাফি। তার গতির প্রশংসা করেছেন তিনিও। সেই সঙ্গে চেয়েছেন মুগ্ধর জন্য সঠিক পরিচর্যা আর পরিকল্পনা। যাতে কেবল টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডেতে নয়, টেস্টের জন্যও তারা কার্যকর হয়ে উঠতে পারেন।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago