২০১৯-এর সালতামামি: আওয়ামী লীগ

‘দলের জন্য একটি অসাধারণ বছর ছিলো এটি’

AL logo
ছবি: সংগৃহীত

“দলের জন্য একটি অসাধারণ বছর ছিলো এটি”- ২০১৯ নিয়ে দ্য ডেইল স্টারের কাছে নিজের বক্তব্য এভাবেই ব্যক্ত করলেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ।

দেশের এই প্রাচীনতম দলটির জন্য এটি এক অর্থে সত্য। আওয়ামী লীগ পরপর তিন মেয়াদে সরকার গঠন করেছে এবং এজন্য তাদের বিরোধীপক্ষ বা বাইরের কোনো শক্তি নিয়ে খুব সমস্যায় পড়তে হয়নি।

রাজপথ থেকে শুরু করে সংসদ- সবখানেই দলটি পুরোপুরি আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে দুর্দান্ত জয় পেয়েছিলো তারা।

বছরের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনেও (সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা) জিতেছিলো আওয়ামী লীগ। সবমিলিয়ে তারা দেশের একটি ‘একক’ রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছে।

দলটি যা করতে পেরেছে তাতেই সন্তুষ্ট হওয়ার কথা ছিলো।

তবে, কিছু বিষয় নিয়ে চরম অস্বস্তিতে ছিলো তারা। যার বেশিরভাগই ছিলো অভ্যন্তরীণ সমস্যা।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এই সংগঠনের কিছু শীর্ষ নেতার অবৈধ ক্যাসিনো এবং টেন্ডার বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয় যায়। যা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে খুবই ক্ষুব্ধ করেছিলো। ফলে তিনি বেশকিছু কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন।

সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু দলে দলটির ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন যুবলীগের সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

পরে কমপক্ষে যুবলীগের পাঁচ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারা এখন দুর্নীতি এবং বিভিন্ন অনিয়মে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আছেন।

২৩ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহা. আবু কাওছারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে কোনও কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৬ নভেম্বর।

এছাড়াও, সেপ্টেম্বরে ‘কমিশন’ ও অন্যান্য বিতর্কের কারণে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। পরে দুজনকে সংগঠন থেকে বরখাস্ত করা হয়।

যখন দলের বিভিন্ন স্তরে ‘দুর্নীতি’ বৃদ্ধি পেয়েছিলো, তখনই দলের উন্নয়নে এসব সিদ্ধান্ত এসেছিলো। আর এই অচলাবস্থায় দলীয় নেতাদের একটি অংশ শহর ও গ্রামের সাধারণ মানুষকে বিরক্ত করতে ‘সফল’ হন।

দুর্নীতিবিরোধী এসব অভিযানের মাধ্যমে এসব নেতার ক্ষমতার অপব্যবহারের পরিমাণ প্রকাশ পেয়েছিলো।

১১ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পরে আওয়ামী লীগ ও শরীক দলগুলোর প্রবীণ নেতাদের বাদ দিয়েই মন্ত্রীসভা গঠন করেন শেখ হাসিনা।

নতুন মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়েন আওয়ামী নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এএমএম মুহিত, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ। এছাড়াও, শরীক দল থেকে বাদ পড়েন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান রাশেদ খান মেনন, জেএসডি প্রধান হাসানুল হক ইনু এবং জাপা (মঞ্জু) প্রধান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।

‘অনুপ্রবেশকারী’

২০১৯ সালে ‘অনুপ্রবেশকারী’ শব্দটি সম্ভবত আওয়ামী নেতারা সবচেয়ে বেশি উচ্চারণ করেছেন।

কেন্দ্রীয় কমিটি ৫ হাজার জনের একটি তালিকা করেছে, যারা ‘বিরোধী দল থেকে আওয়ামী লীগে’ এসেছে। তবে তাদের নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

মার্চে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। পরে, প্রায় ৩০ জন সংসদ সদস্য, তিন থেকে চারজন মন্ত্রী এবং তৃণমূলের ৩০০ নেতাকর্মীকে চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগ। চিহ্নিত এসব নেতারা বিদ্রোহীদের পক্ষে ছিলেন।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের উত্থানের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে চলমান দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে।

পরে ১২ জুলাই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি একটি বৈঠক ডাকে। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারের এবং তাদের সমর্থন দেওয়া নেতাদের কারণ-দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিদ্রোহীদের মধ্যে ১২৬ জন এখন উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তারা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। তবে, দল এখনও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এদিকে, দলটির দলটির ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে টানা নবম বারের মতো সভাপতি হয়েছেন শেখ হাসিনা এবং দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

এটি দলকে আরও শক্তিশালী করলেও গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং অভ্যন্তরীণ প্রশাসনকে দুর্বল করে ফেলেছে। কারণ, যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের শেখ হাসিনার দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।

এটি সত্য যে, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান দলীয় সংগঠনকে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু, দলের কমিটি গঠনে এটি তেমন প্রভাব ফেলবে না।

দল থেকে সরকারকে পৃথক করতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে থাকা নয় মন্ত্রীকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমরা সরকারকে দল থেকে আলাদা করার চেষ্টা করছি। এটিই আমাদের মূল কাজ, যা আগামী বছরে দলকে আরও শক্তিশালী করবে।”

নভেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সংবাদ সম্মেলন এবং কিছু দিবসকে কেন্দ্র করেই সীমাবদ্ধ ছিলো।

শীর্ষ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে সব জেলাতে কাউন্সিল আয়োজনের নির্দেশ দিলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিলো।

এছাড়াও, শীর্ষ নেতারা দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ফোরামে দলের সাফল্য তুলে ধরতেও ব্যস্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ায় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক মহলে তার সমর্থন জোরালো হয়েছে।

যদিও, সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। যা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সরকারকে।

এর বাইরে, গত বছরে দশটি দ্রুত গতির মেগা প্রকল্পের কয়েকটি দীর্ঘ বিরতির পর কিছুটা গতি অর্জন করেছে। যা দেশের অর্থনীতি এবং মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা জাগাচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago