আবারও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে

আবারও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গতকাল (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর কয়েকটি বাজারে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। অথচ একদিন আগেই বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছিলেন রমজান মাসের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না বাড়ানোর জন্য।
onion-final.jpg
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি পেঁয়াজের আড়ত। ছবি: আরাফাত সেতু/স্টার

আবারও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গতকাল (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর কয়েকটি বাজারে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। অথচ একদিন আগেই বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছিলেন রমজান মাসের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না বাড়ানোর জন্য।

শুধু পেঁয়াজ নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, শাকসবজি এবং মাছের দামও বেশ চড়া। বছরের শুরুতে এভাবে সবকিছুর দাম বৃদ্ধিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষদের।

গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দামে।

জানতে চাইলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

ক্রেতারা এজন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। তাদের দাবি, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।

মিরপুরের গৃহিণী নূরজাহান বেগম বলেন, “সরকার পেঁয়াজ আমদানি করেছে। এছাড়া বাজারে স্থানীয় পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে। তবুও কেনো পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, বুঝলাম না।”

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর, যাত্রাবাড়ী এবং মিরপুরের কাঁচাবাজারের ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শীতকালেও শাকসবজির দাম নাগালের বাইরে থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন এসব ক্রেতারা।

মহাখালীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আকিব জাভেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “এখন শীতকাল। সবজির দাম নাগালেই থাকার কথা। কিন্তু দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না।”

কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, শীতের সময়ে তিনি কখনও সবজির দাম বাড়তে দেখেননি।

এই খুচরা ব্যবসায়ী আরও জানান, গত বছরের জানুয়ারিতে কেজিপ্রতি আলু ১৫-১৬ টাকা, শিম ১৫-২০ টাকা এবং ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১০-১৫ টাকা দামে বিক্রি করেছিলেন। গত সপ্তাহে তিনি কেজিপ্রতি আলু ২৫ টাকা, শিম ২০ টাকা দামে বিক্রি করলেও, গতকাল কেজি প্রতি আলু ৩০ টাকা এবং শিম ৫০ টাকা দামে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি করেছেন ৪০ টাকা দামে।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি আবারও শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে মানুষকে।

পাবনার পেঁয়াজ ক্রেতা রবিউল ইসলাম রবি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত সপ্তাহে এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলেন ১০০ টাকায়। কিন্তু, এখন তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, “বিক্রেতারা প্রতি কেজি পেঁয়াজের জন্য ২০০ থেকে ২২০ টাকা দাম চাইছেন।”

উল্লেখ্য, পাবনা দেশের প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকার একটি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আজহার আলী জানান, পাবনাতে চলতি বছরে ৪৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ লাখ টন।

পাবনা সংবাদদাতা জানান, মার্চের আগে এসব পেঁয়াজ বাজারে আসবে না।

জানা গেছে, স্থানীয় জাতের পেঁয়াজ মুলকাতারের আবাদ কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হবে।

পাবনার সুজানগরের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বর্তমানে পেঁয়াজের দাম মুলকাতার সরবরাহের উপর নির্ভর করছে। কিছুদিনের মধ্যেই এই পেঁয়াজ বাজারে পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।”  

তিনি জানান, সরবরাহ কমায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি না করা হলে দাম আরও বাড়বে।

এর আগে, গত ২ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সরকার শিগগিরই দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করবে এবং রমজান শুরুর আগে দাম বাড়ানো হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিপদে খুচরা ব্যবসায়ীরা

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ক্রেতারা তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন।

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার সবজি বিক্রেতা আব্দুল গাফফার বলেন, “সবজির দাম বৃদ্ধি আমাদের ঝামেলায় ফেলছে। কারণ ক্রেতারা আমাদের বিশ্বাস করতে চান না।”

সবজি ছাড়াও গত কয়েক মাসে মশলার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দামে। অথচ ছয় মাস আগেও এর দাম ছিলে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মশলা সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ জানান, গুয়াতেমালা থেকে এলাচ আমদানি করছেন তারা।

তিনি বলেন, “সাধারণত ভারত থেকে এলাচ আমদানি করা হয়। কিন্তু, বৃষ্টির কারণে ভারতের ৭০ শতাংশ এলাচ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই ভারতও গুয়াতেমালা থেকে এলাচ আমদানি করছে। এ কারণে এলাচের দাম একটু বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের মশলার বাজার আমদানির ওপর নির্ভর করে। সম্প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে, এর প্রভাব অন্যান্য মশলার দামের ওপরও পড়তে পারে।”

Comments

The Daily Star  | English

‘Humanity must prevail’

Says UN as Israeli offensive in Gaza enters 12th month; Israeli attacks kill 61 in Gaza in 48 hours

12m ago