শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ভাসছেন জেনারেল কাশেম সোলাইমানি, কী করবে ইরান?

IRAQ-SECURITY-FUNERAL.jpg
৪ জানুয়ারি ২০১৯, ইরাকের রাজধানী বাগদাদে জেনারেল কাশেম সোলাইমানির শেষযাত্রায় যোগ দিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ছবি: রয়টার্স

জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে সম্মান জানাতে রাস্তায় নেমে আসেন ইরানের সর্বস্তরের মানুষ। তাকে সম্মান জানাতে গতকাল জুমার নামাজ শেষে রাস্তায় এসে দাঁড়ান ইরানিরা। তাদের হাতে ছিলো জেনারেল সোলাইমানির ছবি এবং তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এসময় তারা জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে একজন শহীদ হিসেবে উল্লেখ করেন।

জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এই শোক ঘোষণা করেছেন।

কুদস বাহিনীর কর্মকর্তা, আলেম সমাজ, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ইরানের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও সাধারণ মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন জাতীয় বীরের খেতাব পাওয়া কাশেম সোলাইমানি।

দেশটির রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো গতকাল থেকে কাশেম সোলাইমানির খবর প্রচার করছে এবং তার স্মরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছে। এসময় উপস্থাপকরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন এবং টিভি চ্যানেলগুলোর পর্দার কোণাতে একটি কালো স্ট্রিপ দেওয়া ছিলো।

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান আইআরআইবিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন কুদস বাহিনীর মুখপাত্র রমযান শরীফ। সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি কুদসের ইউনিফর্মে চুমু খান এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এদিন ইরানের টিভি চ্যানেলগুলোতে কমেডি সিনেমা দেখাতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং দেশটির সব সঙ্গীতানুষ্ঠান স্থগিত করা হয়।

জানা গেছে, তেহরানের একটি প্রধান সড়কের নামকরণ করা হবে জেনারেল কাশেম সোলাইমানির নামে।

ইরান ও মার্কিন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলী আকবার দারেনি বলেছেন, “জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় ইরান খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছে।”

দেশ ও দেশের বাইরের কিছু সাম্প্রতিক জরিপ থেকে দেখা যায়, জেনারেল কাশেম সোলাইমানি ইরানের সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চালানো এক জরিপ অনুযায়ী, ইরানের প্রতি দশ জনের মধ্যে আটজনই তাকে পছন্দ করতেন।

Khameni-With-Solaimanis-Family.jpg
আজ সকালে জেনারেল কাশেম সোলাইমানির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ছবি: তেহরান টাইমস

প্রিয় জেনারেলকে হারিয়ে ইরানিরা যখন ক্ষুব্ধ তখন আজ (৪ জানুয়ারি) সকালেও ইরাকে হামলা চালানো হয়েছে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াদের ওপর। এতে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করা হলেও, তারা তা অস্বীকার করেছে।

নিজের দেশে অস্বস্তিতে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছুদিন আগেই তিনি অভিশংসিত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থাকে ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করতেই ট্রাম্প এই হামলার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন এবং তিনি এই ঘটনা দিয়ে প্রমাণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনও শত্রুর মোকাবিলা করার ক্ষমতা তার রয়েছে। মার্কিনিরা যে খুব স্বস্তিতে আছেন, তা নয়। ইরানের ‘প্রতিশোধ’র হুমকিতে তারা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। ইরান পৃথিবীর কোন প্রান্তে আমেরিকান স্বার্থে আঘাত হানে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়াও ট্রাম্প প্রশাসনের জন্যে সুখকর নয়। এতে ইউরোপসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা বিপদে পড়বে।

উল্লেখ্য, কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই তেলের দাম বাড়তে শুরু করে বিশ্ববাজারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, গতকাল এশিয়ার বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৬৮ ডলার ১৬ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও তেলের দাম প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে ৬২ ডলার ৮৬ সেন্টে দাঁড়িয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে ট্রাম্প নানা গল্প প্রচার করছেন বলে মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। যেমন ট্রাম্প বলছেন, কাশেম সোলাইমানি দিল্লিতে আক্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, দিল্লি-তেহরান সুসম্পর্কে বৈরিতা আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই ট্রাম্প এমন গল্প তৈরি করছেন।

জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বৈরিতার পারদ আরও বেড়েছে। এ কারণে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি দিন দিন অস্থিতিশীল হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই অঞ্চলে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে সর্বত্র।

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে ৩ হাজার সেনা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে দেশে দেশে অবস্থানরত মার্কিন দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরান কী করে, সেদিকে নজর সারা বিশ্বের। ইরান এখনই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্র ইসরাইল ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কিছু নাও করতে পারে। ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি, ইসরায়েলের আতঙ্ক লেবাননের শক্তিশালী হিজবুল্লাহ বা ইরাকের মিলিশিয়ারা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইল-সৌদি আরবের স্বার্থে আঘাত হানতে পারে। ইরানিদের ক্ষোভ প্রশমনের জন্যে ইরানি শাসকদের এখন কিছু একটা করে দেখানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন:

সোলাইমানিকে হত্যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন

কে এই কিংবদন্তি বীর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি?

ইরানের ‘চরম প্রতিশোধ’র ঘোষণা, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি

কাশেম সোলাইমানির স্থলে ইসমাইল ঘানিকে নিয়োগ দিলেন খামেনি

ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি মার্কিন হামলায় নিহত

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

1h ago