দার্জিলিংয়ের হলুদ কমলা রফিকুলের মহেশপুরে

বাগানে ঢুকতেই অনেক মানুষের ভিড় দেখা গেলো। কেউ ঘুরছেন, কেউ আবার সেলফি তুলছেন। আবার কেউ বলছেন- যেনো দার্জিলিংয়ে কমলা বাগানে ঘুরতে আসা!

বাগানে ঢুকতেই অনেক মানুষের ভিড় দেখা গেলো। কেউ ঘুরছেন, কেউ আবার সেলফি তুলছেন। আবার কেউ বলছেন- যেনো দার্জিলিংয়ে কমলা বাগানে ঘুরতে আসা!

গাছে গাছে হলুদ কমলা ঝুলে আছে দেখতেই খুব সুন্দর লাগছে। কমলা সাধারণত আমাদের দেশে চাষ হয় খুবই কম। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশে চাষ করা কমলা খেতে টক। কিন্তু, স্বাদে পিছিয়ে নেই সেই কমলা।

বলছিলাম ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম চাপাতলা এলাকার কমলা চাষি রফিকুল ইসলামের কমলা বাগানের কথা। মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের আইনুদ্দীন মণ্ডলের ছেলে রফিকুল ইসলাম। ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০০ গজ দূরে চাপাতলা গ্রামে অবস্থিত বাগানটি। রফিকুল একজন নার্সারি ব্যবসায়ী। তিনি মান্দারিন ও দার্জিলিং- দুই জাতের কমলা চাষ করেছেন।

বাগান ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, নিজের এক বিঘা চাষের জমি আছে। আর আছে ছোট নার্সারির ব্যবসা। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সংসার কাটতো খুব কষ্টে। সংসারের অভাব ঘোচাতে তিনি ধার-দেনা করে তিনবছর আগে ভারতের দার্জিলিং গিয়েছিলেন কমলা বাগান দেখতে। মূলত নার্সারি ব্যবসা থাকায় সেখানে বিভিন্ন ফলের বাগানে ঘুরেছিলেন তিনি। এর মধ্যে কমলা বাগান দেখে বেশি ভালো লেগেছিলো তার। দার্জিলিং থেকে ফেরার সময় ২০০ টাকা করে কমলা ও ১৪০ টাকা দরে মাল্টা লেবুর চারা কিনে আনেন। সেখান থেকে ফিরে এসে ২০১৬ সালের প্রথম দিকেই চাপাতলা গ্রামে অন্যের কাছ থেকে ৪ বিঘা জমি ইজারা নেন। ওই জমিতে তিনি পেয়ারা, কমলা ও মাল্টার চাষ শুরু করেন।

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, “প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছিলো। এই জমি থেকে ১০ লাখ টাকার পেয়ারা ও ৯ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করা হয়েছে। দার্জিলিংয়ের কমলা কেজি প্রতি ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এরপর বাগান থেকে পেয়ারা গাছ উঠিয়ে শুধুই কমলার বাগান তৈরি করেছি। এখনো প্রায় ২ লাখ টাকার কমলা বাগানে আছে।”

তার মতে, পাঁচ বছর পর একটি গাছ ফল ধরার জন্য উপযুক্ত হয়। প্রতিটি গাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ভালোভাবে ফল পাওয়া যাবে।

রফিকুলের দাবি, দার্জিলিং থেকে তার বাগানের কমলা অনেক স্বাদের। তিনি মনে করেন, এ দেশেও কমলা চাষ ভালো হবে। বলেন, “কমলা চাষের উপযুক্ত মাটি ও আবহাওয়া আমাদের রয়েছে।” তিনি এখন নিজেই এই কমলা গাছের চারা বিক্রি করছেন। তার বাগানের এই কমলার চাহিদা অনেক। চাহিদা মোতাবেক তিনি যোগান দিতে পারছেন না। এখন একমাত্র ছেলে রোকনুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে কমলা চাষে মনযোগী তিনি। এই কমলা চাষ অনেক লাভজনক বলেও মন্তব্য করেন রফিকুল।

ঘুরতে আসা তানভীর তুহিন নামের এক যুবক বলেন, “দূর থেকে হলুদ কমলা দেখতে অনেক ভালো লাগছে। আমরা আগে ভারতের দার্জিলিংসহ বিভিন্ন দেশের কমলা বাগানের কথা শুনেছি, কিন্তু দেখিনি। এখন আমাদের দেশেই কমলা চাষ হচ্ছে। এটা খুব ভালো উদ্যোগ।”

বাগান থেকে কমলা নিতে আসেন ঢাকার ফল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, “এই কমলার সাইজ, স্বাদ, রং সবকিছু দার্জিলিং বা অন্য দেশের কমলার মতো। এখান থেকে নিয়ে গেলে আমাদের লাভ বেশি হয়। ফল ভালো রাখতে কোনো প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয় না। এই ফল টাটকা থাকে।”

মহেশপুর উপজেলার কুসুমপুর বাজারের ফল ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন ও সালাম হোসেন। তারাও এসেছিলেন এই বাগান থেকে কমলা নিতে। ফারুক জানালেন, “আমরা বিভিন্ন ফলের ব্যবসা করি। রফিকুল ইসলামের বাগানের এই কমলা অন্যদেশের কমলার থেকে ভালো। আমরা এখান থেকে কমলা নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠাই।”

মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসান আলী বললেন, “আমি এবং বিভিন্ন ভিজিটর নিয়ে রফিকুল ইসলামের কমলার বাগান পরিদর্শন করেছি। সবাই বলেছে, দার্জিলিংয়ের থেকে এই কমলা অনেক ভালো। আমরা জানতাম পাহাড়ি অঞ্চলে কমলা ভালো হয়। কিন্তু, মহেশপুর উপজেলার এই বেলে-দোআঁশ মাটিতেও অনেক ভালো কমলা হয়েছে। কমলাতে মাছি-পোকা এড়াতে তাকে পরামর্শ দিয়েছি। গ্রাফটিং বা কলমের মাধ্যমে তাকে চারা বানানোর জন্য বলা হয়েছে। তাহলে চারাটি সুন্দর হবে।”

তিনি আরও বললেন, “ইতিমধ্যে বাগানটি পরিদর্শনে এসেছেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ উইংয়ের পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দীন আহাম্মেদ। পরিদর্শনকালে তিনি জানিয়েছিলেন, সমতল ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ এই প্রথম। রফিকুলের বাগানে উৎপাদিত কমলা খেতে বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।”

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

58m ago