ফেলানী হত্যার ৯ বছর, থেমে আছে বিচার প্রক্রিয়া
আজ ৭ জানুয়ারি। ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির রামখানা অনন্তপুর সীমান্তে ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হওয়ার পরও প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিলো ফেলানীর নিথর দেহ। এ ঘটনায় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। ফেলানী হত্যার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বিচার না পাওয়া হতাশ ফেলানীর পরিবার ও এলাকাবাসী।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) সকালে ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে কিশোরী ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা ফেলানীর নিথর দেহ কাঁটাতারের ওপর ঝুলে থাকার পর তার লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। এর প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর ৮ (জানুয়ারি) শনিবার লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।
এর দুই বছর পর মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অব্যাহত চাপের মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করে ভারত সরকার। ওই আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম এবং মামা হানিফ। তবে একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ এর বিশেষ আদালত।
এরপর রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। এর প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আবারও বিচারকাজ শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। কিন্তু ২০১৫ সালের ২ জুলাই আসামি অমিয় ঘোষকে পুনরায় খালাস দেন আদালত।
এই রায়ের পর একই বছরের ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ- ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে কয়েক দফায় পিছিয়ে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য হলেও তা আজ পর্যন্ত হয়নি। এর ফলে থমকে গেছে ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার প্রক্রিয়া।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম ঝুলে থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী।
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে ফেলানী হত্যাকাণ্ডের রিট এ বছর তালিকাভুক্ত না হওয়ায় বিচারিক কাজ কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন, ফেলানী হত্যা মামলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন।
দ্রুত ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় হলে তা উভয় দেশের সীমান্তের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে বলে মনে করেন তিনি।
Comments