‘ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত পিছু হটবো না’

“প্রতি সকালে হাঁটতে হাঁটতে আমি সিটি কলেজের গেটে গিয়ে দাঁড়াই। দেয়ালে আমার ছেলের (সুদীপ্ত) ছবিটা হাত দিয়ে মুছে দেই। আমার দিকে তাকিয়ে যেনো কিছু একটা বলতে চায়। সে মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন যতোক্ষণ জেগে থাকি, ততোক্ষণই তীব্র যন্ত্রণা আমাকে কুরে কুরে খায়”- এভাবেই আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বলছিলেন নিহত সুদীপ্তর বাবা ৬৮ বছর বয়সী মেঘনাদ বিশ্বাস।
Meghnath Biswas
নিহত ছেলের ছবির ধুলো মুছছেন বাবা মেঘনাদ বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

“প্রতি সকালে হাঁটতে হাঁটতে আমি সিটি কলেজের গেটে গিয়ে দাঁড়াই। দেয়ালে আমার ছেলের (সুদীপ্ত) ছবিটা হাত দিয়ে মুছে দেই। আমার দিকে তাকিয়ে যেনো কিছু একটা বলতে চায়। সে মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন যতোক্ষণ জেগে থাকি, ততোক্ষণই তীব্র যন্ত্রণা আমাকে কুরে কুরে খায়”- এভাবেই আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বলছিলেন নিহত সুদীপ্তর বাবা ৬৮ বছর বয়সী মেঘনাদ বিশ্বাস।

২০১৭ সালের ১০ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সুদীপ্তকে।

নিহত হওয়ার পর থেকে গত আড়াই বছর ধরে শোকাহত বাবা ন্যায়বিচারের অপেক্ষা করছেন। তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। মূল হোতাসহ বেশিরভাগ খুনিদের ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে।

সিটি কলেজের ছাত্র সুদীপ্ত বিশ্বাস চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। রাজনৈতিক বিরোধের জেরে ছাত্রলীগের অপর এক গ্রুপ এবং যুবলীগের কয়েকজন মিলে বন্দরনগরীর নালাপাড়া এলাকায় সুদীপ্তকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।

পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মহানগর শাখা মামলাটি তদন্ত করছে। লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এর আগে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) তদন্ত চালিয়ে ছিলো।

তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মাসুম। অন্যরা তার তৈরি করা ছক অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। এ পর্যন্ত ১৭ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সাতটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং একটি মোটরবাইক জব্দ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে মেঘনাদ বিশ্বাস বলেন, “বুয়েটের আবরার ও রিফাতের মতো করেই আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। ওদের (আবরার ও রিফাত) মামলার বিচার ইতোমধ্যে শুরু হলেও, সুদীপ্ত হত্যা মামলার তদন্তই শেষ হয়নি।”

“আমি চাই আমার ছেলের খুনিদের বিচার হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের দাবি জানাই”, যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “আমি একজন সাধারণ প্রাইভেট শিক্ষক। কিন্তু, অভিযুক্তরা বেশ প্রভাবশালী। আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তবে আমি পিছু হটবো না।”

“জানি না আমাকে কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রার্থনা করি যেনো মৃত্যুর আগে ন্যায়বিচার দেখে যেতে পারি,” ভারী কণ্ঠে বলছিলেন মেঘনাদ।

মামলাটির অন্যতম তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমাকে মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানিয়েছেন, “হত্যার পরিকল্পনাকারীসহ বেশিরভাগ খুনিকে আমরা চিহ্নিত করেছি এবং তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।”

“আমরা খুনিদের ব্যবহৃত সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছি। দুজন সিএনজি চালক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

“খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত খায়েরের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। সে ঘটনার পর তার এক বন্ধুর কাছে হত্যার বর্ণনা দিয়েছিলো। সেই কথোপকথনের রেকর্ড পিবিআইএর হাতে এসেছে,” বলেছেন পিবিআই কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানিয়েছেন, “এছাড়াও, অপর আরেক অভিযুক্ত সাত্তারের করা হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও ক্লিপও পুলিশ জব্দ করেছে।”

“অভিযুক্ত মিজান ও সাত্তারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মাসুমের নাম বলে,” যোগ করেন সন্তোষ।

পৃথক পৃথক গ্রুপের প্রায় ৫০-৬০ জনের মতো যুবক এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে জানিয়ে সন্তোষ বলেন, “চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার চার্জশিট খুব অল্প সময়ের মধ্যে জমা দেওয়া হবে।”

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago