বিশ্বকাপের দ্রুততম গোলদাতা সেই হাকান সুকুর এখন ট্যাক্সিচালক

hakan sukur final
ছবি: স্পোর্টস বাইবেল টুইটার পেজ থেকে নেওয়া

২০০২ বিশ্বকাপের তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। মুখোমুখি আসরের চমক জাগানো দুই দল তুরস্ক ও দক্ষিণ কোরিয়া। রেফারির খেলা শুরুর বাঁশির আওয়াজ মিলিয়ে গেছে কী যায়নি, দর্শকরা নড়েচড়ে বসতেও পারেননি, এরই মধ্যে গোল! তুরস্কের স্ট্রাইকার হাকান সুকুর মাত্র ১১ সেকেন্ডের মাথায় দক্ষিণ কোরিয়ার জালে জড়িয়েছিলেন বল। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে দ্রুততম গোলের সেই রেকর্ড টিকে আছে এখনও।

কিন্তু ভাগ্যের বিড়ম্বনায়, জীবন বাঁচাতে, জীবিকার তাগিদে তুরস্কের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা সুকুর এখন ট্যাক্সি চালান যুক্তরাষ্ট্রে! কারণ তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়াসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের! জার্মান একটি সংবাদপত্রের বরাতে এমন খবরই দিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

তুরস্ক জাতীয় দলের জার্সিতে ১১২ ম্যাচে ৫১ গোল। খেলেছেন ১৯৯২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়। ২০০২ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া তুরস্ক দলের গর্বিত সদস্য। ক্লাব পর্যায়ে ইতালিয়ান সিরি আ’র ইন্টার মিলান, পারমা ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের মতো দলে খেলার অভিজ্ঞতা আছে সুকুরের। স্বদেশি ক্লাব গ্যালাতাসারাইয়ের হয়েই ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটানো এই ফরোয়ার্ড তুরস্কের পেশাদার ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর- সুপার লিগের ইতিহাসেরও সর্বোচ্চ গোলদাতা। কিন্তু, তিনিই এখন দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে বিদেশ-বিভূঁইয়ে চালান উবার ট্যাক্সি।

জার্মান সংবাদপত্র ‘ভেল্ট আম সনটাগ’কে সুকুর সম্প্রতি বলেছেন জীবনের মোড় পাল্টে যাওয়ার করুণ কাহিনী। এরদোয়ানের রোষানলে পড়ে সবকিছু হারিয়েছেন অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, “আমার আর কোনও কিছুই নেই, এরদোয়ান আমার সব কেড়ে নিয়েছে; আমার স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা ও কাজের অধিকার।”

২০০৮ সালে ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর সুকুর যোগ দিয়েছিলেন রাজনীতিতে। এরদোয়ানের দল ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’র হয়ে ২০১১ সালে তুরস্কের পার্লামেন্ট সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে দুজনের সম্পর্কে ধরে ফাটল।

এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষের নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল সুকুরের। তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় সেটাই। ২০১৬ সালে গুলেনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে এরদোয়ানকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এরপর ২০১৭ সালে তুরস্কের সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে সুকুরকে ফেতুল্লাহ টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশনের (ফেটো) একজন পলাতক আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এমনকী, হত্যার হুমকিও পান তিনি।

ফলে জীবন রক্ষার স্বার্থে ওই বছরেই দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার পর ক্যালিফোর্নিয়াতে একটি ক্যাফে চালাতেন সুকুর। কিন্তু, হঠাৎ করে তার মনে হতে শুরু করে, সেখানে সন্দেহজনক লোকেরা আনাগোনা করছে। তাই ক্যাফে ছেড়ে দিয়ে তিনি চালানো শুরু করেছেন ট্যাক্সি। সঙ্গে বিক্রি করছেন বইও।

সুকুর অবশ্য শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন, “অভ্যুত্থানে আমার কী ভূমিকা ছিল তা কেউই ব্যাখ্যা করতে পারেনি। আমি অবৈধ কোনও কিছু করিনি। আমি বিশ্বাসঘাতক কিংবা সন্ত্রাসী নই।”

Comments

The Daily Star  | English
US attack on Iran nuclear sites

Iran denounces US attack as ‘outrageous’

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

7h ago