‘ক্রসফায়ার’ তাহলে ঘটানো যায়!

তাহলে জেনে বুঝেই কাউকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করা সম্ভব! যেখানে যেকোনো ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় বলার চেষ্টা করে ঘটনাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটেনি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ধর্ষণের ভয়াবহতা ঠেকাতে কয়েকজন সংসদ সদস্য এই ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করার কথা বলছেন।
Gunfight logo
প্রতীকী ছবি। স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

তাহলে জেনে বুঝেই কাউকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করা সম্ভব!

যেখানে যেকোনো ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় বলার চেষ্টা করে ঘটনাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটেনি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ধর্ষণের ভয়াবহতা ঠেকাতে কয়েকজন সংসদ সদস্য এই ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করার কথা বলছেন।

জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের দেওয়া ভাষণে মনে হয়, মাদকবিরোধী অভিযানের সময় ‘ক্রসফায়ারে’ অপরাধীদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো তাদের অপরাধের কারণে।

‘ক্রসফায়ারে’ হত্যাকাণ্ড প্রচলিত আইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হলেও সংসদ সদস্যরা একে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা’ বলে মনে করছেন।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আইন প্রণেতারা যদি ‘ক্রসফায়ার’কে প্রকাশ্যে অপরাধ দমনের হাতিয়ার হিসেবে মনে করেন, তাহলে আগের সব ঘটনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যা যা বলেছে তার কী হবে? সেগুলো কি নিছক দুর্ঘটনা ছিলো না কী ইচ্ছাকৃত?

এসব ঘটনার প্রতিবেদনগুলো ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রতিটি ঘটনার বিবরণ প্রায় একই রকম।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই বলা হয়, অপরাধী কিংবা তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রথমে আক্রমণ করে। পরে, পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় বলে তারা আত্মরক্ষার্থেই গোলাগুলিতে অংশ নেয়।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আইন প্রণেতাদের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি অংশ বছরের পর বছর ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘গুলি বিনিময়’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

গত ১৪ জানুয়ারি সংসদে অনির্ধারিত এক আলোচনায় আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য বলেছিলেন, “আমাদের আরও কঠোর আইন দরকার। মাদক সংশ্লিষ্ট ঘটনায় যদি ক্রসফায়ার হয়ে থাকে, তাহলে ধর্ষণের ঘটনায় কেনো নয়?”

“এই কাজ (ধর্ষণ) যিনি করেছেন তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই,” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আরেকজন সংসদ সদস্য বলেছেন, “মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনি ক্রসফায়ারে দিচ্ছেন। তবে কেনো ধর্ষণের ঘটনায় একজনকেও দিচ্ছেন না?”

সংসদের বক্তব্যগুলো এক্সপাঞ্জ করা হয়নি।

সম্প্রতি, সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ধর্ষকের শাস্তির বিষয়ে তারা (সংসদ সদস্যরা) তাদের ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন। সরকার কিংবা দল কেউই এরকম মনে করে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, “এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ারকে আমরা সমর্থন করতে পারি না, কারণ এটা অসাংবিধানিক।”

সরকার ২০১৮ সালের মে মাসে মাদকবিরোধী অভিযান ঘোষণার পর ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে, ২০০৪ সাল থেকে প্রায় ২,৭০০ মানুষ ‘গুলি বিনিময়’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। অভিযোগ আছে এদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নিহত হওয়া মানুষের সংখ্যা ৯০০ জনেরও বেশি।

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই ধরণের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে।

ধর্ষণ ও মাদক কারবারের মতো অপরাধ শক্ত হাতে দমন করতে হবে সে বিষয়ে সবাই এক মত। তবে সেগুলো অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ায় হতে হবে।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন গতকাল (১৬ জানুয়ারি) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ নামে বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষ মারছে। আইন প্রণেতারা তা জেনেই এমন বক্তব্য দিচ্ছেন।”

“এমন বক্তব্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উৎসাহিত করাটা বস্তুত দেশের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনা”, যোগ করেন তিনি।

নূর আরও বলেছেন, “তাদের এই বিবৃতিগুলো আরও স্পষ্ট করে যে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে যে হত্যাকাণ্ড হয়, সেগুলো জেনে-শুনে পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়।”

তিনি মন্তব্য করেন যে আইন প্রণেতাদের এই জাতীয় বক্তব্য সংবিধানের লঙ্ঘন।

আরও পড়ুন:

ধর্ষকের ‘ক্রসফায়ার’ দাবি সংসদে

ধর্ষণের শাস্তি ‘ক্রসফায়ার’ তাদের ব্যক্তিগত মতামত: কাদের

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago