নিখোঁজ বাবা ফিরে এলেন ৪৮ বছর পর

চার যুগ আগে, স্বাধীনতার পরপরই চার সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বেজগ্রামের হাবিবুর রহমান।
Habibur Rahman.jpg
হাসপাতালে হাবিবুর রহমানের পাশে পরিবারের সদস্যরা। ছবি: স্টার

চার যুগ আগে, স্বাধীনতার পরপরই চার সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বেজগ্রামের হাবিবুর রহমান।

হাবিবুর রহমানের বয়স এখন ৭৮। আর এতো বছর পর গতকাল (১৭ জানুয়ারি) অবিশ্বাস্যভাবেই তাকে খুঁজে পায় তার পরিবার।

হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক বছর খোঁজাখুঁজি করেও না পাওয়ায় হাল ছেড়ে দেন পরিবারের সদস্যরা। তারপর সবাই নিজেদের জীবন নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন এতোযুগ ধরে।

এরইমধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি তার যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী পুত্রবধূর কাছে একটি ফেসবুক ভিডিও আসে, যাতে দেখা যায় হাবিবুর রহমান নামের এক বৃদ্ধ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং যার গল্প অনেকটা হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমানের সঙ্গে মিলে যায়।

এটি দেখে তিনি দেশে থাকা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সবাই মোটামুটি নিশ্চিত হন যে ভিডিওতে থাকা এই ব্যক্তিই তাদের হারিয়ে যাওয়া বাবা।

পরদিন সকালে হাসপাতালে আসেন হাবিবুর রহমানের দুই ছেলে শাহাব উদ্দিন ও জালাল উদ্দিন। কথাবার্তার পর তারা তাদের বাবার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন।

হাবিবুরের নিরুদ্দেশ জীবন

হাবিবুর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন বলেছেন, “তখন আমরা বেজগ্রামে থাকতাম। অনেক পরে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের কসবাতে বসবাস শুরু করি। বাবা রড-সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পরপর ব্যবসায়িক কাজে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেননি। নানা জায়গায় খোঁজ করেও আর তার খবর পাওয়া যায়নি। ২০০০ সালে মা মারা যান।”

গত ২৫ বছর ধরে হাবিবুর রহমানকে দেখাশোনা করছেন মৌলভীবাজারের রায়শ্রী এলাকার রাজিয়া বেগম নামের এক নারী।

রাজিয়া বেগম বলেছেন, “প্রায় ২৫ বছর আগে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে আমাদের পরিবারের পরিচয় হয় মৌলভীবাজারের হজরত শাহাব উদ্দিনের মাজারে। তাকে আমরা সম্মান করে পীর সাহেব বলে ডাকি। সেসময় থেকে তার দেখাশোনা করছি আমি। এর আগে তিনি মাজারে মাজারেই ঘুরে বেড়াতেন।”

Habibur Rahman 2.jpg
হাবিবুর রহমান। ছবি: স্টার

যেভাবে হাসপাতালে

প্রায় ১০-১২ বছর ধরে বার্ধক্যের কারণে প্রায় শয্যাশায়ী হাবিবুর রহমান। এর মধ্যে মাসখানেক আগে বিছানা থেকে পড়ে গেলে তার ডান হাত ভেঙে যায়। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তির পর গত সপ্তাহে ভাঙা হাতে ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

গত ১৫ জানুয়ারি হাবিবুর রহমানের ভাঙা হাতের অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কিন্তু, প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় রাজিয়া বেগম অপারেশন করাতে পারেননি।

যেভাবে ফেসবুকে জানাজানি

টাকার অভাবে হাবিবুরের হাতে অপারেশন করতে পারছিলেন না রাজিয়া বেগম। সেসময় হাসপাতালের পাশের বেডে থাকা এক রোগীর আত্মীয় হাবিবুর রহমানের গল্প জানতে পারেন।

তিনিই হাবিবুরের ছবি তুলে ও সামগ্রিক বিষয় লিখে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন যা ধীরে ধীরে শেয়ার হতে থাকে দেশে-বিদেশে। আর এভাবেই একসময় হাবিবুরের যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী পুত্রবধূর কাছে পৌঁছে যায়।

পারিবারিক পুণর্মিলনী

গতকাল সকালে পরিবারের সদস্যরা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে হাবিবুরকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। তবে হাবিবুর শুধু নিজের স্ত্রী ও ভাইদের নাম এবং গ্রামের নাম বলতে পেরেছিলেন।

একসময় পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত হন, ইনিই তাদের হারিয়ে যাওয়া বাবা হাবিবুর রহমান। তারপর তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান বেসরকারি আল-হারামাইন হাসপাতালে।

বর্তমানে সেই হাসপাতালের ৬ তলার একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। আর এখানেই আসতে থাকেন তার পরিবারের সদস্য এবং স্বজনেরা।

ছেলে জালাল উদ্দিন বলেছেন, “প্রায় ৪৮ বছর পর বাবাকে ফিরে পেয়ে আমরা যেমন খুশি, আমাদের সন্তানেরা তার চেয়ে বেশি খুশি। তারা তো বিছানার পাশ থেকে সরতেই চায় না।”

নাতি কেফায়াত আহমেদ বললেন, “ছোটবেলা থেকে দাদার গল্প শুনেছি বাবা-চাচাদের কাছ থেকে। কখনও ভাবিনি তাকে ফিরে পাবো। কিন্তু, খুব আশা ছিলো একদিন ফিরে পাবো। আজ তা পূরণ হয়েছে। খুব খুশি লাগছে।”

তিনি কেনো এতো বছরেও বাড়ি ফিরে আসেননি সে সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে পরিবারের সদস্যদের মতে, হাবিবুর রহমানের কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনতা রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago