পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে চট্টগ্রামের কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি

ছবি: রাজীব রায়হান

আমাদের কাছে কবরস্থান মানেই শোক ও মৃতদের স্মরণ করার জায়গা। কিন্ত, এই ধারণাকে পাল্টে দিয়ে একটি কবরস্থান হয়ে উঠতে পারে একটি ঐতিহাসিক স্থান। আর তা শুধু সমাহিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানায় না, জানিয়ে দেয় আমাদের অতীত ইতিহাস সম্পর্কেও।

তেমনই একটি কবরস্থান হলো চট্টগ্রামের কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি। এখানে আসা দর্শনার্থী ও পর্যটকদের উপস্থিতিই জানিয়ে দেয় একটি কবরস্থানও যাদুঘরের মতো আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠতে পারে।

পাঁচ বছরের মেয়ে আলভীকে নিয়ে এখানে এসেছিলেন রোকেয়া আক্তার নামের এক দর্শনার্থী। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত করাতে আমি আমার মেয়েকে এখানে নিয়ে এসেছি। এই সুন্দর জায়গাটিকে সে খুব পছন্দ করে।”

কবরস্থানটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে তা দর্শনার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে পারে। এমনকি শিশুদের মধ্যেও। এর প্রবেশ পথে রয়েছে একটি বিশাল ক্রস। যেটি এখানে প্রতিদিন আসা ৫০০ দর্শনার্থীর ভ্রমণকে আধ্যাত্মিক করে তোলে।

চাটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট ইনস্টিটিউটের উল্টো দিকের বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কের সাত-একর জমিতে এটি অবস্থিত। ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কবরস্থানটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কমনওয়েলথ সেনা এবং আরও যারা নিহত হয়েছিল তাদের স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে এটি নির্মিত হয়। লুশ পার্কল্যান্ডে যুদ্ধে নিহত ৭৫৫ জনের কবর রয়েছে এখানে।

বাংলাদেশ কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের (সিডব্লিইজিসি) কান্ট্রি ব্যবস্থাপক হিল্লোল সাত্তার জানান,  এখানকার ৭৩১টি কবর হলো কমনওয়েলথ সেনাদের। আরও ২০ জন বিদেশি নাগরিকের কবর রয়েছে (১৯ জন জাপানী সৈনিক এবং একজন ডাচ নৌ সেনা) এবং চারজন ব্রিটিশ সামরিক কর্মীর কবর রয়েছে।

সিডব্লিইজিসি-এর সাবেক কান্ট্রি ব্যবস্থাপক আবু সৈয়দ জানান, এই কবরস্থানে সমাহিত সেনারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টে জাপানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং কাপ্তাইয়ের চন্দ্রোঘোনা খ্রিস্টান হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে যারা মারা যান তাদের এখানে সমাহিত করা হয়।

ছবি: রাজীব রায়হান

৭৫৫টি কবরের প্রতিটির ওপরে সমাহিতদের নাম, জাতীয়তা, বয়স এবং মৃত্যুর তারিখ লেখা রয়েছে। এছাড়া সেগুলোর পাশে ছোট ছোট বাগানও রয়েছে।

এখানে এসেছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের ইংরেজি বিভাগের একদল শিক্ষার্থীর। তাদের দলের নেতৃত্ব দেওয়া শুভেচ্ছা ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমি যখন বন্ধুদের এখানে আসার প্রস্তাব দিলাম, ওরা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল।” এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানের প্রাকৃতিক দৃশ্যও বেশ মনোরম এবং নিরিবিলি। এসব কারণেই শুভেচ্ছার বন্ধুরা তাৎক্ষণিকভাবে এখানে আসতে রাজি হয়ে যায়।

১৯৪৩ সালের ২০ অক্টোবর মারা যান রয়্যাল বিমান বাহিনীর পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এজি ওসমান্ড। তার কবরের এপিটাফে লেখা রয়েছে “গ্রেটার লাভ হ্যাথ নো ম্যান দ্যান দিজ।”

২০২০ সালেও যে কোনও বাংলাদেশি এটি পড়লে অবশ্যই আকর্ষণ বোধ করবেন। আর তা শুধুমাত্র চাট্রগ্রামের নয়, দূরের পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করে।

কক্সবাজার থেকে এখানে ঘুরতে এসেছিলেন আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, “আমি অনলাইন থেকে এই কবরস্থান সম্পর্কে জেনেছিলাম। পরে এটি দেখার জন্য আমার মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়। তাই আমি এখানে এসেছি। আমার বিশ্বাস এই জায়গাটি যে কাউকে আকৃষ্ট করবে, চোখও খুলে দেবে।”

এই কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবস্থাপক হিল্লোলসহ পাচঁ সদস্যের একটি দল রয়েছে।

এটি প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ১২ টা এবং দুপুর ২ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

Comments

The Daily Star  | English

BB buys $313m more from 22 banks

The cut-off rate was Tk 121.5 per US dollar

33m ago