২০১৬ থেকে ২০২০

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রকল্প: অর্জিত হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক

গত চার বছরে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অর্থায়নে বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প ও কর্মসূচি চলছে সেগুলো নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের কিছুটা বেশি অর্জন করতে পেরেছে। এমনই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি প্রতিবেদনে।
wb_fund

গত চার বছরে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অর্থায়নে বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প ও কর্মসূচি চলছে সেগুলো নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের কিছুটা বেশি অর্জন করতে পেরেছে। এমনই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি প্রতিবেদনে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা, কেনাকাটায় অতিরিক্ত সময় লাগানো এবং কার্য সক্ষমতায় দুর্বলতা প্রকল্পগুলোর ধীরগতির প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এই বহুপাক্ষিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে পাঁচ বছরের জন্য কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের (সিপিএফ) আওতায় ১০ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে।

এই তহবিল বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, পরিবহন, সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, চাকরির সুযোগ তৈরি, স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনার মতো কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। তহবিলের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিলো লক্ষ্যমাত্রাও।

সিপিএফের আওতায় ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে বাংলাদেশকে মোট ১২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে।

বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে গত চার বছরে বাংলাদেশকে সাত দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে এবং চলতি অর্থবছরে আরও দুই দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে।

এর আগে, বিশ্বব্যাংক সিপিএফের আওতায় ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আট দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশকে গত চার বছরে এক দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তাদের দেওয়া অর্থের পরিমাণ ছিলো ৭৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আরেকটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মাল্টিলেটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি গত চার বছরে বাংলাদেশকে দিয়েছে ৪৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপ এখন সিপিএফের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করেছে। যাতে সরকার কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে সিপিএফের লক্ষ্য অর্জন করতে পারাটা ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে, “সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা, কেনাকাটায় দেরী করা, কার্য সক্ষমতায় দুর্বলতা এবং প্রকল্পের কর্মীদের উচ্চ বেতনসহ বিভিন্ন কারণে (বিশ্বব্যাংকের অর্থায়িত) বিনিয়োগ কার্যক্রম কার্যকর করতে দেরী হয়েছে।”

সেখানে আরও বলা হয়েছে, “এটি কাজের গতি কমিয়েছে, তদারকির ব্যয় বাড়িয়েছে, লক্ষ্য অর্জনে দেরী হচ্ছে এবং বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াচ্ছে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আইন ও কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য যে পরিমাণ সময় চেয়েছিলো তার থেকে বেশি সময় লাগছে।

“এটা হতে পারে অনেক বেশি অংশীদারের সঙ্গে পরামর্শ করা, অপেক্ষাকৃত দুর্বল আন্ত-সরকারি সমন্বয় এবং সরকারি আমলাদের কারণে।”

এতে আরও বলা হয়, আইন প্রণয়ন ও পরিবর্তনের নীতিমালার বাইরেও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সংস্কার করা।

ঝুঁকি

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনীতি ও প্রশাসন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, বিশ্বস্ত ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ ও সামাজিক বিষয়গুলো সিপিএফের লক্ষ্য অর্জনে উচ্চ ঝুঁকির কারণ।

নিরাপত্তা এবং প্রশাসনের পরিবেশ উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির মধ্যে অন্যতম। নিরাপত্তার সম্ভাব্য অবনতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ২০১৬ সালে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলো।

২০১৬ সালের জুলাই মাসে হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলা হওয়ার পর নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যা বিশ্বব্যাংক গ্রুপের কাজে প্রভাব ফেলেছে। সরকারের সহায়তা নিয়ে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো।

সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনের ক্ষমতাসীন দলের ব্যাপক জয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়ে গেছে বলেও জানিয়েছে এই প্রতিবেদন। বিশ্বব্যাংক ধারাবাহিক বিনিয়োগের মাধ্যমে সিপিএফ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ঝুঁকি কমিয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা এবং জবাবদিহিতার বিষয়গুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কার্য সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হলেও সিপিএফ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততার ঝুঁকি বেশিই রয়ে গেছে। পরিবেশগত ও সামাজিক ঝুঁকিও বেশি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের সমস্যা সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে দেরী হয়েছে।

wb_fund

সিপিএফের বর্তমান পরিস্থিতি

বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারির শেষদিকে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অর্থায়িত প্রকল্পগুলো দুই হাজার ৮০০ মেগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দুই হাজার ৫৩১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছে।

আইএফসি প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ২০ শতাংশ বাড়াতে বাংলাদেশের প্রথম তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির টার্মিনালে অর্থায়ন করেছে।

গ্রামীণ সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণে কিছুটা অগ্রগতি হলেও নৌপরিবহন যোগাযোগের উন্নয়ন প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে।

বিশ্বব্যাংক শহরাঞ্চলে সাধারণ সেবাগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে মিশ্র অগ্রগতি পেয়েছে।

তাদের মতে, সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পৌরসভার সক্ষমতা বেড়েছে। তবে বস্তিগুলোতে উন্নত জীবনযাত্রার সুবিধা পাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ের পরিবেশ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি রয়েছে। তবে আঞ্চলিক বাণিজ্যে তা খুব বেশি লাভজনক ছিলো না।

বিশ্বব্যাংক এবং আইএফসির সহায়তায় ২০১৮ সালের শেষের দিকে ১৭টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রত্যক্ষ বেসরকারি বিনিয়োগ এক দশমিক আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি।

আইএফসি কর্ম পরিবেশের উন্নতি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং আরও বেশি নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে ২৩২টি পোশাক কারখানাকে সহযোগিতা করেছে।

তবে সীমান্ত বাণিজ্য সহজ করার ক্ষেত্রে অগ্রগতি কম দেখা গেছে।

এতে বলা হয়েছে, “বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নতির জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”

এছাড়াও, অগ্রগতি হয়েছে সামাজিক সুরক্ষায়।

শিক্ষার ক্ষেত্রে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়লেও এর মানের ব্যাপারটি এখনও অমীমাংসিত।

প্রায় সাত লাখ শিক্ষার্থী নতুন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছে, যারা শিক্ষার আলো থেকে দূরে ছিলো। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২১৫টি দরিদ্রতম উপজেলার ১০ দশমিক তিন মিলিয়ন দরিদ্র শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে উপবৃত্তি পাচ্ছে।

তবে, প্রাসঙ্গিক তথ্য না থাকায় শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের অবদান কতটা তা বোঝা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ মানসম্পন্ন মাতৃ এবং শিশু স্বাস্থ্যসেবা সহজ লভ্য করার ক্ষেত্রে কয়েকটি লক্ষ্য অর্জন করেছে।

জলবায়ু এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় অগ্রগতি মিশ্র।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি যথাযথ ভাবে হচ্ছে। দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্রে আরও বেশি সংখ্যক আশ্রয়হীন মানুষকে জায়গা দেওয়ার লক্ষ্য অর্জন করবে বলে আশা করছে বিশ্বব্যাংক।

বাংলাদেশের প্রশাসনিক মান এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের  গড় মানের তুলনায় কম উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “জবাবদিহিতা ছাড়া বিশ্বব্যাংকের ওয়ার্ল্ড গভর্নেন্স ইন্ডিকেটরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়েছে।”

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago