উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস

দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং অপর্যাপ্ত শারীরিক শ্রমকে এর জন্য দায়ী করছেন।

দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং অপর্যাপ্ত শারীরিক শ্রমকে এর জন্য দায়ী করছেন।

গতকাল প্রকাশিত ২০১৭-১৮ সালের অষ্টম বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে- বিডিএইচএস) এর প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে যে ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ। যা ২০১১ সালে ছিলো ২৬ শতাংশ।

একই সময়কালে, একই বয়স গ্রুপের ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে।

জরিপে দেখা গেছে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রায় তিন কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপ (৯০ ও ১৪০ এর বেশি রক্তচাপ) এবং একই বয়সের এক কোটি ১০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বিডিএইচএসের জরিপ দলকে সহায়তাকারী ইউএস এইডের জ্যৈষ্ঠ পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও গবেষণা উপদেষ্টা কান্তা জামিল ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসে বড় পরিবর্তন এসেছে। আসলে এর পিছনে বড় কারণ হচ্ছে অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং অপর্যাপ্ত শারীরিক শ্রম।”

গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন।

৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সের নারীদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। যেখানে পুরুষদের সংখ্যা ৩৪ শতাংশ। ২০১১ সালে, এই সংখ্যা ছিল নারীদের ৩২ শতাংশ এবং পুরুষদের ১৯ শতাংশ।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৯ হাজার ৫০০ পরিবারের ওপর জরিপটি করা হয়েছে। জরিপে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২০৪০ সালের মধ্যে প্রায় চার কোটি ৬০ লাখে দাঁড়াতে পারে বলে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে যে ২০৪০ সালের মধ্যে ৩৫ বা তদুর্ধ বয়সের ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ৬০ লাখ হতে পারে।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব পপুলেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনআইপিওআরটি) পরিচালিত বিডিএইচএসে প্রথমবারের মতো ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী মানুষদের উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস আছে কি না তা যাচাই করা হয়।

তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১৩ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।

উদ্বেগজনকভাবে, জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেক নারী এবং দুই তৃতীয়াংশ পুরুষ তাদের উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না এবং প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তা জানতেন না।

তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সচেতনদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ নারী এবং নয় শতাংশ পুরুষ ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। বাকীরা ওষুধ খান না বা খেলেও নিয়ন্ত্রণে থাকছে না।

ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ১৩ শতাংশই ওষুধ খান।

কান্তা জামিল বলেছিলেন, “উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস একটি বড় স্বাস্থ্য উদ্বেগের কারণ। এগুলো থেকে আরও অন্যান্য গুরুতর অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একবার এই রোগ হলে তা বাকী জীবনের জন্য ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা ব্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

জরিপের ফলাফলে, এই রোগগুলো প্রাথমিক স্তর থেকেই নিরাময়ের প্রচেষ্টা করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকেই সচেতন থাকলে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস ভয়াবহ ভাবে বাড়তে পারে না।

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) জনস্বাস্থ্য ও তথ্য বিষয়ক বিভাগের সহযোগী অধ্যা পক খালেকুজ্জামান বলেছেন, জরিপের পরামর্শের চেয়ে বাস্তবতা আরও বেশি খারাপ।

তিনি বলেছেন, “নিঃসন্দেহে সংখ্যাটি অনেক বড়। আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ। অপর্যাপ্ত শারীরিক শ্রম, শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, জাঙ্ক ফুড, প্রচুর পরিমাণে লবণ ও চিনি খাওয়া এবং ধূমপান এর জন্য দায়ী।”

বিডিএইচএসের সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপে এছাড়াও আরও কিছু সূচক তুলে ধরা হয়েছে। যেমন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার এবং কিশোর বয়সে বিয়ে ও সন্তান জন্মদান।

প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার শিশু মারা যায়। তাদের মধ্যে ৩১ শতাংশ মারা যায় সংক্রমণে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিউমোনিয়া।

জরিপে বলা হয়েছে জন্মের সময় আঘাত, জন্মগত অস্বাভাবিকতা, নবজাতকের জন্ডিস, সময়ের আগেই জন্ম, ডায়রিয়া এবং অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর পরিমাণ ২০ শতাংশ বেড়েছে।

২০১১ সালে মেয়েদের বিয়ের বয়সের গড় ১৬.৬ শতাংশ থাকলেও তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭.৩ শতাংশে।

জরিপে দেখা গেছে, দম্পতিদের মধ্যে বিয়ের প্রথম ছয় মাস গর্ভনিরোধক ব্যবহার বেশি থাকে। পরবর্তীতে যা কমে যায়। প্রথম সন্তান দেরীতে নেওয়ার ইচ্ছা কেবল বিয়ের প্রথম বছরই থাকে। জরিপ অনুযায়ী ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের সন্তানজন্ম দেওয়ার হার ২২ শতাংশ কমেছে।

খালেকুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “নারীদের শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। তবে, সেই হারে বাল্য বিবাহ এবং কৈশোরে সন্তান জন্মদান কমে নি।”

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago