পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্যর্থ সরকার: সিপিডি

সরকার দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেও, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার বিবেচনায় আনলে তা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক হয়তো পূরণ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খবরটি কর্মক্ষম বেকার তরুণদের জন্য হতাশার।

সরকার দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি কর্মসংস্থানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেও, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার বিবেচনায় আনলে তা লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক হয়তো পূরণ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খবরটি কর্মক্ষম বেকার তরুণদের জন্য হতাশার।

২০১৩ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ২০৩০ সালের মধ্যে এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সমীক্ষায় দেখা গেছে বর্তমানে প্রতিবছর ২ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় দেড় কোটি বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার কর্মসংস্থানের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তার অর্ধেক অর্জন করা সম্ভব হবে।

গতকাল (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ‘প্রান্তিক যুবসমাজের কর্মসংস্থানে সরকারি পরিষেবার ভূমিকা’ শীর্ষক এক সংলাপে গবেষণার প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

সেখানে বলা হয়, এখন যেভাবে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে তাতে করে যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

সিপিডির চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেন, “যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”

সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্যকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনারও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মোট দুই কোটি যুবকের প্রায় ১২ দশমিক ২ শতাংশ বেকার। এর মধ্যে ৭৮ লক্ষ যুবকেরই চাকরিতে ঢোকার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা কিংবা প্রশিক্ষণ নেই। শহরের তুলনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বেকার যুবকরা এসব ক্ষেত্রে সুবিধা করে উঠতে পারছেন না।

“শহরের যুবকদের তুলনায় তাদের সমবয়সী দরিদ্র ও প্রান্তিক যুবকেরা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে পিছিয়ে থাকে; সে কারণে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা আরো কঠিন হয়ে পড়ে।” সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তার উপস্থাপনায় জানান।

ফলে, যুবকরা, বিশেষত সমভূমির আদিবাসী কিংবা বস্তি থেকে উঠে আসা যুবকদের জন্য ভালো চাকরি পাওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নতিকল্পে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের ভূমিকা লক্ষণীয় হলেও আবাসন সমস্যার সমাধানে তা যথেষ্ট নয়। রাষ্ট্রের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতার অভাব থাকায় আবাসন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে বস্তিতে থাকা জনগোষ্ঠীর বঞ্চনার শেষ নাই, যোগ করেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রান্তিক যুবকরা ন্যূনতম শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় না। সেখানে ভালো শিক্ষকের অভাব থাকার পাশাপাশি অধিকাংশেরই প্রাইভেট টিউশনের খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই।

মোয়াজ্জেম জানান, সমাজে বৈষম্য থাকায় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অপদস্থ হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য নানা ধরণের প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

তিনি বলেন, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার অভাব প্রান্তিক যুবকদেরকে সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্ত করে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যুবকরা ন্যূনতম শিক্ষালাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা শিক্ষার ব্যয় মেটাতে পারে না। সরকারের উচিত তাদের শিক্ষার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা।

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, দেশীয় চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা, স্বল্প বেতনের চাকরি, ব্যবসায় আয় কম থাকার পরও প্রান্তিক যুবকদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ কম। মোট যুবকের মাত্র এক তৃতীয়াংশ চাকরির জন্য বিদেশে যেতে আগ্রহী। বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবেই এই সংখ্যাটা কম।

এছাড়াও, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকায় তাদের জন্যও চাকরি পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মুজিবুল হক উচ্চ শিক্ষার পরিবর্তে কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি চাকরির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানোর কথা বলেন। মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জোর দেন তিনি।

কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণের অভাবে সেগুলোর মান দিনদিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক।

সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, কারিগরি শিক্ষা পাওয়ার সুযোগ আছে দেশের মাত্র ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর। উন্নত দেশের তুলনায় এই পরিমাণ খুবই কম। 

তিনি আমাদের মানসিকতার সমালোচনা করে বলেন যে কারিগরি শিক্ষাকে সমাজে ভালো চোখে দেখা হয় না।

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “তথ্য, সমন্বয় ও দক্ষ মানবসম্পদ অভাবে প্রান্তিক গোষ্ঠীর যুবকদের কাছে সরকারি সুযোগসুবিধা পৌছায় না।”

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলিকে গ্রামের ও প্রান্তিক যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচি নিতে হবে। তিনি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিদ্যমান বাজেট জিডিপির ২ শতাংশ থেকে বাড়ানোর আহ্বান জানান।

সংলাপে আরো অংশগ্রহণ করেন সিপিডির ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান, ইউসেপের নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহমেদ, করাইল বস্তির বাসিন্দা তানজিয়া আখতার তানিয়া।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now